এবার মারি তুষারে স্কি পোল দুটো গেঁথে জোরে চাপ দিল–এতটাই জোরে যে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল স্কির সামনে! উঠে দাঁড়িয়ে ঠেলা দিল আবার। এবার আর কোন সমস্যা হলো না।
ছেলেটার সাহস আছে, তারিফ করল কিশোর। পড়ে গেছে বলে ঘাবড়ায়নি।
ওর পেট ভর্তি হিংসে, হিসিয়ে উঠল রবিন। কী কাজটা করল আমাদের সাথে! আচ্ছা, কিশোর, জুলিয়া টিচারের সাথে তোমার কী কথা হলো?
মুচকি হাসল কিশোর।
সময় মত সবই জানতে পারবে।
এরপর কিশোর। বুক ভরে শ্বাস টেনে রওনা হলো ও দমকা বাতাস পাশ কাটাচ্ছে। এঁকেবেঁকে তুষারাবৃত ট্রেইল ধরে নেমে আসছে সে।
দারুণ দেখিয়েছ! নীচে পৌঁছবার পর সপ্রশংস কণ্ঠে বলল মুসা।
থ্যাংকস, বলল কিশোর। তুমিও খুব ভাল করেছ।
লোকজন হাততালি দিচ্ছে, সেদিকে চাইল কিশোর। রাশেদ চাচা হাসি মুখে হাত নাড়ছেন ওর উদ্দেশে।
রবিনও নেমে এল খানিক বাদে। গতি ধীর, তবে একবারও পড়েনি ও।
চিৎকার করে ওকে উৎসাহ জোগাল কিশোর আর মুসা।
.
আমি জানতাম কাজটা মারির! লাঞ্চ টেবিলে বলল রবিন। আরেকটু হলেই কনটেস্ট মিস করতাম আমরা। এতেই সব প্রমাণ হয়!
কিশোর ওর সন্দেহ তালিকা থেকে বিলের নাম মুছে দিল। ছেলেটি স্কিইং পছন্দ করতে শুরু করেছে, কাজেই সে এখন আর সন্দেহভাজন নয়।
বাকি রইল শুধু উডি আর মারি। মারি যেহেতু ওদেরকে মিথ্যে কথা। বলেছে, তার মনে সে-ই অপরাধী।
নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। কিছু একটা মাথায় আসি-আসি করেও আসছে না। বড় অস্থিরতা বোধ হচ্ছে ওর।
বিকেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যখন যাচ্ছে তিন গোয়েন্দা, তখনও কিশোরের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রহস্যটার চিন্তা।
ও কেন করল এরকম? গন্ডোলা লিফটের দিকে পা বাড়িয়ে বিড়বিড় করে আওড়াল গোয়েন্দাপ্রধান।
কার কথা বলছ? মুসা জিজ্ঞেস করল।
আমাদের ধারণা ছিল এসব কিছুই মারি করেছে, কারণ সে জ্যাকব্যাবিট ক্লাসে যেতে চেয়েছে, জানাল কিশোর। তারপর তো ঠিক করল যাবে না। তা হলে তোমার সাথে এসব করে ওর কী লাভ? কোন অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। অবশ্য…
মুসা ওর লকেটের ভেলভেট রিবনটা নাড়াচাড়া করছে। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ঝিকিয়ে উঠল রুপোলী স্কি দুটো। ব্যাপারটা দৃষ্টি কেড়ে নিল কিশোরের।
ঠিক এ সময় ওর মনে পড়ে গেল উডি কীভাবে স্লিপনট বাঁধতে হয়। জানে। এবং মুসাকে লকেট পরাবার সময় মারি ঠাট্টা করে ভাইকে বলেছিল, স্লিপনট যেন না বাঁধে।
মনে পড়েছে! বলে উঠল কিশোর। গন্ডোলা লাইনটা এক ঝলক দেখে নিল। তারপর বন্ধুদের হাত ধরে হন্তদন্ত হয়ে পা চালাল।
ভিড় ঠেলে এসে দাঁড়াল উডি আর মারি ওদের বাবা-মার সঙ্গে যেখানে দাঁড়িয়ে।
পরের গন্ডোলা এলে উড়িদের পিছনে বন্ধুদের ঠেলে তুলে দিল ও। নিজেও উঠে পড়ল। ভরে গেছে গন্ডোলা।
আপনারা পরেরটায় আসুন, উডির বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলল গন্ডোলা অপারেটর।
পাহাড়ের গা ঘেঁষে ক্রমেই উঠে চলেছে গন্ডোলা। কিশোর উডি আর মারির মুখোমুখি হলো।
উডি, আমি জানি মুসার পেছনে যে লেগেছিল সে আর কেউ নয়, তুমি।
উডি শ্রাগ করে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইল।
তুমি কী বলছ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মারির দিকে দৃষ্টি স্থির করল গোয়েন্দাপ্রধান।
উডি তোমাকে পাঠিয়েছিল, তাই না, আমাদেরকে পুকুরের পাড়ে যেতে বলার জন্য?
