মুসাকে অনুসরণ করল কিশোর।
বলতে খারাপ লাগছে, বলল মুসা, কিন্তু চুরিটা এই তিনজনের মধ্যে একজন করেছে। চিবুক দেখাল টনি, জন আর রয়ের উদ্দেশে।
ওরা চুরি করতে যাবে কেন? প্রশ্ন করল কিশোর। টনি আর জন সত্যি সত্যি জাদুঘরটা বানাতে চায়। আর রয় ওখানে কাজ করবে।
কিন্তু আর কার কাছে চাবি আছে, কিংবা টিরোনের ভিতরে যে গোপন জায়গা আছে সেটার কথা ওরা ছাড়া আর কে জানে? জোর দিয়ে বলল মুসা।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ছোট্ট এক নুড়িতে লাথি মারল।
আমি বিশ্বাস করি না টনি এমন কাজ করতে পারে, বলল।
এসময় রবিন আর অফিসার ফলেটকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখা গেল। ডাইনোসরটার কাছে ফিরে গেল কিশোর আর মুসা।
অফিসার ফলেট নিজের পরিচয় দিয়ে পকেট থেকে নোটবুক আর কলম বের করলেন।
রবিনের কাছে সব শুনলাম, বললেন। তিন যুবকের দিকে চাইলেন, আপনাদের নাম জানতে পারি?
সবার নাম টুকে নিলেন অফিসার ফলেট
টাকাটা শেষবার কোথায় দেখেছেন বলতে পারবেন? প্রশ্ন। করলেন।
দরজা ভেদ করে ফাঁকা কম্পার্টমেন্টটা দেখাল জন।
ওখানে ছিল, শুধু যখন আমরা রাস্তায় থাকতাম তখন ট্রাকে আমাদের সাথে রাখতাম।
কাল বিকেলে ডাফেলটা কম্পার্টমেন্টের ভিতরে রেখেছি আমি, বলল টনি। তখনই শেষবার দেখেছি টাকাগুলো। না, টাকাগুলো ব্যাঙ্কে রাখলে ভাল হত না? অফিসার ফলেট প্রশ্ন করলেন।
আমরা ভেবেছিলাম ডাইনোসরের ভিতরেই টাকাগুলো নিরাপদ, বলল টনি। আমরা ছাড়া আর কেউ গোপন কম্পার্টমেন্টটার কথা জানত না। টাকাগুলো মন্টানায় আমার ব্যাঙ্কে রাখার ইচ্ছা ছিল।
কম্পার্টমেন্টটা কি লক করা ছিল? পুলিস চীফের প্রশ্ন। নোটবইতে টুকছেন।
মাথা নাড়ল টনি।
না, কিন্তু আমরা সব সময় বাইরের দরজাটা বন্ধ রাখি।
কি হোলটা পরখ করলেন অফিসার ফলেট। রবারের ওয়েজটা সরিয়ে কজার উপরে দরজাটাকে আগু-পিছু করলেন।
এই দরজার চাবি কার কাছে আছে? জিজ্ঞেস করলেন।
আমার কাছে একটা আছে, জানাল জন। চাবির রিং ট্যাপ করল।
নিজের চাবিগুলো তুলে ধরল টনি।
আর আমার কাছে আছে অন্যটা, বলল ও।
প্যাডে নোট নিলেন অফিসার ফলেট।
তো মিস্টার টনি কাল বিকেলে কম্পার্টমেন্টে টাকাগুলো রেখেছিলেন, বললেন তিনি। তারপর আজ সকালে, শো-র পরে, মিস্টার জন টাকা খুঁজতে গিয়ে দেখেন টাকা নেই। ঠিক?
না, ঠিক তা নয়, জানাল জন। শো-টা আমি করেছি, কিন্তু টাকা নেই সেটা প্রথমে জেনেছে টনি।
টাকাগুলো কাল রাতে চুরি হয়নি তো? অফিসার প্রশ্ন করলেন। আপনারা রাতে কোথায় ঘুমিয়েছিলেন?
রয় আর আমি হোটেলে ঘুমিয়েছি, জানাল টনি। টাকাটা ছিল কম্পার্টমেন্টে। সব সময় তাই থাকে। জন বাইরে ঘুমোয়। টিরোনকে পাহারা দেয়।
অফিসার ফলেটকে বিভ্রান্ত দেখাল।
টিরোন কে?
