আন্টির দিকে ফিরে তাকালাম। ফস করে বলে ফেললাম, কেন, ওরা কি মায়ানেকড়ে?
দম আটকে ফেললেন সিডার আঙ্কেল।
হেসে উঠলেন জুলি আন্টি। নিনা বলেছে বুঝি?
ইয়ে…হ্যাঁ, দ্বিধা করে জবাব দিলাম।
মাথা নাড়লেন আন্টি। কী সব যে ভাবে না নিনা!
উলফরা আসলে আজব স্বভাবের, একেবারেই অমিশুক, বাড়ি থেকে বেরোয়ই না, সিডার আঙ্কেল বললেন। জানালা দিয়ে ওদের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বললেন, কুকুর দুটোও বিশ্রী স্বভাবের। যেমন মনিব, তেমন কুকুর।
নিনা, বলেছে ওদের নাকি কুকুর নেই, বললাম।
রেগে গেলেন সিডার আঙ্কেল। নিনাকে বলে দিয়ে এ সব উল্টোপাল্টা কথা যেন না বলে!
মানে?
মানে আর কী! ও তোমাকে ভয় দেখায়। কিন্তু শুধু শুধু ভয় দেখাবে কেন? দরজার ঘণ্টা বাজল। নিনা আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে এসেছে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশিই হলাম। তবে রাতে আমাকে ঘরে আটকে রাখার কথাটা নিনাকে বললাম না। উলফদের কুকুরটার কথাও আর তুললাম না। নিনাও আমার কাছে সব বলে না, কিছু গোপন করে। তাই ঠিক করেছি, রহস্যের সমাধান আমি একাই করব।
স্কুলে পৌঁছে আমার জ্যাকেটটা লকারে ঝুলিয়ে রেখে ক্লাসের দিকে এগোলাম। মোড় ঘুরতেই রাস্তা আটকে দাঁড়াল টনি ও রজার। তা আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল ওরা। দ্রুত এগিয়ে এল আমার দিকে। শঙ্কিত হলাম। রাতে লেকের পাড়ে না যাওয়ার একটা জবাব খুঁজতে থাকলাম মনে মনে। পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল আমার। উত্তেজনায় জ্বলছে ওদের চোখ।
এই, রবিন! আঙুল দিয়ে আমার কাঁধে খোঁচা মারল টনি।
মায়ানেকড়ে দেখেছ? রজার জিজ্ঞেস করল।
উনিশ
আমতা আমতা করতে লাগলাম। কী জবাব দেব বুঝতে পারছি না। দেখো…আমার আঙ্কেল-আন্টি…
থেমে গেলাম। ওরা এমন করে তাকিয়ে আছে কেন আমার দিকে?
বিচিত্র হাসি ছড়িয়ে পড়ল টনির মুখে। কাল রাতে বনের ভিতর খুব মজা পেয়েছিলে, তাই না?
মায়ানেকড়েটা দেখতে কেমন ছিল? ভুরু নাচাল টনি। ছবি তুলেছ?
ধাক্কা দিয়ে দুজনকে সরিয়ে দেয়ালের কাছ থেকে সরে এলাম। তারমানে কাল রাতে ওখানে যাওনি তোমরা?
হা হা করে হেসে উঠল ওরা। ঠাস ঠাস করে চাপড় মারতে লাগল একে অন্যের পিঠে।
হাসতে হাসতে রজার বলল, তোমার মত পাগল নাকি যে রাত দুপুরে বনের ভিতর মায়ানেকড়ে দেখতে যাব?
হেসে পরস্পরের পিঠে আবারও চাপড় মারল ওরা।
আমাকে তালা আটকে রাখার রাগটা চলে গেল। ভাগ্যিস যাইনি। তা হলে কী বোকাটাই না বনতাম।
তো? টনি জিজ্ঞেস করল। আমাদের না দেখে খুব অবাক হয়েছিলে, না?
