তা ঠিক, বলল মুসা। টিরোন প্রথমে কয়েক মিনিট নড়েনি, মনে, আছে? জন তখন হয়তো ডাফেল ব্যাগটা সরাচ্ছিল!
মাথা নাড়ল কিশোর।
জন ওর প্রিয় বন্ধুর টাকা চুরি করবে বলে মনে হয় না।
ঠিক এসময় অফিসার কীন তাঁর ক্রুজারে চেপে পৌঁছলেন। এক গাদা হলদে টেপ আর কাঠের কটা স্টেক নিয়ে নেমে এলেন গাড়ি থেকে।
হাই, কিডস, বললেন তিনি। উত্তেজনার খোরাক পাওয়া গেছে, তাই না?
টেপ আর স্টেকগুলো মাটিতে নামিয়ে রেখে টিরোনের কাছে হেঁটে এলেন। ওয়েজটা তখনও যথাস্থানে ছিল, দরজাটা আরেকটু ফাঁক করার সুযোগ দিল তাঁকে। ভিতরে উঁকি দিলেন তিনি।
বাপরে, ভিতরে পাই বেক করা যাবে, বললেন। টিরোনকে ঘিরে মাটিতে স্টেক খুঁজতে শুরু করলেন অফিসার। কীন। এবার স্টেকগুলোতে ক্রাইম-সিন টেপ দিয়ে ঘিরে দিলেন। ডাইনোসরটাকে।
চলো, কেলির ওখানে যাই, বলল মুসা। আমার মগজ একটা ড্রিঙ্ক চাইছে।
সেন্টার পার্কের ভিতরে ঢুকে পড়ল ছেলেরা। হাঁটছে।
জনকে তোমার সত্যিই চোর মনে হয়? মুসাকে প্রশ্ন করল রবিন।
হ্যাঁ, জানাল মুসা। ওর কাছে চাবি আছে, আর টাকা কোথায় লুকানো থাকে তাও ওর জানা।
রয়ের ব্যাপারে কী ভাবছ? ও টনি কিংবা জনের চাবি দিয়ে কাজট করতে পারে না? প্রশ্ন করল নথি।
করার সুযোগ থাকলে ওরা অফিসার ফলেটকে কথাটা জানাত, বলল মুসা।
চোর অন্য কেউও তো হতে পারে, বলল কিশোর। ডালা খুলতে জানে এমন কেউ।
কিন্তু জন বাইরে ঘুমোচ্ছিল, বলল রবিন। ওর পাশ দিয়ে চোর আসবে কীভাবে?
সেজন্যেই আমি জনকে সন্দেহ করছি, বলে কেলিস ডাইনারের দরজা টেনে খুলল মুসা।
জানালার কাছে এক বুঁদ দখল করল ওরা। একটা টিরোন ফ্লায়ার টেপ দিয়ে কাঁচে সাঁটা। কেলি হাত নেড়ে এগিয়ে এল।
হাই, কেলি বলল। ডাইনোসর শো দেখতে যাওনি?
শো শেষ, বলল মুসা। কিন্তু ওদের টাকা চুরি গেছে।
মুসার পাশে বসল কেলি।
কে কার টাকা চুরি করল?
রবিন টিরোনের পেটে লুকানো টাকার কথা জানাল।
আহারে বেচারারা, উঠে দাঁড়িয়ে বলল কেলি। আজ সকালে ব্রেকফাস্ট করতে এসেছিল। তখন কী এক্সাইটেড দেখলাম ওদেরকে!
অফিসার ফলেট কেসটা দেখছেন, রবিন বলল।
গুড! মুসা, তোমার তো জিভ বেরিয়ে পড়েছে। ফ্রেশ লেমোনেড হলে কেমন হয়? জিজ্ঞেস করল কেলি।
ছেলেরা সায় জানালে, তিনটে উঁচু গ্লাস নিয়ে এল কেলি
স্ট্র দিয়ে লম্বা টান দিল মুসা।
তো তোমরা আমার সাথে একমত যে জনই চোর?
