অ্যাপার্টমেন্টের ভিতর বেজায় ঠাণ্ডা। কিশোর ঝটপট ওর ফ্লানেলের গরম স্লীপিং সুটটা পরে নিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ফেলল।
দুসারি বাঙ্ক বেড রয়েছে এই বেডরূমটিতে। তিন গোয়েন্দা এটাতে উঠেছে। একটা বেডের নীচের বাঙ্কে লাফ দিয়ে উঠে পড়ল কিশোর। গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল গরম কম্বলের তলায়।
রবিন বাথরূম থেকে বেরিয়ে এসে আরেকটা বাঙ্কে আশ্রয় নিল।
উহ, ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, তাড়াতাড়ি ব্রাশ করে এসো, মুসা। ঘুমানোর আগে স্কিইং সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিতে চাই।
এখুনি আসছি, বলে এক দৌড়ে বাথরূমে চলে গেল মুসা।
একেবারে হাড় কাঁপানো শীত, বলল কিশোর।
যা বলেছ, বলল রবিন।
এসময় হঠাৎ মুখ ভর্তি টুথপেস্টের ফেনা নিয়ে দৌড়ে এল মুসা। টুথব্রাশ আঁকাচ্ছে।
কী হয়েছে, মুসা? কিশোর জিজ্ঞেস করল। আমার লকেটটা খোয়া গেছে!
তিন
কিশোর ঠাণ্ডার কথা ভুলে, এক লাফে নেমে পড়ল বিছানা থেকে।
দাঁত ব্রাশ করার সময় পড়ে যায়নি তো?
খুঁজে দেখেছি, জানাল মুসা। কোথাও নেই।
আরেকবার খুঁজি চলো, বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
বাথরূমে গিয়ে খুঁজে দেখল। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না লকেটটা।
শেষ কখন পরে ছিলে মনে আছে?
শ্রাগ করল মুসা, তারপর সিঙ্কের নীচে আরেকবার পরীক্ষা করল।
উডি লজের ভিতর বেঁধে দিয়েছিল। তারপর জানি না।
দুপদাপ পা ফেলে বাঙ্কের কাছে চলে এল ও। মই বেয়ে কিশোরের উপরের বেড়ে উঠে গেল।
ছুটির দিনগুলো আমাকে এখানেই হয়তো পড়ে থাকতে হবে, বিছানায়। শুয়ে বলল। লাকি লকেটটা ছাড়া স্কি করতে পারব না আমি।
কেন পারবে না, বলল রবিন। ওসব কুসংস্কার মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও তো, মুসা।
কুসংস্কার নয়, জোর গলায় বলল মুসা। এক হুজুর দোয়া পড়ে ওতে ফুঁ দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন ওটা গলায় থাকলে কোন বিপদ-আপদ আমাকে
স্পর্শ করতে পারবে না। বরঞ্চ নানা কাজে সাফল্য আসবে।
কিশোর তোমার লকেট খুঁজে দেবে, চিন্তা কোরো না, আশ্বাস দিল রবিন।
ওটা গেছে, আর পাওয়া যাবে না, মুসা নিরাশ কণ্ঠে বলল।
রবিন কিশোরের দিকে এক ঝলক চাইল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। ও নিজের বাঙ্কে উঠে পড়লে বাতি নিভিয়ে দিল কিশোর।
বিছানায় শুয়ে চোখ বুজল কিশোর। ঘুম আসতে দেরি আছে। মুসার লকেটটা গেল কোথায়?
তোরা এখনও ঘুমোচ্ছিস? রাশেদ চাচা ওদের ঘরে উঁকি দিয়ে বলে উঠলেন। উঠে পড়।
ছেলেরা পোশাক পরে কিচেনে চলে এল।
দারুণ গন্ধটা কীসের? রবিন প্রশ্ন করল।
নাক টানল কিশোর।
এখুনি রহস্যের সমাধান করে দিচ্ছি, বলল। প্যানকেক!
