জানি না, মাথা নাড়ল নিনা। এখনও কিছু ঠিক করিনি। আমার দিকে ঘুরল ও। তুমি কী সাজবে, রবিন?
মায়ানেকড়ে।
কাজ চমকে উঠল ছেলে দুটো। পরস্পরের দিকে তাকাল।
হাসি মুছে গেল ওদের মুখ থেকে। নির্বাক হয়ে গেল।
কী হলো? জিজ্ঞেস করলাম।
জবাব নেই।
এই, কী হলো তোমাদের? আবার জিজ্ঞেস করলাম।
মাটির দিকে চোখ নামাল রজার। উলফ লেকে মায়ানেকড়ের অভাব নেই, বিড়বিড় করল ও।
মানে! ভুরু কোঁচকালাম। কী বলছ? এই, মায়ানেকড়ের অভাব। নেই মানে?
কিন্তু জবাব দিল না ওরা।
আচমকা ঘুরে দ্রুত হেঁটে অদৃশ্য হয়ে গেল বনের ভিতর।
ছয়
ভয় দিক হলাম বন থেকে ফিরে দেখি, ডিনার রেডি করে বসে আছেন আঙ্কেল-আন্টি।
ডিনারে আসতে দেরি করে ফেললাম, সরি, বললাম। আসলে সময়ের খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। বনের ভিতর থেকে আসতে ইচ্ছে করছিল না। এত সুন্দর।
নিনাকে ডিনার খেয়ে যেতে বললেন জুলি আন্টি। রান্নাঘরের ছোট্ট টেবিলটা ঘিরে গাদাগাদি করে বসলাম আমরা। বড় বাটি থেকে মুরগীর গরম সুপ চামচ দিয়ে মুখে তুলতে থাকলাম।
দারুণ সুপ বানান আপনি, আন্টি, নিনা বলল।
জুলি আন্টি হাসলেন। ঠোঁটের কোনা বেয়ে এক ফোঁটা সুপ গড়িয়ে পড়ছে। মোছর জন্য ন্যাপকিন টেনে নিলেন তিনি।থ্যাংক ইউ, নিনা। হাতের কাছে খাওয়ার উপযুক্ত যত রকম জিনিস পাই সবই। ফেলে দিই তো ওই সুপের মধ্যে, তাতেই বোধহয় স্বাদ বেড়ে যায়।
জানালার দিকে চোখ চলে গেল সিডার আঙ্কেলের। চাঁদের দিকে তাকালেন। তারপর তাকালেন উলফদের বাড়িটার দিকে।
একটা অদ্ভুত গাছের ছবি তুলেছি আমি, বললাম। বুড়ো মানুষের মত কজো হয়ে ঝকে রয়েছে গাছটা।
জবাব দিলেন না সিডার আঙ্কেল। তাকিয়ে আছেন জানালার বাইরে।
জন, রবিন কিছু বলছে তোমাকে, রুক্ষ হয়ে উঠল জুলি আন্টির কণ্ঠ।
অ্যাঁ? হ্যাঁ হ্যাঁ! টেবিলের দিকে ফিরে তাকালেন সিডার আঙ্কেল। জোরে জোরে মাথা ঝাঁকি দিয়ে যেন মগজের ভিতর জমাট বাঁধা ভাবনাগুলো তাড়িয়ে দিতে চাইলেন। সরি। কী বলছিলে? তাতে
বনের ভিতরের বুড়ো গাছটার কথা আবার বললাম তাকে।
ওই ছবিগুলো ডেভেলপ করতে তোমাকে সাহায্য করব আমি, আঙ্কেল বললেন। কালকেই করে দেব। চিলেকোঠার ছোট্ট বাথরুমটায় ডার্করুম বানিয়েছি আমি। এখানে সবই ছোট ছোট। আরও বড় একটা বাড়ি দরকার আমাদের, ইদানীং যে সব কাজ করছি তার জন্যে।
আপনি এখন কীসের ছবি তুলছেন? জিজ্ঞেস করলাম।
নিশাচরদের, জবাব দিলেন তিনি। আবার জানালার বাইরে তাকালেন। তাঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও তাকালাম। উলফদের পিছনের জানালাটার দিকে তাঁর নজর। অন্ধকার হয়ে আছে জানালাটা।
নিশাচর জানোয়ারের ছবি তুলছি আমরা, জুলি আন্টি জানালেন। এমন সব জানোয়ার, যেগুলো শুধু রাতেই বেরোয়।
