হু! চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলালাম। তবে আমাদেরকে দূরে সরে থাকতে হবে যাতে সূর্য ওঠার আগে কোনমতেই ওঁদের নজরে না পড়ি।
কাজ হবে কিনা, অর্থাৎ আঙ্কেল-আন্টিকে মুক্ত করতে পারব কি না, নিশ্চিত নই। কিন্তু আর কোন উপায়ও দেখছি না। দুজনেই প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি আমরা। দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি।
সকাল পর্যন্ত চামড়া পরতে না পারলে হয়তো সুস্থ হয়ে যাবেন। আঙ্কেল-আন্টি, মায়ানেকড়ে হওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবেন।
চলো, আর দেরি করে লাভ নেই, আমি বললাম।
হ্যাঁ, চলো, নিনা বলল। তাড়াতাড়ি কাপড় বদলে নাও। তুমি এসো, আমি ততক্ষণে উলফদের বাড়িতে গিয়ে একটা চামড়া পরে ফেলি। গ্যারেজের পিছনে আমার সঙ্গে দেখা কোরো। তোমার চামড়াটা আমি নিয়ে আসব।
দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল নিনা। লিভিং রুমে ঢুকল। অঙ্কেল আন্টিকে গুডবাই বলল। আমি কাপড় পরে বাইরে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করব, জানাল।
সামনের দরজা লাগানোর শব্দ শুনলাম। তারমানে বেরিয়ে গেছে নিনা।
*
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাপড় পরে আমিও বেরিয়ে এলাম। আঙ্কেল আন্টির অলক্ষে বেরিয়ে এলাম বাড়িটা থেকে।
কথামত উলফদের গ্যারেজের পিছনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে নিনা। পরনে একটা নেকড়ের চামড়া। আরেকটা চামড়া হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর দিকে তাকিয়ে দম আটকে ফেললাম ক্ষণিকের জন্য। নেকড়ের রোমশ নাকের দুই পাশের ফুটো দিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর চোখ দুটো।
জিজ্ঞেস করলাম, চামড়া পরে কেমন লাগছে?
চুলকাচ্ছে, ঘোঁতঘোঁত করল নিনা। আর ভীষণ গরম। আরেকটা চামড়া আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, পরে ফেললো। জলদি করো। চাঁদটা দেখো, ওপরে উঠে যাচ্ছে। শীঘি এগুলো খুঁজতে আসবেন আঙ্কেল-আন্টি।
চামড়াটা নিলাম ওর কাছ থেকে। নরম লোমে ডেবে গেল আমার হাত। ভাঁজ খুলে উঁচু করে ধরলাম। ফিসফিস করে বললাম, এই পোশাকে আমাদের দেখলে সবাই ভাববে হ্যালোউইনের সাজ সেজেছি। কেউ কিছু সন্দেহ করতে পারবে না।
নেকড়ের মাথায় মাথা ঢুকিয়ে দিলাম। কাপড়ের ওপর আমার গায়ে আলখেল্লার মত ঝুলে রইল চামড়াটা। দুই থাবার ভিতর হাত ঢোকালাম। দুই পায়ের ভিতর পা। মুখের কাছে চমৎকার ফিট করে গেল নেকড়ের লম্বা নাকওয়ালা মুখটা।
ইস, ঠিকই বলেছ তুমি, ভীষণ চুলকায়! গুঙিয়ে উঠলাম। এত গরম। এই জিনিস পরে হাঁটতে পারব বলে তো মনে হচ্ছে না।
হাত-পা টানটান করো, ঢিল হয়ে আসবে, ফিসফিস করে বলল নিনা। চলো। এখান থেকে পালাই।
পিছনের উঠান ধরে আগে আগে এগিয়ে চলল ও। ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে বেরিয়ে এসে রাস্তায় উঠলাম আমরা।
