ঠেলাগাড়িটা মি, প্যান্টের কাছে নিয়ে এল ও।
ধন্যবাদ, বলে মরা চারাটা ঠেলাগাড়িতে তুললেন মি. প্যান্ট। এটাকে স্কুলের ডাম্পস্টারে ফেলে দেব। এবার রুডকে নিয়ে হেঁটে চলে গেলেন।
ওই যে টনি আর রয়! বলে ডাইনোসরটার দিকে আঙুল তাক করল মুসা।
ওরা দুজন ক্রাইম-সিন টেপের সীমানার বাইরে দাঁড়িয়ে। টনি কী সব বলছে আর টিরোনের এক পাশের এক দরজার দিকে ইঙ্গিত করছে। জবাব দিচ্ছে রয়, মাথা নাড়ছে।
ছেলেরা কিছু শুনতে পেল না, দূরে রয়েছে। একটু পরে, দুই যুবক রয়ের গাড়িতে উঠে চলে গেল।
জন ওদের সঙ্গে ছিল না।
অফিসার ফলেই মনে হয় জনকে সাসপেক্ট হিসেবে আটকে, রেখেছেন, বলল কিশোর। পেটের ভিতরের মিষ্টি লেমোনেড হঠাৎই তেতো লাগল ওর।
ছয়
বাড়ি ফেরার পথে ছেলেরা চুরিটা নিয়ে কথা বলল।
মুসা হঠাৎই থমকে দাঁড়াল। কালো চোখের মণিতে ধূর্ততার ছায়া।
জেনে ফেলেছি কে টাকা চুরি করেছে, ফিসফিস করে বলল ও।
কে? কিশোরের জিজ্ঞাসা।
টিরোন! বলল মুসা। সবাই যখন ঘুমিয়ে ও তখন ব্যাঙ্কে গিয়ে একটা ডাইনো ডিপোজিট করেছে!
মুসাকে ঠেলা দিল কিশোর। আর রবিন চোখ উল্টাল।
বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে একসঙ্গে ফায়ারওয়র্ক দেখতে যাবে ঠিক করল ওরা।
আমার বাসায় স্লীপিং ব্যাগ নিয়ে চলে এসো, বলল কিশোর। চাচা-চাচী বলেছে ফায়ারওয়র্কের পর বাইরে ঘুমোতে পারি আমরা।
কালো পোশাক পরব, ঠিক আছে? বলল মুসা।
সাড়ে আটটায় মুসা আর রবিনের পরিবার মিলিত হলো : কিশোরদের বাসায়। পিকনিক টেবিলের উপর স্লীপিং ব্যাগ স্তূপ করে রেখেছে তিন বন্ধু। বড়রা এনেছেন ব্ল্যাঙ্কেট, পপকর্ন আর বাগ প্ৰে। এ তিনটি পরিবার মেইন স্ট্রীটে হেঁটে গিয়ে বয়ে মোড় নিল। বাঁয়ে আরেকটা মোড় ঘুরে সুইমিংপুলের দিকে পা চালাল। ওখানেই ফায়ারওয়র্ক সেটআপ করা হয়েছে।
তোমরা তিনজন কালো ড্রেস পরেছ কেন? মি. মিলফোর্ড প্রশ্ন করলেন। তোমাদেরকে নিনজার মত লাগছে।
মশা যাতে না কামড়ায় সেজন্যে, বলল রবিন। কিশোরের দিকে। চাইল।
অন্যদেরকে পিছনে নিয়ে হাঁটছে তিন গোয়েন্দা।
ভাল বলেছ, কেউ শুনছে না নিশ্চিত হয়ে বলল মুসা।
একটু পরে, সবাই হাজির হলো টাউন পুলে। কয়েকশো লোক ইতোমধ্যেই জড় হয়েছে। পুলের কাছে, টেনিস কোর্ট আর বেসবল মাঠে ব্ল্যাঙ্কেট আর চেয়ারের ছড়াছড়ি।
ফায়ার ট্রাক কাছেই পার্ক করা, যদি দরকার পড়ে।
টনি, জন আর রয়কে দেখতে পাচ্ছি, বলল মুসা।
বেসবেল মাঠ ঘিরে রাখা ফেলে হেলান দিয়ে বসা ওরা। চলো ওদের সাথে বসি।
তা সম্ভব নয়, বলল রবিন। পরে আমাদেরকে পালাতে হবে না?
