জুলিয়া টিচারের উদ্দেশে এগোবার সময় হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রবিন।
এহ হে, দেখো না আমাদের সাথে কে জুটেছে, বলল ফিসফিসিয়ে। কালকের সেই অভদ্র ছেলেটা।
বিল নামের কিশোরটি গতরাতে বিদায় না নিয়েই চলে গিয়েছিল ওদের কাছ থেকে।
জুলিয়া টিচারের পাশেই দাঁড়িয়ে বিল।
উহ, ভীষণ শীত, অভিযোগ করল ছেলেটি।
ওকে পাত্তা না দিলেই হলো, রবিনকে বলল কিশোর।
মারি চলে এলেই আমাদের লেসন শুরু হবে, বানি গ্রুপের উদ্দেশে বললেন জুলিয়া।
কিশোর আশপাশে তাকিয়ে মারিকে খুঁজল। টনি গ্রেগের সঙ্গে ওকে কথা বলতে দেখল। কোমরে দুহাত রেখে মাথা নাড়ছে। অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এল এদিকে।
কিছু হয়েছে নাকি? কিশোর কৌতূহলী হলো।
আমি চেয়েছিলাম আমার ভাইয়ের ক্লাসে থাকতে, জানাল মারি। কাঁধের উপর দিয়ে জ্যাকর্যাবিটদের দিকে চাইল।
কিন্তু তুমি না আমাদের বলেছ ভাল স্কি করতে জানো না, বলল রবিন।
উডি তো বলে তেমন কঠিন কিছু না, বলল মারি। তোমরা না পারলেও আমি ঠিকই পারব।
মারির কথা-বার্তা আজকে কেমন অন্যরকম লাগল ছেলেদের কাছে।
অ্যাই, তোমরা শোনো, জুলিয়া তাঁর বানি ক্লাসের উদ্দেশে বললেন। ওদের বুট শক্ত করে বেঁধে দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কীভাবে স্কি পরতে হয়।
আমরা এখন হাঁটা প্র্যাকটিস করব, জানালেন।
আমি জানি কীভাবে হাঁটতে হয়, কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠল মারি। স্কি পায়ে কয়েক পা এগোল, দুপা সোজা করল।
ধুর, বিরক্তিকর, ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করল বিল।
ছুটিটা মাটি করে ছাড়বে নাকি মারি আর বিল মিলে? মনে মনে বলল রবিন।
মুচকি হাসলেন জুলিয়া।
চিন্তা কোরো না, বিল, বেশিক্ষণ বিরক্তি লাগবে না।
বানি ক্লাস হাঁটা দিয়ে শুরু করল। তারপর ঘোরা প্র্যাকটিস চলল।
বিল ঘুরতে গিয়ে ফ্যাসাদে পড়ে গেল। দুটো স্কি আড়াআড়ি হয়ে আটকা পড়ল ও।
ওর চিৎকার শুনে জুলিয়া গিয়ে মুক্ত করলেন ওকে।
এবার এই ছোট পাহাড়টার পাশ দিয়ে হেঁটে উপরে উঠব আমরা, সবার ঘোরা শেখা হয়ে গেলে জানালেন জুলিয়া।
তেমন কঠিন না, হাসি মুখে মন্তব্য করল রবিন, উপরে উঠবার সময়।
কিন্তু থেমে দাঁড়িয়ে নীচে যখন তাকাল, আবিষ্কার করল পাহাড়টা যথেষ্ট উঁচু আর খাড়া। পাহাড়তলী থেকে এতটা বোঝা যায়নি।
এবার? রবিন ভয়ে-ভয়ে জানতে চাইল।
এবার সড়সড় করে নীচে নামা, বললেন জুলিয়া।
পা ভেঙে যাবে তো, প্রতিবাদ করল বিল।
হাঁটু ভাঁজ করে বুটের আগায় শরীরের ভার চাপিয়ে দাও, ব্যাখ্যা করলেন জুলিয়া। এরকম।
স্বচ্ছন্দ গতিতে নীচে নেমে গেলেন তিনি। ওখান থেকে গলা ছাড়লেন। কিশোর, নেমে এসো।
কোন অসুবিধে হলো না কিশোরের। এরপর একে একে অন্যরাও নেমে এল। এবার থেমে দাঁড়ানো শিখবার পালা।
মারি একটু পরে ঝুলন্ত কেবল চেয়ারের দিকে আঙুল তাক করল। আমাদেরকে চূড়ায় নেবেন কখন? এগুলো তো বাচ্চাদের শেখায়।
কিশোর মুখ তুলে চাইল।
স্কি লিফট চেয়ারে বসে মুসা আর উডি। ঢালের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওদেরকে।
ভিক্টরের ক্লাস ট্রেইলের খানিকদূর পর্যন্ত স্কি করে তারপর এই পাহাড়ের মাথায় মিলবে আমাদের সাথে, বললেন জুলিয়া।
বেশ খানিকক্ষণ বাদে, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তিনি আবার ছোট পাহাড়টার চূড়ায় তুলে আনলেন।
ভিক্টর ও তার জ্যাকব্যাবিটরা অপেক্ষা করছিল ওদের জন্য।
অ্যাই, মুসা, বলল কিশোর। কেমন লাগছে?
