রবিন, লাগেনি তো? জিজ্ঞেস করল ও।
না। কিন্তু আমার নতুন স্কি হ্যাটটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে যমজ বিচ্ছু দুটো, চেঁচিয়ে উঠল নথি।
দুই
হ্যাট, হ্যাট, কে নিল হ্যাট? গেয়ে উঠল যমজরা।
তিন গোয়েন্দার পিছনে দাঁড়িয়ে ওরা। যার হাতে হ্যাটটা ছিল সে শূন্যে ছুঁড়ে দিল।
অ্যাই, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! বলে হ্যাটটা ধরবার জন্য হাত বাড়াল রবিন।
অপর যমজটা ওর আগেই লুফে নিল হ্যাটটা। এবার সে ওটা ছুঁড়ে দিলে দ্বিতীয়জন হাত বাড়িয়ে দিল।
মুসা এক লাফে এগিয়ে এসে হ্যাটটা থাবা মেরে ছিনিয়ে নিল। ও ঘুরে দাঁড়িয়ে কটমট করে চাইতে ছেলে দুটো ভয়ে দিল দৌড়।
মুসাকে ধন্যবাদ দিয়ে হ্যাটটা আবার জ্যাকেটের পকেটে ঢোকাল রবিন।
কিম-জিমের দুষ্টুমি আর গেল না, এক কিশোর কণ্ঠ বলে উঠল।
কিশোর ঘুরে দাঁড়াল। গেম রূমের দরজার কাছে ওদের সমবয়সী এক কিশোর দাঁড়িয়ে। কালো চুল ছোট করে ছাঁটা ওর, চোখজোড়া সবুজ।
ওদেরকে চেনো নাকি? কিশোর প্রশ্ন করল।
গত বছর ওরা আমার সাথে বিগিনার্স ক্লাসে ছিল, তিন গোয়েন্দার দিকে এগিয়ে এল ছেলেটি। সব সময় সমস্যা পাকায় দুই ভাই।
জোড়া সমস্যা, আওড়াল মুসা।
ছেলেটি মুসার দিকে চাইল।
বাহ, তোমার লকেটটা তো চমৎকার!
মুসা রুপোলী স্কি দুটো স্পর্শ করল।
ধন্যবাদ। এটা আমার নতুন লাকি লকেট। এটা ছাড়া স্কি করব না আমি।
তুমি বুঝি ভাল স্কি জানো?
শ্রাগ করল মুসা।
তেমন কিছু না। অল্প কয়েকবার স্কি করেছি আরকি। তবে স্কি ভালবাসি আমি। অপেক্ষা করে আছি কখন ক্লাস শুরু হবে।
আমিও স্কি স্কুলে এসেছি, জানাল ছেলেটি। আমার নাম উডি বোর্ডার। এসময় আরেক কিশোর এসে উডির পাশে দাঁড়াল। এ আমার ছোট ভাই মারি বোর্ডার, বলল উডি।
হাই, হাসিমুখে বলল মারি।
পাল্টা হাসল কিশোর। বন্ধুদের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল।
চলো, স্কি ভিডিও দেখি, বলল উড়ি। ওদেরকে পিছনে নিয়ে টিভির সামনে রাখা প্রমাণ সাইযের কাউচটার কাছে এসে দাঁড়াল।
ছেলেরা বসে পড়লে, স্ক্রীনের স্কিয়ারের দিকে চোখ রাখল কিশোর। কমলা রঙের কয়েকটা পতাকার আশপাশ দিয়ে স্কি করছে সে।
আমি ওর মত পারব না, ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
হেসে উঠল মারি।
আমিও না। সবে শুরু করেছি। উডির সাথে গতবছর আসতে পারিনি, ফ্লু হয়েছিল।
রবিন আর আমিও বিগিনার, জানাল কিশোর। আমাদেরকে হয়তো একই ক্লাসে দেবে।
তুমি কোন লেভেলে, মুসা? উডি জিজ্ঞেস করল।
ইন্টারমিডিয়েট, বলল মুসা। চোখ ওর পর্দায় সাঁটা। পাথর আর গাছ পালা এড়িয়ে, একেবেকে স্বচ্ছন্দ গতিতে নেমে আসছে স্কিয়ার।
