কী বলব…মানে… কথা হারিয়ে ফেলেছে কিশোর। হেসে উঠল টনি আর জন।
এটা তো ছোট, বলল জন। প্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্স-এর চাইতে অনেক বড়। এসো, তোমাদেরকে দেখাই এটার পেটের ভিতরে কী আছে।
একটা চাবি বের করে টিরোনের একপাশে ছোট্ট এক ফুটোয় ঢোকাল ও। চাবি মোচড় দিতেই খুদে এক ধাতব রিং লাফিয়ে বেরিয়ে এল। জন রিংটা ধরে টানতেই কজা লাগানো এক দরজা হাট হয়ে খুলে গেল।
খাইছে! দেখাই যায়নি! বলে উঠল মুসা।
রবারের এক ওয়েজ তুলে নিল জন। দরজাটা খোলা রাখতে ব্যবহার করল ওটাকে! এবার দোরগোড়া দিয়ে হাত বাড়িয়ে টেনে নামাল ভাঁজ করা একসার কজা লাগানো সিঁড়ি।
দেখো, বলল ও।
ছেলেরা সিঁড়িতে হাঁটু গেড়ে বসে ডাইনোসরের পেটের ভিতর উঁকি দিল। দেয়ালগুলোকে সাপোর্ট দিচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের বার। এক সার হুক যন্ত্রপাতি, দড়ির কুণ্ডলী আর তার ধরে রেখেছে। কোন জানালা নেই। ভিতরে বেজায় গরম।
এক টুকরো কার্পেট দিয়ে আংশিক ঢাকা মেঝেটা। কার্পেটের মাঝখানে ছোট এক টেবিলের উপরে একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার। মেঝের উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে এক গোছা ধূসর কম্পিউটারের তার। কয়েকটা তার ডাইনোসরটার বুক বেয়ে উঠে উধাও হয়ে গেছে ঘাড় ও মাথার ভিতরে।
কম্পিউটার সব করে, বলল জন। আমি টিরোনের লেজ, মুখ। আর সামনের পা নাড়াতে পারি স্রেফ মাউস ক্লিক করে।
ছেলেদেরকে নিয়ে টিরোনের পেটের ভিতরে ঢুকল ও।
টিরোনের মাথায় একটা লাউডস্পিকার বসিয়েছি, ব্যাখ্যা করল জন। খুদে এক মাইক্রোফোন দেখাল ছেলেদেরকে। এতে কথা বললে মনে হয় টিরোন কথা বলছে।
খাইছে, ওকে দিয়ে এখন কথা বলাতে পারবেন? মুসার প্রশ্ন।
সেজন্য কালকে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, বলল জন। আমরা জার্নি করে খুব ক্লান্ত। অন্তত দশ ঘণ্টা ঘুমাব।
ছেলেরা আর জন বেরিয়ে এল টিরোনের পেট থেকে। দরজা। লাগিয়ে দিল জন।
আপনারা কি শাংরি-লায় উঠেছেন? প্রশ্ন করল রবিন।
টনি আর রয় উঠেছে, বলল। আমি এখানেই বিছানা পেতে, নেব। ট্রাকের ভিতর থেকে একটা স্লীপিং ব্যাগ বের করে মাটিতে ফেলল ও।
আপনি বাইরে ঘুমান কেন? কিশোরের প্রশ্ন। দাঁত বের করে হাসল জন।
ওদের দুজনের নাক ডাকে, বলে টনি আর রয়কে ইঙ্গিতে দেখাল। তা ছাড়া তারার আলোয় ঘুমাতে ভাল লাগে আমার। প্লাস, টিরোনকেও গার্ড দেয়া হয়। সকালে আমি হোটেলে গিয়ে ওদের শাওয়ার ইউয করব।
ভাল বার্গার কোথায় পাওয়া যায় বলতে পারো? রয় জিজ্ঞেস করল ছেলেদের। আর সকালের নাস্তা?