না। তোমাদের কথা মনেই ছিল না আমার, জবাব দিলাম। কেন জানো? মায়ানেকড়ের ছবি তোলা নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম, আর কিছু ভাবারই সুযোগ পাইনি।
তাই? চেঁচিয়ে উঠল টনি।
কী দেখলে? রজারের কণ্ঠে সন্দেহ।
একটা মায়ানেকড়েকে অনুসরণ করে গেলাম, মনে মনে হাসছি। লেকে নেমে পানি খেল ওটা।
গুল মারার আর জায়গা পেলে না, টনি বলল।
মায়ানেকড়ে না ঘোড়ার ডিম দেখেছ। আসলে স্বপ্নে দেখেছ, বলল রজার।
কিন্তু আমি প্রমাণ করে দিতে পারি, বললাম। অনেকগুলো ছবি তুলেছি।
দেখি? টনি বলল।
এখনও ডেভেলপ করা হয়নি, জবাব দিলাম।
আমার দিকে তাকিয়ে সত্যি বলছি কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। ওরা। হাসিতে ফেটে পড়ছি মনে মনে। জোর করে মুখের ভাব স্বাভাবিক রাখছি। কি
ঘণ্টা বাজল।
লেট করে ফেলেছি। চেঁচিয়ে উঠল রজার।
হল ধরে ক্লাসের দিকে দৌড় দিলাম আমরা। হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে সিটে বসলাম। ঠিক দুই সেকেণ্ড পর ক্লাসে ঢুকলেন মিস্টার রোভার।
সারাটা সকাল ধরে যে কী পড়ালেন তিনি, কিছুই মাথায় ঢুকল না আমার। বসে বসে ভাবতে থাকলাম, আগামীকাল যখন ছবি দেখতে চাইবে টনি ও রোজার, কীভাবে দেখাব?
.
চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে যাব আজ রাতে, উলফদের বাড়ির ছবি তুলব, টেলিফোনে ফিসফিস করে বললাম। তুমিও চলে এসো।
রবিন, ফিসফিস করছ কেন? তীক্ষ্ণ হয়ে আমার কানে বেজে উঠল নিনার কণ্ঠ।
কালো রঙের পুরানো মডেলের টেলিফোন সেটটা রাখা আছে লিভিং রুমের টেবিলে। পাশের ঘরে ডিনারের জন্য খাবার তৈরিতে ব্যস্ত আঙ্কেল ও আন্টি। এখান থেকেও দেখতে পাচ্ছি। নিচুস্বরে নিনাকে বললাম, নিনা, বাড়ির পাশে লুকিয়ে থাকব আমি। বেডরুমের জানালা দিয়ে যা-ই বেরোক, সেটার ছবি তুলব…
জুলি আন্টি ঘরে ঢুকে পড়ায় চুপ হয়ে গেলাম।
ডিনার রেডি, রবিন, তিনি বললেন। কার সঙ্গে কথা বলছ?
নিনা, জবাব দিলাম। আমি খেতে যাচ্ছি, নিনাকে বললাম। পরে কথা বলব। লাইন কেটে দিলাম।
.
ইচ্ছে করেই বড় বড় হাই তুলতে লাগলাম। আঙ্কেল-আন্টিকে বোঝালাম আমার খুব ঘুম পেয়েছে। দশটার কিছু পরে আমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কয়েক মিনিট পর দরজার বাইরে তালা লাগানোর মৃদু শব্দ কানে এল। আবার আমাকে ঘরে বন্দি করেছেন আঙ্কেল ও আন্টি।
তবে এবার আমি তৈরি। ওঁদেরকে বোকা বানিয়েছি।
ডিনারের আগে একদলা বাবলগাম ঢুকিয়ে দিয়েছি লকের হুকটা দরজার যে ফুটোতে ঢোকে সেটাতে। তালাটা লাগেনি।
আবার একটা বাড়তি সোয়েটার গায়ে দিলাম। ভালমত দেখে নিলাম ক্যামেরাটা। তারপর অপেক্ষার পালা।
মাঝরাতের সামান্য আগে ক্যামেরা কেসটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিলাম। সহজেই খুলে ফেললাম বেডরুমের দরজা। পা টিপে টিপে বেরিয়ে এলাম ঘরের বাইরে, উজ্জ্বল চন্দ্রালোকে।
বিশ
দ্রুত একবার চোখ বোলালাম উলফদের বাড়িটার ওপর। তারপর শিশিরভেজা ঘাস মাড়িয়ে প্রায় দৌড়ে চললাম নিনাদের বাড়ির দিকে।