পাশের ব্লকে ছেলেমেয়েদের হট্টগোল কানে এল। বনের ভিতরে ভিতরে বাড়িঘর এখানে। যার যার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে ওরা। এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরছে আর উপহার জোগাড় করছে।
অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে থাকাটাই নিরাপদ, আমি বললাম। আলাদা থাকার চেয়ে ওদের সঙ্গে থাকলে…
ঠিকই বলেছ, নিনাও একমত হলো। রাস্তা পেরিয়ে এলাম দুজনে। এ নেকড়ের চামড়া পরে অসহ্য গরম লাগছে। মাথা থেকে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে শুরু করল আমার,
কয়েকটা ব্লক পার হয়ে এলাম। ছেলেমেয়েগুলো বয়েসে আমাদের চেয়ে ছোট। আমাদের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকাচ্ছে। হ্যালোউইনে মায়ানেকড়ে সেজেছি মনে করে আমাদের দেখে ভয় পাচ্ছে না ওরা।
রাস্তার মোড় ঘুরে আরও কয়েকটা ব্লক পেরিয়ে এলাম।
ওই দেখো, কারা! আমার বাহুতে কনুই দিয়ে গুঁতো দিল নিনা।
ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি একজন মহিলা আর একটা রোবট উপহারের ব্যাগ নিয়ে হেঁটে চলেছে একটা বাড়ির সামনের লন দিয়ে।
টনি ও রজার, নিনা বলল।
ওদের সঙ্গেই থাকি, চলো, আমি বললাম। ঘাস মাড়িয়ে ওদের দিকে দৌড়াতে শুরু করলাম। নেকড়ের থাবা নেড়ে ডাকলাম, এই শোনো! দাঁড়াও!
আমাদের দিকে ফিরে তাকাল দুজনে।
দাঁড়াও! রোমশ লম্বা নাকটা উঁচু করে ধরলাম।
চেঁচিয়ে উঠল দুজনে। হাত থেকে ব্যাগ ছেড়ে দিল। তারপর বাঁচাও! বাঁচাও! বলে ঘুরে দিল দৌড়।
আমাদের দেখে পিলে চমকে গেছে ওদের! হাসতে হাসতে বলল নিনা।
হ্যাঁ, জবাব দিলাম। মজাই পেলাম খানিকটা প্রতিশোধ নিতে পেরে। পাজি দুটো বহুত জ্বালান জ্বালিয়েছে আমাকে।
তবে বেশিক্ষণ হাসার সুযোগ পেলাম না।
আমাদের পিছনে পাকা রাস্তায় ভারি পায়ের শব্দ ছুটে আসতে শুনলাম।
ফিরে তাকিয়ে দেখি রাস্তা ধরে দৌড়ে আসছেন আঙ্কেল-আন্টি। ভয়ানক উত্তেজিত মনে হলো।
ওই যে! আমাদের দিকে হাত তুলে চিৎকার করে বললেন আঙ্কেল। ধরো ধরো ওদের! ধরো!
আটাশ
আঙ্কেল-আন্টিকে ওভাবে মরিয়া হয়ে আমাদের দিকে দৌড়ে আসতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম।
নোড়ো না! দাঁড়াও! চিৎকার করে বললেন জুলি আন্টি, তাঁর কণ্ঠে অনুরোধের সুর, ওই চামড়াগুলো আমাদের দরকার!
নড়তে চাইলাম। পারলাম না। আমার পায়ে যেন শিকড় গজিয়ে গেছে। জোরে এক ধাক্কা দিয়ে আমাকে নড়িয়ে দিল নিনা। দৌড় দিলাম দুজনে।
মরিয়া হয়ে দৌড়াচ্ছি। পাগলের মত। মানুষের বাড়ির লন মাড়িয়ে, উঠান ধরে। একটা বাড়ির পিছনের আঙিনা দিয়ে ছুটে এসে প্রায় ঝাঁপ দিয়ে পড়লাম বড় একটা ঝোপের ভিতর।
আমাদের পিছনে লেগে রয়েছেন আঙ্কেল-আন্টি। প্রাণপণে দৌড়াচ্ছেন। চিৎকার করে বলছেন, দিয়ে দাও! আমাদের চামড়াগুলো দিয়ে দাও।