টিরোন লজ্জা পাচ্ছে, বলল টান। এবার জোরাল গলায় বলল, টিরোন? বন্ধুদেরকে হাই বলবি না? লেজটা একটু নাড়া না।
কেউ কেউ হেসে উঠল, কিন্তু টিরোন নট নড়ন চড়ন নট কিছু।
ছোট দর্শকদের কেউ কেউ অসহিষ্ণু হয়ে উঠল। কিশোরের পিছনে বসা একটি ছেলে আওড়াল, টাকা ফেরত পাব কিনা কে জানে।
এবার হঠাৎই টিরোনের লেজটা ডান থেকে বাঁয়ে নড়ে উঠল। ওর
ছোট ছোট সামনের দুবাহু উপরে-নীচে দুলে উঠল। মুখ হাঁ হয়ে গেল। এবং টিরোন ভরাট কণ্ঠে বলে উঠল, হাই!
হাই, টিরোন! দর্শকরা বিপুলভাবে সাড়া দিল।
আমি কী ধরনের ডাইনোসর জানেন আপনারা? প্রশ্ন করল টিরোন। কিশোর চিনতে পারল জনের কণ্ঠ আসছে টিরোনের মুখ দিয়ে।
সবাই হাত তুলল।
টির্যানোসরাস! ছোট-বড় সবাই বলে উঠল।
ঠিক, আমি টির্যানোসরাস রেক্স। বলল টিরোন। আজ সকালে পেট পুরে নাস্তা করেছেন কতজন?
বেশিরভাগ মানুষ এক হাত ওঠাল।
ভাল, বলল টিরোন, প্রকাণ্ড মাথাটা নাড়ল। প্রায় সত্তর মিলিয়ন বছর আগে, আমি অন্যান্য ডাইনোসরদের দিয়ে নাস্তা সারতাম।
হেসে উঠল সবাই। টনি ট্রাক থেকে লাফিয়ে পড়ে তিন বন্ধুর সঙ্গে বসল।
জন ভাল জমিয়ে ফেলেছে, তাই না? বলল ও।
টিরোন তো দেখছি দারুণ কথা বলে, বলল কিশোর। মাথা ঝাঁকাল টনি।
হ্যাঁ, জন মেকানিকাল কিছু পেলে একেবারে জিনিয়াস। প্রথমটায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিল আমাকে। আমি তো ভেবেছিলাম কম্পিউটারে গড়বড় হয়ে গেছে বুঝি।
ডাইনোসরদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিল টিরোন। কী খেত, কীভাবে বাচ্চাদের বড় করত এসব আরকী।
শো প্রায় আধ ঘণ্টা চলল।
আশা করি আপনারা লাইব্রেরিতে গিয়ে ডাইনোসর সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানবেন, বলল টিরোন। খুদে খুদে বাহু নেড়ে বিদায় জানাল। আগামী গ্রীষ্মে আপনাদের সঙ্গে আমাদের মন্টানায় দেখা হবে।
বাচ্চাদের অনেকে চেঁচিয়ে উঠল, বাই, টিরোন! লোকজন বিদায় নিতে শুরু করল।
খাইছে, দারুণ লাগল! আপনারা এখন পর্যন্ত কতগুলো স্কুলে গেছেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।
মাথা চুলকাল টনি।
মনে নেই, গোটা পঞ্চাশেক হবে বোধহয়। রয়ের কাছে হিসেব আছে। আমরা মন্টানায় ফিরে যাওয়ার আগে হয়তো আরও গোটা বিশেক স্কুলে শো করব।
জন টিরোনের পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে এল।
দারুণ হয়েছে, সপ্রশংস কণ্ঠে বলল টনি। কিন্তু শুরুতে কী হয়েছিল?
শ্রাগ করল জন।
ল্যাপটপের একটা তার ঢিলে ছিল। কাজ করছিল না।
যাক, ফিক্স করতে পেরেছ এই বেশি, বলে উঠে দাঁড়াল টনি।
গরম লাগছে, যোগ করল। আইসক্রিম খেলে কেমন হয়? সব গোছগাছ করার পর কেলির ওখানে যাব আমরা, কেমন?
মুসার পোয়াবারো, বলল রবিন
আমরা কি কোন সাহায্য করতে পারি?
