ঠিক এসময় লম্বা এক ফ্ল্যাটবেড ট্রাক রয়ের গাড়ির পাশে এসে থেমে দাঁড়াল। বাদামী এক তেরপলে ঢাকা ট্রাকের বেড, বিশাল, ফোলা কোন কিছুকে ঢেকে রেখেছে। গোটা জিনিসটা দড়ি দিয়ে বাঁধা।
ড্রাইভারের আসন থেকে নেমে এল লম্বা, পাতলা এক লোক। পরনে জিন্স, শর্ট-স্লীভ শার্ট, আর কাউবয় হ্যাট।
হাউডি, তিন বন্ধুর উদ্দেশে উদ্ভাসিত হাসল টনি। হাই! একসঙ্গে বলে উঠল ওরা।
প্যাসেঞ্জার্স সিট থেকে এক লোক নেমে এল। খাটো, ছিপছিপে লোকটির কালো চুল পনিটেইল করে বাঁধা। পরনে ওয়র্ক সুট, ব্যাগি শর্টস আর হাতা কাটা ফ্লানেলের শার্ট।
এ হচ্ছে আমার রুমমেট আর প্রিয় বন্ধু জন ওয়েদারবার্ড। বলল টনি। জন, এরা কিশোর, মুসা আর রবিন।
জন ট্রাকটাকে পাক খেয়ে ওদের দিকে এগিয়ে এল। মুখে বন্ধুভাবাপন্ন হাসি, চোখের মণি কালো। শার্টের পকেট কলম দিয়ে ঠাসা। বেল্টে আটকানো চাবির গোছা হাঁটার ফাঁকে টুংটাং শব্দ করল।
জনের সঙ্গে হাত মেলাল ছেলেরা। বাঘার সঙ্গে টনি আর জন পরিচিত হতেই দুজনকেই ভেজা চুমো উপহার দিল ও।
কাজে লেগে পড়া যাক, আকাশের দিকে চেয়ে বলল জন। মাঝরাতে বৃষ্টি নামবে, বাজি ধরতে পারি। দড়ি-দড়া খুলতে শুরু করল ও।
রয় ওর গাড়িতে উঠে পড়ল।
আসার পথে হোটেলটা পড়েছিল, বলল ও। যাই, রুমটা দেখে নিই। গাড়ি চালিয়ে চলে গেল ও। হুডের তলা থেকে এবার সামান্য ধোয়া বেরোল।
আমরা হাত লাগাব? প্রশ্ন করল রবিন।
জন মৃদু হাসল ওর দিকে চেয়ে।
তবে তো খুবই ভাল হয়।
আমরা দড়িগুলো খুলছি, তোমরা গোটাও, বলল টনি। মাটিতে শুইয়ে রাখলেই হবে।
বাঘাকে দাঁড়াতে বলে কাজে লেগে পড়ল ছেলেরা। কমিনিট বাদে সব দড়ি-দড়া খোলা হয়ে গেল। জন আর টনি তেরপলটা টেনে মাটিতে নামাল।
এ কিশোর যখন দেখল কী আছে ওটার নীচে তখন লাফিয়ে পিছ হটল। ও সরাসরি চেয়ে রয়েছে এক টির্যানোসরাসের মাথার দিকে!
এ হচ্ছে টিরোন, হেসে উঠে বলল টনি। একসঙ্গে জুড়লে ওকে আরও দারুণ দেখায়।
ঢোক গিলল কিশোর।
কোথায় পেয়েছেন ওটাকে? প্রশ্ন করল।
আমরা কিনেছি, বলল টনি।
দাঁত বের করে হাসল মুসা।
ডাইনোসর স্টোর থেকে?