পেঁচা? নিনার প্রশ্ন।
অ্যাঁ! হ্যাঁ! মাথা ঝাঁকালেন জুলি আন্টি। বনের ভিতর দারুণ দারুণ সব পেঁচা দেখেছি আমরা, তাই না, জন? ভাবভঙ্গিতে মনে হলো, কিছু যেন লুকোতে চাইছেন তিনি।
সিডার আঙ্কেলের অন্যমনস্কতা, বার বার বাইরে তাকানো, অকারণেই জুলি আন্টির কণ্ঠস্বর রুক্ষ হয়ে ওঠা, তারপর এখনকার এই লুকোতে চাওয়া ঠিক স্বাভাবিক মনে হলো না আমার কাছে। কোথায় যেন কী একটা রহস্য রয়েছে।
জানালার দিক থেকে ফিরে তাকালেন সিডার আঙ্কেল। ভরা চাঁদের রূপালী জ্যোত্সা যেন ধুয়ে দিচ্ছে জানালার কাঁচ। নিশাচরেরা ক্যামেরার ছবি হতে পছন্দ করে না, বলে এক টুকরো গাজর তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে চিবাতে শুরু করলেন তিনি। ওরা আড়ালে থাকতেই ভালবাসে।
মাঝে মাঝে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমাদের, আন্টি বললেন। কখন উঁকি দেয় তার জন্যে অপেক্ষা করতে হয়।
আমাকে একদিন সঙ্গে নেবেন? অনুরোধের সুরে বললাম। চুপচাপ থাকব আমি, কথা দিচ্ছি। টু শব্দ করব না।
এক টুকরো মুরগীর মাংস খেলেন সিডার আঙ্কেল। যাবে, সে-তো খুব ভাল কথা। পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে গেলেন। তবে হ্যালোউইনের পরে।
ফিরে দেখলাম এখন জানালার বাইরে তাকিয়ে আছেন জুলি আন্টি। চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন, চাঁদটা ভরতে বাকি আছে, কিন্তু এখনই এত উজ্জ্বল।
বাইরে তো মনে হচ্ছে দিনের আলো, সিডার আঙ্কেল বললেন। দ্রুত একটা পরিবর্তন ঘটল চেহারায়।
কীসের?
ভয়ের?
ঠিক বুঝলাম না।
অস্থির মনে হচ্ছে ওঁদেরকে। বার বার জানালার বাইরে কী দেখছেন? উলফদের বাড়িতে কী আছে?
প্রশ্নটা না করে পারলাম না আর, আঙ্কেল, কিছু হয়েছে?
না না, কী হবে? চোখের পাতা সরু করে আমার দিকে তাকালেন আঙ্কেল।
আমার মনে হয়…
হ্যালোউইনের দিন কী পরবে, ভেবেছ কিছু? আমাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন জুলি আন্টি। প্রসঙ্গ বদল করার জন্যই, বুঝতে পারলাম।
ভাবছি, এ বছরও জলদস্যুই সাজব, নিনা জবাব দিল। চকলেট মিল্ক শেষ করেছে ও। গ্লাসের কিনার চাটছে। মাথায় রুমাল বাঁধব। এক চোখে কালো পট্টি বাঁধব।
পুরানো কিছু কাপড় আছে আমার আর কলিনের, জুলি আন্টি, বললেন। সেগুলো পরে দেখতে পারো। আমার দিকে ফিরলেন তিনি। রবিন, তুমি কী পরবে?
মায়ানেকড়ে সাজব, বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। মনে পড়ল, এ কথাটা বলে আরেকটু হলেই মারা পড়েছিলাম। এত চমকে গিয়েছিলেন সিডার আঙ্কেল, গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলেন।