ওটা কী? জিজ্ঞেস করল কিশোর। ক্যানভাস ডাফেলের এক পাশ দিয়ে ম্লান সবুজ কিছু একটা বেরিয়ে রয়েছে।
ব্যাণ্ড-এইড, বলল রবিন।
ছুঁয়ো না, সাবধান করলেন অফিসার। পকেট থেকে ছোট্ট এক প্লাস্টিকের ব্যাগ বের করলেন। কলমের নিব দিয়ে খুঁচিয়ে ব্যাগের ভিতরে ব্যাণ্ড-এইডটা ঢুকিয়ে, মুখ বন্ধ করে দিলেন।
জিনিসটা কার হতে পারে? অফিসার বললেন। প্লাস্টিক ব্যাগের উপর আলো ধরলেন।
রয় কালকে এরকম একটা ব্যাণ্ড-এইড পরেছিল, বলল রবিন। গাড়ির রেডিয়েটরে আঙুল পুড়ে গেছিল ওর।
আমি জনের আঙুলেও ওরকম একটা দেখেছি, জানাল মুসা।
আমরা সবাই এগুলো ইউয করি, বলল টনি। জিন্সের পকেট থেকে একটা ব্যাণ্ড-এইড বের করল ও।
টনির ব্যাণ্ড-এইড আর ব্যাগের ভিতরেরটা অবিকল একই রকম।
নয়
আপনারা সবাই এই একই ব্যাণ্ড-এইড ইউয করেন? অফিসার ফলেট টনিকে জিজ্ঞেস করলেন।
মাথা ঝাঁকাল টনি।
প্রায়ই আমাদের আঙুল কাটে, বলল টনি। তাই আমি এক বাক্স ব্যাণ্ড-এইড কিনেছি। সবাই কয়েকটা করে পকেটে রাখি।
অফিসার ফলেট ডাফেল ব্যাগটা এক ঝলক দেখে নিলেন।
ব্যাগটা শেষবার কার কাছে ছিল?
টাকাটা শুধু আমিই ব্যাগে রাখি, জানাল টনি। ব্যাগটা কম্পার্টমেন্টে রাখার সময় হয়তো আমার ব্যাণ্ড-এইড আঙুল থেকে খসে পড়ে গেছিল।
কিংবা হয়তো ব্যাগ চুরির সময় চোরের আঙুল থেকে ব্যাণ্ড-এইড খসে পড়েছে, বললেন অফিসার ফলেট। সেটা যে কেউই হতে পারে। টুনিকে খুঁটিয়ে লক্ষ করলেন।
কথা বলার আগে দুমুহূর্ত ভেবে নিল টনি।
আমাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন চুরিটা করেছে বলে মনে হচ্ছে, বলল ও। কিন্তু আমি তো চুরি করিইনি, জন আর রয় করেছে। বলেও বিশ্বাস করি না।
ডাকাত কি অন্য কেউ হতে পারে? কিশোর জবাব চাইল।
কিন্তু কে? প্রশ্ন করলেন অফিসার ফলেট। টনি আর জন ছাড়া আর কারও কাছে তো ডাইনোসরের চাবি থাকে না।
হ্যাঁ, কিন্তু জন আমার প্রিয় বন্ধু, বলল টনি।
ছোট ব্যাগ আর কলমটা পকেটে চালান করলেন অফিসার ফলেট।
জন আর রয়ের মধ্যে কার পক্ষে ডাফেল ব্যাগটা হাতানো সহজ? প্রশ্ন করলেন টনিকে।
মাটিতে চোখ রাখল টনি।
মনে হয় জন, বিড়বিড় করে আওড়াল। কাল রাতে ও টিরোনের পাশে ঘুমিয়েছে।
টনির কাঁধে একটা হাত রাখলেন অফিসার।
আমি জনকে নিয়ে আসছি, আপনি ততক্ষণ আমার অফিসে ওয়েট করুন, বললেন। ও কি এখনও ফায়ারওয়র্ক দেখছে?