দারুণ, সোল্লাসে বলল মুসা।
কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? রবিনের প্রশ্ন।
সমস্যা বলতে ওই যমজ ভাই দুটো। ওরা আমার ক্লাসে পড়েছে।
কিম আর জিমকে জ্যাকর্যাবিটদের সঙ্গে দেখা গেল। কিশোরকে তাকাতে দেখে একটা ভাই চোখ টিপল।
ভাগ্যিস ওরা আমাদের দলে নেই, নিচু গলায় বলল রবিন। বিল আর মারির জ্বালাতেই তো জুলিয়া টিচার অস্থির।
সবাই লাইন আপ করো, দুই দলের উদ্দেশেই হাঁক ছাড়লেন ভিক্টর। আমরা একসাথে ঢাল বেয়ে নামব।
কিশোর ওর দলের মধ্যে সবার আগে।
গুড লাক, বলল রবিন। সে কিশোরের পিছনে।
কিশোর পোলে ধাক্কা দিয়ে তরতর করে নেমে চলল ঢাল বেয়ে। নীচে পৌঁছে নিখুঁতভাবে থেমে দাঁড়াতে পারল। হাসি ফুটল ওর মুখে।
হঠাৎ এ সময় কার যেন চিৎকার কানে এল ওর।
যথাসম্ভব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। সতর্ক ছিল যাতে স্কি ক্রস হয়ে আটকা না পড়ে।
মুসা রবিনের পিছু পিছু পাহাড় বেয়ে হড়হড় করে নেমে আসছে।
সাবধান, রবিন! চেঁচিয়ে উঠেছে ও। খাইছে! আমি থামতে পারছি না!
চার
কাঁধের উপর দিয়ে চাইল রবিন। ফলে স্কি দুটো আড়াআড়ি হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
মুসা ঘুরবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। ওর একটা স্কি ঢুকে গেল রবিনের স্কির নীচে। মুসা হোঁচট খেয়ে সোজা বন্ধুর গায়ের উপরে পড়ল!
কিশোর ঢাল বেয়ে যতটা সম্ভব উঠে আসতে লাগল বন্ধুদের সাহায্যে।
বানি ও জ্যাকর্যাবিটরা তাদের টিচাররা কী করেন দেখবার জন্য অপেক্ষা করছিল। ভিক্টর ও জুলিয়াকে দুই গোয়েন্দার উদ্দেশে নামতে দেখে উডি, মারি, বিল আর জনাকয় ছাত্র তাদের পিছু নিল।
ভিক্টর ও জুলিয়া তুষারের ঝড় তুলে রবিন ও মুসার কাছে এসে থামলেন।
ছেলেদেরকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন ভিক্টর।
কিশোর ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে ওখানে।
তোমাদের লাগেনি তো? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল।
ওদের হয়ে জবাব দিলেন ভিক্টর।
আরে না, কিছু হয়নি। একটু ঘাবড়ে গেছে শুধু।