আমাদের ডাইনোসরটার নাম টিরোন, ব্যাখ্যা করল রয়।
অফিসার ফলেট জনের দিকে চাইলেন।
আপনি রাতে এখানে ঘুমিয়েছেন? বৃষ্টির মধ্যে?
মৃদু হাসল জন।
না, বৃষ্টি শুরু হলে স্লীপিং ব্যাগ নিয়ে ট্রাকের ভিতরে ঢুকে পড়ি।
অফিসার ফলেট প্যাডে আরও কী-সব নোট নিয়ে টনির দিকে ঘুরে চাইলেন।
আপনি যখন ঘুমাচ্ছিলেন তখন কেউ কি চাবিটা চুরি করতে পারে?
মাথা নাড়ল টনি।
দরজা বন্ধ ছিল।
জনের দিকে চাইলেন অফিসার ফলেট।
আপনার চাবি, মিস্টার জন? ওটা কোথায় ছিল, আপনি যখন এখানে ঘুমাচ্ছিলেন?
চাবির গোছাটা তুলে ধরল জুন।
স্লীপিং ব্যাগের ভিতরে আমার বেল্টে ক্লিপ করা ছিল, জানাল।
অফিসার ফলেট দরজাটা ধাক্কা মেরে খুলে কম্পিউটারের দিকে চাইলেন।
টিরোনকে অপারেট করে কে? জিজ্ঞেস করলেন।
আমি, জানাল জুন। আর আমার কম্পিউটার।
তো আপনাদের জানা মতে, আজ সকালে ডাফেল ব্যাগটা মেঝের। নীচে লুকানো ছিল, অফিসার ফলেট মত প্রকাশ করলেন।
হ্যাঁ, জানাল জন।
টিরোনের ভিতরে উঁকি দিলেন অফিসার ফলেট।
মিস্টার জন, আপনি লুকানো টাকার ঠিক ওপরে কম্পিউটার নিয়ে বসে ছিলেন, তাই না?
মাথা ঝাঁকাল জন।
তবে আমার ধারণা ততক্ষণে টাকা চুরি হয়ে গেছে, বলল ও।
শো-র পরে, টনি যখন টেবিল সরিয়ে কার্পেট টানে ডাফেল ব্যাগটা তখন হাওয়া।
অফিসার ফলেট ওয়েজটা যথাস্থানে রাখলেন যাতে দরজাটা ঈষৎ খোলা থাকে। এবার তিন যুবকের দিকে চাইলেন তিনি।
আপনারা আমার অফিসে চলুন। আপনারা কাল এখানে আসার পর থেকে যা যা ঘটেছে সব আমাকে লিখে দেবেন। ছোটখাট বিষয়ও বাদ দেবেন না, যতই গুরুত্বহীন মনে হোক না কেন।
এতে কতক্ষণ লাগবে? প্রশ্ন করল রয়। আমাদের আরও অনেক স্কুলে শো করতে যেতে হবে কিনা।
তা হলে আর দেরি না করে আসুন আমার সঙ্গে, বললেন অফিসার ফলেট।
পাঁচ
তিন বন্ধু তিন যুবককে পুলিস স্টেশনের দিকে যেতে দেখল। ওদের মাথার উপর দিয়ে টিরোন বড় বড় প্লাস্টিকের চোখ মেলে চেয়ে রয়েছে।
কী বিশ্রী ব্যাপার! বলল কিশোর। টনি এল আমাদের সাথে দেখা করতে আর ওর টাকা কিনা খোয়া গেল।
কেউ কাজটা করল কীভাবে মাথায় আসছে না, রবিন বলল। কাল বিকেলে আমরা সবাই এখানে ছিলাম, আর জন টিরোনকে রাত্রিবেলা পাহারা দিয়েছে। তা ছাড়া, শো-র সময় ও টিরোনের ভিতরে বন্ধ অবস্থায় ছিল।
হয়তো জনই চোর, বুলল মুসা। কাল রাতে কিংবা আজ শো-র সময় হয়তো কাজটা করেছে। দরজা বন্ধ হবার পর ও কী করেছে কেউ জানে না।, কিন্তু আমরা তো জানি ও কী করেছে, বলল কিশোর। কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছিল, নইলে টিরোন নড়ত না, কথাও বলত না।