না, যে টিরোনকে তৈরি করেছে তার কাছ থেকে, বলল টনি। সে চেয়েছিল একটা ডাইনোসর থিম পার্ক করবে, কিন্তু মাঝখানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পেপারে অ্যাড দিয়েছিল। তাই দেখে আমরা। টিরোন আর ট্রাকটা কিনেছি।
ইস, ডাইনোসর দিয়ে আপনারা কী করবেন? প্রশ্ন করল রবিন।
টাকা তুলব, বলল টনি। জন আর আমি বাচ্চাদেরকে ডাইনোসর সম্পর্কে শেখাব। ছোটখাট একটা জাদুঘর দেয়ার ইচ্ছে আছে। আমাদের।
টিরোন হবে তার প্রধান আকর্ষণ, যোগ করল জন।
টিরোনকে প্রথম যখন বার্নে দেখি তখন এখনকার মত টুকরো টুকরো ছিল। আমি একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম ডেভেলপ করে ওকে দিয়ে চলাফেরা করাচ্ছি, কথা বলাচ্ছি। ওকে নিয়ে গোটা দেশ ঘুরে টাকা জোগাড় করি আমরা, ডোনেশন তুলি।
রয়ও কি টিচার নাকি? প্রশ্ন করল কিশোর।
না, ওর সাথে আমাদের ওয়াইয়োমিঙে পরিচয়। ও কাজ খুঁজছিল, তাই ওকে হায়ার করেছি আমরা। জানাল টনি। ও হোটেল রুম বুক করা, ফ্লায়ার বানানো, শো করার পারমিশন জোগাড় করা এসব কাজ করে। জাদুঘর তৈরি হলে সেখানেও কাজ করতে চায় ও।
ট্রাক বেড়ে উঠল জুন।
টনি, এটাকে জুড়ে ফেলি এসো, বলল ও।
কীভাবে জোড়েন? প্রশ্ন করল কিশোর।
সোজা। ইরেক্টর সেট দিয়ে মডেল বানানোর মতই, জানাল জন। ট্রাক বেডে রাখা এক বাক্স বড় নাট, বোল্ট আর তার দেখাল ও।
টিরোন কীসের তৈরি? রবিনের প্রশ্ন। ভারী নাকি?
না, জানাল টনি। জনের কাছ থেকে টির্যানোসরাসের লেজটা নিয়ে আলতো করে মেঝেতে শুইয়ে দিল।
বেশিরভাগটাই ফাইবার গ্লাস আর রবার। হাড়গুলো অ্যালুমিনিয়াম। দাঁত, পায়ের নখ আর চোখ প্লাস্টিকের।
ছেলেরা আলগোছে দুইঞ্চি লম্বা একটা দাঁত স্পর্শ করল।
দেখতে একদম সত্যিকারের মত! বলল মুসা।
সাবধান, কিছু কিছু কিনারা কিন্তু খুব ধারাল, বলল জন। হেসে সবুজ ব্যাণ্ড-এইডে মোড়া একটা আঙুল নাচাল।
রয়ের লাল গাড়ি হাজির হলে সবাই সেদিকে চাইল। রয় গাড়ির ভিতর থেকে এক গাদা কাগজ হাতে বেরিয়ে এল।
তোমরা হেল্প করবে? বলল ও। শহরে এই ফ্লায়ারগুলো ছড়িয়ে দিতে পারবে?
রবিনের হাতে ফ্লায়ারগুলো দিল রয়। সবচেয়ে উপরেরটায় চোখ রাখল ও। এক টির্যানোসরাসের ছবির নীচে এই কথাগুলো লেখা:
এসো, কথা-বলা টির্যানোসরাস টিরোনের সাথে পরিচিত হও!
হাই স্কুলের পিছনে, জুলাইয়ের ৪ তারিখে, দুপুরবেলা। মাথা পিছু এক ডলার করে দর্শনী।
তোমরা তিনজন ফ্রী পাবে, বলল টনি। রবিনের কাঁধের উপর দিয়ে চাইল।
খাইছে! বলল মুসা।
কাদেরকে দেব এগুলো? প্রশ্ন করল কিশোর।
যাকে খুশি, বলল রয়। যারা ডাইনোসর ভালবাসে।
রবিন ফ্লায়ারগুলো তিন ভাগ করল। সবাই একটা করে স্তূপ নিল।
আপনারা একটু বাঘাকে দেখে রাখবেন? প্রশ্ন করল কিশোর।
নিশ্চয়ই, জানাল রয়।
ছেলেরা ফ্লায়ার নিয়ে মেইন স্ট্রীটের উদ্দেশে এগোল।
.
এক ঘণ্টা বাদে ফিরে এল ওরা।
কালকে পুরো শহর টিরোনকে দেখতে আসছে! জানাল কিশোর।
খুব ভাল! ওকে এখন কেমন লাগছে তোমাদের? প্রশ্ন করল টনি।
পিছনের পা আর লেজের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে টিরোন। ওর দেহ আর লেজ একটা স্কুল বাসকে ছাড়িয়ে গেছে, ও লম্বায় প্রায় কিশোরদের বাড়ির সমান। বাঘা ওর একটা প্লাস্টিকের পায়ের নখ শুঁকছে।