পকেট থেকে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ বের করল টনি। কাগজগুলো যদি কুড়াতে পারো ভাল হয়, বলল।
টনি যখন ট্রাকের দিকে এগোল, তিন বন্ধু ছড়িয়ে পড়ে কুড়োতে লাগল।
কিশোর দুমড়ানো মোচড়ানো এক ফ্লায়ার ভোলার জন্য ঝুঁকছে, এসময় একটা চিৎকার শুনতে পেল। মুখ তুলে চাইল ও। চিৎকারটা টিরোনের কাছ থেকে এসেছে, খোলা দরজার সামনে জড় হয়েছে টনি, জন আর রয়।
একশো ফীট দূর থেকেও কিশোর শুনতে পেল৷ টনির গলা, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
চার
টিরোনের উদ্দেশে দৌড়ে গেল তিন বন্ধু।
কী হয়েছে? প্রশ্ন করল কিশোর!
আমাদের টাকা চুরি গেছে! বলল রয়।
খাইছে, যে টাকাটা এইমাত্র ওঠালেন? মুসার প্রশ্ন।
মাথা নাড়ল টনি।
না, সেটা আছে। রাবার ব্যাণ্ডে মোড়া মোটা দুটো টাকার তাড়া দেখাল ও। আগেকার টাকার সাথে এটা রাখতে গিয়ে দেখি টাকা নেই!
টিরোনের পেটের ভিতরে মেঝের দিকে আঙুল তাক করল কিশোর। টেবিল, চেয়ার আর কার্পেট সরানো হয়েছে। টেবিল-চেয়ার যেখানে ছিল মেঝের সেখানটায় এখন চৌকো এক গর্ত। কজা লাগানো এক দরজা খোলা, বেরিয়ে পড়েছে এক কম্পার্টমেন্ট। ফাঁকা।
টাকাগুলো এখানেই লুকিয়ে রাখতাম, বলল, জন। ডাফেল ব্যাগে ভরে। মন্টানা থেকে আসার পর থেকে এখানেই ছিল।
কত টাকা ছিল? প্রশ্ন করল মুসা।
টনির মুখের চেহারা ফ্যাকাসে।
এতদিন যা জমিয়েছিলাম সব, বলতে গিয়ে গলা কেঁপে গেল ওর। প্রায় পাঁচ হাজার ডলার।
ছজোড়া চোখ চেয়ে রইল ফাঁকা কম্পার্টমেন্টটার দিকে।
চোর এল কখন বুঝতে পারছি না, বলল রয়।
মুহূর্তের জন্য চোখ মুদল টনি।
ডাফেল ব্যাগটা কালকে ওখানে রেখেছিলাম, বলল ও। টিরোনকে সেটআপ করার পর।
তারমানে টাকাটা চুরি গেছে কাল বিকেল আর আজ সকালের মধ্যে, জানাল জন। ঘটনাটা কাল রাতে ঘটেনি, কারণ আমি এখানেই ঘুমিয়েছিলাম।
আমি অফিসার ফলেটকে ডেকে আনছি, বলল রবিন। উনি এখানকার পুলিস চীফ।
উনি আর এখন কী করবেন? প্রশ্ন করল টনি। টাকাটা তো অনেক আগেই চুরি গেছে।
অফিসার ফলেট অনেক বদমাশকে ধরেছেন, জানাল কিশোর।
মুসা মাটির দিকে চাইল, রোদের তাপে শুকিয়ে গেছে।
উনি এখান থেকে কিছু ক্ল পেতে পারেন, বলল ও।
পুলিস ডাকাই উচিত, টনি, বলল জন। টাকাটা ফেরত পাওয়ার জন্যে আমাদের সবরকম চেষ্টাই করতে হবে।
আমি এখুনি আসছি! বলে দৌড় দিল রবিন।
এই টাকায় কেউ হাত দিতে পারবে না, বলল টনি। শার্ট খুলে। নোটগুলো ভিতরে ঠেসে দিল।
মুসা কিশোরের বাহুতে চিমটি কাটল। ও মুখ তুলে চাইতেই মুসা ভ্রূ দেখিয়ে ওর সঙ্গে যেতে বলল।