মনে হয়, জানাল টনি।
টাকাটা আমাদের সেফে থাকবে, কথার খেই ধরলেন অফিসার ফলেট। একটু পরেই থানায় আপনার সাথে দেখা হচ্ছে।
হতচকিত উনি ঘুরে দাঁড়িয়ে মেইন স্ট্রীটের দিকে হাঁটা দিল। কমুহূর্ত পরে মিশে গেল রাতের আঁধারে।
তিন গোয়েন্দার দিকে চাইলেন অফিসার ফলেট।
চলো, তোমাদের গার্জেনরা হয়তো চিন্তা করছেন।
তিন গোয়েন্দা অফিসারকে অনুসরণ করে তাঁর ক্রুজারের ব্যাকসিটে উঠল। অফিসার মেইন স্ট্রীট ধরে গাড়ি চালালেন।
সুইমিং পুলের আকাশে তখনও রঙিন আলো ছড়াচ্ছে আতশবাজি। টেনিস কোর্ট আর বেসবল মাঠের মাঝখানে গাড়ি পার্ক করলেন অফিসার।
ছেলেরা তাঁকে বেসবল মাঠের ফেন্সের দিকে পা বাড়াতে দেখে, বড়দের খুঁজতে গেল।
কীরে, এতক্ষণ কোথায় ছিলি তোরা? প্রশ্ন করলেন মেরি চাচী। আমি তো ভেবেছিলাম এলিয়েনরা তোদেরকে কিডন্যাপ করেছে বুঝি।
ঘড়ি দেখল কিশোর। ওরা প্রায় আধ ঘণ্টা গরহাজির ছিল।
অফিসার ফলেটকে দেখা যাবে এরকম এক জায়গা বেছে নিয়ে বসল ওরা। অফিসার হেঁটে গেলেন জনের কাছে, দুজনে দাঁড়িয়ে কথা বলল মিনিট খানেক। অফিসার এবার জনকে নিয়ে তাঁর ক্রুজারের উদ্দেশে এগোলেন। গাড়িটা মেইন স্ট্রীটে উঠে হারিয়ে গেল।
জন কাজটা করেছে বিশ্বাস হয় না, বলল রবিন।
ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল মুসা।
টিরোনের এখন কী হবে তাই ভাবছি, বলল ও।
কী আর হবে, টনি আর রয় জনের জায়গায় অন্য লোক নেবে, বলল কিশোর।
রয় কোথায়? প্রশ্ন করল রবিন।
জনের সাথে ছিল না? পাল্টা জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, জানাল মুসা। শুধু জনকেই দেখলাম। রয় হয়তো হোটেলে ফিরে গেছে। ঝড়ের জন্যে কাল রাতে নাকি ঘুমোতে পারেনি।
কাল রাতের ঝড়ের কথা মনে পড়ল কিশোরের। শেডের মেঝেতে কাদাটে পদচিহ্নগুলোর কথাও মাথায় এল। আর কল্পনায় ভেসে উঠল সকালে, গাড়ির অ্যান্টেনা থেকে রয়ের ভেজা স্নিকার্স ঝোলার দৃশ্য।
আমার মনে হচ্ছে আমরা সবাই জনকে খামোকা দোষী ভাবছি, হঠাৎই বলে উঠল কিশোর। আমার ধারণা টাকাটা রয় চুরি করে গার্ডেন শেডে লুকিয়ে রেখেছিল!
কিন্তু ওর কাছে তো চাবি নেই, বলল মুসা।
আমার মনে হয় রয় জানত বৃষ্টি হলে জন বাইরে ঘুমোবে না। জন যখন বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ট্রাক ক্যাবে ঢুকেছে, সে সময় রয় ঢোকে টিরোনের ভিতরে।
কীভাবে? রয়ের কাছে তো চাবি নেই, আবারও বলল মুসা।
টনি যখন ঘুমোচ্ছিল তখন রয় ওর চাবিটা হাত করে, বলল কিশোর। রয় ডাফেল ব্যাগটা চুরি করে শেডে লুকিয়ে রাখে, তারপর দৌড়ে হোটেলে ফিরে যায়। নিশ্চয়ই শেড থেকে ব্যাগটা নিয়ে টাকা। হাতাত।
হঠাৎই শ্বাস টানল রবিন।
রয় এখন হয়তো ওখানেই আছে! বলল ও। আমরা যেভাবে সটকে পড়েছিলাম সেই একই কায়দা করেছে ও!
চলো! বলল কিশোর। মিস্টিক গ্রীনহাউসের পাশ কাটিয়ে, বুক নুকের পিছন দিয়ে, গোলাপ বাগানের উদ্দেশে ছুটে চলল ওরা। দস্তুরমত হাঁফাচ্ছে, শেডের থেকে গজ দশেক দূরে, গোলাপ ঝাড়ের পিছনে ঘাপটি মেরে বসল তিনজন। খোলা দরজা দিয়ে আলোর রেখা বেরিয়ে এসেছে।