তা হলে অন্তত হাই বলি চলো, বলল কিশোর।
হ্যাঁ, জনকে অপরাধী মনে হয় কিনা সেটাও দেখা যাবে, মন্তব্য করল মুসা।
ছেলেরা ব্ল্যাঙ্কেট আর চেয়ার এড়িয়ে পথ করে নিল। টনি সবার আগে ওদেরকে দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়াল।
হাউডি, হাত নেড়ে বলল ও। আমাদের সাথে বসবে? রয় আর জনও হাই বলল, কিন্তু উঠে দাঁড়ায়নি।
ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পারব না, বলল মুসা। বাবা-মার সাথে থাকতে হবে।
অফিসার ফলেট ভাল মানুষ, বলল টনি। আমার বিশ্বাস উনি টাকাটা বের করতে পারবেন। আমরা টিরোনকে নিয়ে কাল চলে যাচ্ছি।
কোথায়? প্রশ্ন করল রবিন।
প্রথমে নিউ হ্যাঁভেন, তারপর অন্যান্য শহরে, বলল রয়।
আমাদেরকে আরও অনেক টাকা কামাতে হবে তো।
জন আলোচনায় যোগ দিল না। ওর চোখজোড়া সামনের দিকে স্থির।
গুড ইভনিং, একটি কণ্ঠ বলল। শাংরি-লা হোটেলের ম্যানেজার মি. লিস্টার। কফীট দূরে এক লন চেয়ারে বসে আছেন তিনি। সবাই হাই বলল। রুমটা কমফোর্টেবল লাগছে তো? টনি আর রয়ের উদ্দেশে বললেন মি. লিস্টার।
চমৎকার, জবাব দিল টনি।
ঠিক এসময় মাথার উপরে আকাশ নীল আলোয় আলোকিত হয়ে গেল।
উহ! চেঁচিয়ে উঠল দর্শকরা।
ওরা শুরু করছে! বলল রবিন। আমরা যাই।
কালকে কেলির ওখানে ব্রেকফাস্ট করলে কেমন হয়? টনি প্রশ্ন করল। তোমাদের সাথে দেখা না করে যেতে চাই না।
ঠিক আছে। কখন? বলল কিশোর।
আমাদেরকে ভোরে উঠতে হবে টিরোনকে পার্ট পার্ট করে ট্রাকে তোলার জন্যে, বলল টনি। নটা হলে কেমন হয়?
আমরা পৌঁছে যাব, বলল কিশোর। বড়দের সঙ্গে যোগ দিতে হাঁটা ধরল তিন গোয়েন্দা। টেনিস কোর্টের কাছে একটা জায়গা বেছে নিল ওরা। এখান থেকে তিন যুবকের উপর চোখ রাখতে পারবে।
টনি কী বলল শুনেছ? প্রশ্ন করল রবিন। কালকে টিরোনকে টুকরো টুকরো করবে ওরা!
কাজেই জন যদি ওখানে টাকা লুকিয়ে রেখে থাকে, তবে তার আগেই ওকে সেটা সরাতে হবে, বলল মুসা।
কথাটা অন্য কারও বেলাতেও খাটে, যোগ করল কিশোর।
জনই চোর, আমি তো বলছি, বলে চলল মুসা। ও কীভাবে চুপচাপ বসেছিল দেখনি? ও-ই দোষী।
ছেলেরা আরও কিছুক্ষণ ফায়ারওয়র্ক দেখল। মাথার উপরে আকাশ নানান রং ধারণ করছে-কালো, লাল, সাদা, নীল। জনতা হাততালি, শিস দিচ্ছে, চেঁচাচ্ছে।
আমাদের সটকাতে হবে, গলা খাদে নামিয়ে বলল মুসা। বড়সড় একটা ছুঁড়লেই।
একটু পরে, হলদে আলো ছড়িয়ে পড়ল আকাশে। সবাই চোখ তুলে দেখছে, আলগোছে সরে পড়ল তিন বন্ধু।
ইস্ট গ্রীন স্ট্রীট ধরে ছুট দিয়ে হাই স্কুলের লনে চলে এল ওরা।
চাঁদের আলোয় ডাইনোসরটার ছায়া বিস্তার পেয়েছে খেলার মাঠের মাঝামাঝি অবধি। ওদের পিছনে, আকাশ তখন আলোকিত। বাতাসের দোলায় স্টেকের গায়ে পতপত করে বাড়ি খাচ্ছে হলদে টেপ।