লেমোনেড নাড়ল কিশোর।
আমি নই। যে পাহারার দায়িত্বে ছিল সে এত বোকা নয় যে চুরি করবে, বলল ও। সেক্ষেত্রে আঙুল তো ওর দিকেই উঠবে।
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
ও শো-র সময় ডাফেল ব্যাগটা নিয়ে থাকতে পারে, বলল ও।
কীভাবে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
খুব সহজ, বলল মুসা। নিজেকে ও টিরোনের ভিতরে লক করে। টেবিল আর কার্পেট সরায় ও, ডাফেল ব্যাগটা নিয়ে, কার্পেট আর টেবিল জায়গামত রেখে দেয়। মাত্র এক মিনিটের কাজ।
তারপর? ডাফেল ব্যাগটা কোথায় রাখল? জবাব চাইল কিশোর।
মুসার দিকে চেয়ে রয়েছে ও আর রবিন, জবাব আশা করছে।
চোখ পিটপিট করল মুসা। চুমুক দিল লেমোনেডে। এ ব্যাপারটা এরকম ঘটেছে, বলল ও। জন টিরোনের ভিতরে ছোট্ট খুপরিটা বানিয়েছে, তাই তো বলেছে? ও যদি ওরকম আরেকটা খুপরি বানিয়ে থাকে, যেটার কথা শুধু ও-ই জানে? টাকাগুলো যদি ওখানেই লুকিয়ে রেখে থাকে!
মুসার দিকে চাইল কিশোর।
তুমি ভাবছ টাকা এখনও টিরোনের ভেতরেই রয়েছে?
হতেই পারে, বলল মুসা। কেউ তো ওখানে খুঁজবে না।
রবিন চাইল মুসার দিকে।
তোমার মত খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষ ছাড়া।
চলো, টিরোনের ভিতরটা খুঁজে দেখি আমরা, লেমোনেল্ড শেষ করে বলল মুসা। আমার ধারণা যদি ঠিক হয়, তা হলে প্রথম সুযোগেই ব্যাগটা হাতিয়ে নেবে জন।
মুসার কথায় কিন্তু যুক্তি আছে, বলল রবিন। খুঁজে দেখতে অসুবিধে কী?
ছেলেরা টেবিলে টাকা রেখে, কেলির উদ্দেশে হাত নেড়ে, ফিরে চলল হাই স্কুলের দিকে।
একটু পরে, হলদে ক্রাইম-সিন টেপ দিয়ে ঘেরা টিরোনের দিকে চেয়ে রইল তিন বন্ধু। অফিসার কীন চলে গেছেন।
টেপের ভিতরে যাওয়া বেআইনী, বলল কিশোর।
আমরা বলব দেখিনি, বাতলে দিল মুসা।
হ্যাঁ, ঝকঝকে দিনের আলোয় হলদে টেপ চোখে পড়েনি তিনজনের কারওই বলল কিশোর।
আমরা রাতে আসতে পারি না? রবিন বলল।
মাথা নাড়ল কিশোর।
আজ রাতে আমরা বড়দের সাথে ফায়ারওয়র্ক দেখতে যাচ্ছি।
মুসা এক হাত দিয়ে কিশোরের কাঁধ জড়িয়ে ধরল।
হ্যাঁ, বলল ও। সবার চোখ যখন আকাশের দিকে তখন আমরা লুকিয়ে এখানে চলে আসতে পারি।
শেষমেশ সায় জানাল কিশোর।
আমি রাজি হচ্ছি শুধু টনির জন্যে, বলল ও।
এ সময় ছেলেদের কানে কুকুরের ডাক ভেসে এল। মি, প্যান্ট আর রুডকে পার্কের গোলাপঝাড় পরীক্ষা করতে দেখল ওরা। হাই বলার জন্য হেঁটে ওদিকে গেল তিন বন্ধু।
ডাকাতির কথাটা শুনেছেন? রবিন প্রশ্ন করল।
হ্যাঁ, ছেলেগুলোর জন্য খারাপ লাগছে, বললেন মি, প্যান্ট।
কোন সুরাহা হলো?
মাথা নাড়ল কিশোর।
তবে আজ রাতে হতে পারে, বলে কিশোরকে আলতো কনুই মারল মুসা।
ঝাড়গুলো সুন্দর লাগছে, বললেন মি, প্যান্ট। তবে এই মরা। চারাটা সরাতে হবে। কিশোর, তুমি একটু হুইলবারোটা আনবে?
শেডে দৌড়ে গেল কিশোর। ঠেলাগাড়িটা যেখানে রেখে গিয়েছিল সেখানেই রয়েছে, বারল্যাপ ব্যাগগুলোর গায়ে ঠেস দেওয়া। কিশোর বেরিয়ে আসবে, কাদামাখা পায়ের ছাপ চোখে পড়ল ইটের উপর।