কেলি’স ডিনার! এক বাক্যে জানাল কিশোর।
রবিন মেইন স্ট্রীটের দিকে আঙুল তাক করল।
ওটা পেট শপ আর ফিটনেস সেন্টারের মাঝখানে।
ধন্যবাদ। কালকে দেখা হবে, বলল টনি।
ওরা তিনজন লাল গাড়িটায় উঠল। মেইন স্ট্রীটের উদ্দেশে গাড়ি হাঁকাল রয়। এসময় মাথার উপরে বাজ গুড়গুড় করে উঠলে, বাড়ির দিকে দৌড় দিল তিন বন্ধু।
তিন
রাতে বাজের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল কিশোরের। জানালা দিয়ে ঝড় দেখতে লাগল ও। বিজলী চমকালে টিরোনের কথা ভাবলা-আঁধারে, বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
পরদিন সাড়ে এগারোটা নাগাদ হাই স্কুলে হাজির হয়ে গেল। কিশোর। মুখ তুলে চাইল টিরোনের দিকে। নীল আকাশের নীচে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে বিশাল টির্যানোসরাসটা। মুখ বন্ধ
দৃষ্টি দূরে প্রসারিত। রাতের ঝড়ের ফলে ঘাস এখনও ভেজা, সূর্যের তাপে মিশে যাচ্ছে কুয়াশা।
টনি, জন আর রয়কে আশপাশে দেখা গেল না। কিশোর ট্রাকটার কাছে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিল। সিটের উপর ছড়ানো জনের স্লীপিং ব্যাগ।
একটু পরে, পৌঁছে গেল রবিন আর মুসা।
তার খানিক পরেই, টিরোনের পাশে লাল গাড়িটা দাঁড় করাল রয়। বেরিয়ে এসে হেঁটে এল ছেলেদের উদ্দেশে।
মর্নিং বলল সে। কী ঝড়টাই না হলে বাপরে বাপ!
মাটিতে বসে একজোড়া স্যাণ্ডেল পরল ও। ওর ভেজা জুতোজোড়া একসঙ্গে ফিতেয় বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছে গাড়ির অ্যান্টেনা থেকে।
টনি আর জন সেন্টার পার্কের ভেতর থেকে হেঁটে বেরিয়ে এল।
হাই, টনি বলল ছেলেদের উদ্দেশে। রয়, তুমি দারুণ এক, ব্রেকফাস্ট মিস করলে। ওই কেলি দুর্দান্ত ওয়্যাফল বানায়া
মাথা ঝাঁকাল রয়।
আমার বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না।
একে একে দর্শকরা আসতে শুরু করেছে। মেরি চাচী, মিসেস আমান আর মিসেস মিলফোর্ডও এসেছেন।
দর্শক বাড়তে দেখে খুশি হয়ে উঠল টনি।
বাহ, চমৎকার! বলল ও। জন, তুমি টিরোনকে রেডি করো, আমি আর রয় টাকা কালেক্ট করি।
টনি আর জন দর্শকদের কাছ থেকে এক ডলার করে তুলল। হাত ভর্তি টাকা এসে গেলে ট্রাকের ক্যাবের ভিতরে তালা মেরে রেখে দিল। ওদের দুজনকে দুতিনবার করে কাজটা করতে হলো-এত দর্শক এসেছে।
খাইছে, ওরা বহুত টাকা কামাবে, বলল মুসা। এখানে অন্তত দুশো মানুষ আছে।
টনি ট্রাকবেড়ে উঠে পড়ল কর্ডলেস এক মাইক্রোফোন হাতে।
আসার জন্যে আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ, জানাল ও।
সবাই চুপ করলে পরে, টনি ব্যাখ্যা করল কেন ওরা টাকা তুলছে।
আমাদের জাদুঘরটা আগামী সামারের মধ্যে বানাতে চাই। আশা করি আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ ওটা দেখতে যাবেন। মাইকটা ডাইনোসরের দিকে তাক করল ও। আপনারা আমার বন্ধু টিরোনের সাথে পরিচিত হোন। টিরোন, তুই তোর সম্পর্কে দর্শকদের কিছু জানা।
কিছুই ঘটল না। টিরোন নীরবে ঠায় দাঁড়িয়ে। মুখে টু শব্দটি নেই।