কেস খতম, বললেন চাচা, এটা আমার স্পেশাল আইটেম। নে, শুরু কর।
কিশোর লক্ষ করল, আশ্চর্য হলেও সত্যি মুসার খাওয়ায় মন নেই। লকেট হারিয়ে ভেঙে পড়েছে বেচারা।
নাস্তা সেরে স্কি ভাড়া নেওয়ার জন্য লজের উদ্দেশে হাঁটা দিল ওরা। কিশোর হাঁটছে ধীর গতিতে, মাটিতে চোখ রেখে। কাল রাতে বাসায় ফিরবার সময় হয়তো কোথাও পড়ে গিয়ে থাকতে পারে লকেটটা, ভাবছে ও।
লকেটটা খুঁজে পেল না কিশোর। ফলে অন্য আরেকটা চিন্তা উদয় হলো ওর মাথায়। রাশেদ চাচাকে এগোতে বলে বন্ধুদের নিয়ে গেম রূমের দিকে পা বাড়াল গোয়েন্দাপ্রধান।
আমি স্কি শপে আছি, বলে গেলেন চাচা। ওখান থেকে তোদেরকে বুট আর স্কি নিতে হবে।
গেম রূমে পৌঁছে বন্ধুদেরকে আইডিয়াটা খুলে বলল কিশোর।
এখানে পাওয়া যাবে মনে করো? মুসা জিজ্ঞেস করল।
জানবার একটাই উপায়, বলল কিশোর।
তিন গোয়েন্দা গোটা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল। লকেটটা নেই।
সরি, মুসা, বলল কিশোর। তখন যে বললে লকেটটা ছাড়া স্কি করবে না, ওটা নিশ্চয়ই কথার কথা?
ত্যাগ করল মুসা।
হ্যাঁ, তাই তো, বলে হাসবার চেষ্টা করল ও।
স্কি শপে তিন গোয়েন্দা ও রাশেদ চাচা স্কি বুট পরে, পোল আর স্কি তুলে নিল।
তিন গোয়েন্দার প্রত্যেকের স্কিতে ওদের নাম লেখা টেপ সেঁটে দিল কেরানী।
কোটা কার কি এখন আর গুলিয়ে ফেলার ভয় থাকল না, বলল লোকটা।
ছেলেরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে, চাচার পিছু পিছু শপ ত্যাগ করল। ভারী স্কি বুট পায়ে থপথপিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এত কিছু হাতে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ল। হাত ফস্কে যতবারই পোল পড়ে যাচ্ছে, হেসে ফেলছে রবিন।
ওই যে, অন্যান্য স্টুডেন্টরা, বাইরে বেরিয়ে এসে বলল কিশোর। ইস্ট্রাক্টরদের ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোটদের বড়সড় এক দল।
আমি রেগুলার ট্রেইলে স্কি করব, বললেন চাচা। লাঞ্চের সময় লজে দেখা হবে। হ্যাভ ফান! চলে গেলেন তিনি।
ছেলেরা তড়িঘড়ি এগোল দলটার সঙ্গে যোগ দিতে। টনি গ্রেগ লিস্টে ওদের নাম দেখে নিলেন। কিশোর আর রবিন যাচ্ছে জুলিয়ার বানি ক্লাসে, বললেন। দীর্ঘাঙ্গী এক সোনালী মাথা মহিলার উদ্দেশে মাথা ঝাঁকালেন। বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ইতোমধ্যে জড় হয়েছে তার পাশে।
আর আমি? পরম আগ্রহে প্রশ্ন করল মুসা।
কিশোর স্বস্তির শ্বাস ফেলল। যাক, মুসা ওর তথাকথিত পয়মন্ত লকেটটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে না।
তুমি পড়েছ জ্যাকর্যাবিট ক্লাসে। ভিক্টর তোমাদের টিচার, বললেন টনি গ্রেগ। কোকড়া বাদামী চুলের এক লোককে দেখিয়ে দিলেন। চোখে বড় ফ্রেমের সানগ্লাস তার।
মুসা বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, পোল আর স্কি হাতে দ্রুত পায়ে সেদিকে এগোল।