আমিও, জানাল উডি। প্রত্যেক বছর এখানে একটা কনটেস্ট হয়। প্রতি ক্লাস থেকে একজন করে সেরা স্কিয়ার বেছে নেয়া হয়। এ বছর আমার গ্রুপ থেকে আমি জিতব।
এই কনটেস্টে জিতলেই কী আর না জিতলেই কী! চড়া গলায় বলে উঠল একটি কণ্ঠ।
ঘুরে দাঁড়াল ওরা। দেখতে পেল এক কিশোর এগিয়ে আসছে। কদমছাট চুল ছেলেটির মাথায়।
স্কিইঙে কোন মজা নেই, বলল ও।
কে বলেছে? চ্যালেঞ্জ জানাল মুসা।
ছেলেটি ভ্রূ কুঁচকে তাকাল।
আমি বলছি, দৃঢ় কণ্ঠে বলল।
মজা নেই তো তুমি এখানে কী করছ? রবিনের প্রশ্ন।
বাবা-মার চাপে পড়ে আসতে হয়েছে।
বিল, দরজার কাছ থেকে হাঁক ছাড়লেন এক মহিলা।
আসি, মা, চেঁচিয়ে উঠল ছেলেটি। তারপর বিদায় না নিয়েই ঘুরে দাঁড়িয়ে গটগট করে হাঁটা দিল।
আজব সব চরিত্র এখানে এসেছে দেখতে পাচ্ছি, বলল রবিন।
স্কি করতে ভয় পায় হয়তো, বলে লকেটে আঙুল ছোঁয়াল মুসা। আমার মত ওরও একটা গুড লাক চার্ম দরকার।
ওটা কি সত্যি সত্যি, পয়মন্ত? জানতে চাইল উডি। আমি একবার পরতে পারি? এ মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল মুসা। কিশোর জানে, লকেটটা খুলবার ইচ্ছে নেই ওর। কিন্তু অবশেষে ভেলভেটের রিবনটা খুলে উডির হাতে তুলে দিল মুসা।
ধন্যবাদ। উডি নিজের গলায় বাঁধল রিবনটা। এটা মিনিট খানেক পরে থাকলে আমারও ভাগ্য ফিরতে পারে।
রাশেদ চাচাকে এসময় ঘরে ঢুকতে দেখল কিশোর।
চল, যাওয়া যাক, ডাকলেন তিনি ওদেরকে।
তিন গোয়েন্দা জ্যাকেট পরে নিল। তারপর উডি আর মারির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাশেদ চাচাকে অনুসরণ করল।
আরে! লকেটটার কথা তো বেমালুম ভুলেই গেছি, বলল মুসা। ফিরে এল ও।
উডি লকেটটা গলা থেকে খুলল।
পরিয়ে দেব? প্রশ্ন করল।
মুসা সায় জানালে লকেটটা ওকে পরিয়ে দিল উডি। পয়মন্ত স্কি দুটো স্পর্শ করতে হাসি ফুটে উঠল মুসার মুখে।
রাশেদ চাচার পিছু পিছু লজ থেকে বাইরের তারাজ্বলা, ঠাণ্ডা রাতে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। উডি আর মারিও লজ ত্যাগ করেছে।
বাই! মারি দরজার কাছ থেকে ওদের উদ্দেশে বলল।
কিশোর ঘরে তাকিয়ে নতন বন্ধদের উদ্দেশে হাত নাড়ল। মারি পাল্টা হাত নাড়লেও উডির এদিকে খেয়াল নেই। ওর মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। চকচকে তুষার।
কালকেও এরকম ঠাণ্ডা পড়বে নাকি! বলল রবিন। গোলাপী হ্যাটটা চেপে বসাল।
যত ঠাণ্ডাই পড়ক, বলল কিশোর, বুট ঝাড়া দিল। আমরা ঠিকই এনজয় করব!
কমিনিটের মধ্যেই ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে গেল ওরা। লিভিংরুমের জানালা দিয়ে রঙবেরঙের গন্ডোলা কার দেখা যাচ্ছে। স্কি করতে আসা অতিথিদেরকে প্রতিদিনই পাহাড় চূড়ার রেস্তোরাঁয় পৌঁছে দেয় এসব গন্ডোলা।