উডির দিকে এক নজর চাইল মারি।
না, বলল। আমি ভেবেছিলাম ওখানেই প্রতিযোগিতাটা হবে।
কিশোর অত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। মারির কাছ ঘেঁষে বসল ও।
উডিই তোমাকে বলেছে মিথ্যে খবরটা দিতে। আমাদের কাছে গোপন করে লাভ নেই, মারি। আমরা সবই জেনে গেছি। মুসার লাকি লকেটটা উডিই চুরি করেছে। আর পাহাড়ের ঢালে মুসাকে ও-ই ধাক্কা দিয়েছে।
কোন প্রমাণ আছে? বিস্ফোরিত হলো উড়ি। তোমার কেন মনে হলো। ওর পচা লকেটটা আমি নিয়েছি?
স্লিপনটার জন্য, ঠাণ্ডা গলায় বলল গোয়েন্দাপ্রধান। মুসার লকেটে স্লিপনট ব্যবহার করোনি তুমি?
মুহূর্তের জন্য মনে হলো উডি বুঝি অস্বীকার করবে। কিন্তু ভাইয়ের দিকে এক পলক চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
হ্যাঁ, শান্ত কণ্ঠে বলল। খুব ঢিলে করে স্লিপনট বেঁধেছিলাম যাতে লকেটটা খুলে পড়ে যায়। মুসা লজের বাইরে যেতেই ওটা তুষারের উপর পড়ে যায়। ও টেরও পায়নি।
তারপর যমজরা ওটা খুঁজে পায়, বলল কিশোর।
মাথা ঝাঁকাল উডি।
অন্য অকাজগুলোও আমার। মারির কোন দোষ নেই।
কিন্তু কেন করতে গেলে এসব? মুসা কৈফিয়ত দাবি করল।
জবাবটা আমি দিচ্ছি, বলল কিশোর। তোমার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করবার জন্যে। গত বছরের প্রতিযোগিতায় স্কি করতে গিয়ে উডি পড়ে যায়, এমনকী ফিনিশও করতে পারেনি। সবাই ওকে নিয়ে হাসাহাসি করে। এবার তাই ও মরিয়া হয়ে ওঠে জেতার জন্য। ওর ধারণা হয় লকেটটা পরা থাকলে মুসার সাথে ও পারবে না। ঠিক বলেছি?
মাথা নিচু করে বসে রইল উড়ি।
আমি চাইনি মুসা লাকি লকেটটার জন্যে বাড়তি কোন সুবিধা পাক, স্বীকার করল ও। কেউ খেলে জিতলে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, কিশোর, তুমি গত বছরের এতসব কথা জানলে কীভাবে?
জুলিয়া টিচার, মুচকি হেসে বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
গন্ডোলা এ সময় চূড়ায় পৌঁছে ঝাঁকুনি খেয়ে থেমে গেল। উডি লাফিয়ে নেমে ঝেড়ে দিল দৌড়।
মারিও নেমে পড়ল।
আমি দুঃখিত, বলে সে-ও ভাইয়ের পিছন পিছন ছুটল।