সন্ন্যাসীর কাছ থেকে ফুলটা নিল রবিন।
ধন্যবাদ,বলল ও।
হুফ! হুফ! লেজ নাড়ল বাঘা।
হাততালি দিল রানী আর টিটো।
আমরা এখন বাড়ি ফিরতে চাই, বলল কিশোর। পথটা যদি চিনতে পারতাম।
চিন্তা কোরো না, বলল সন্ন্যাসী। তোমাদের গাছ-বাড়ি কাছেই রয়েছে। হাতির পাল বড় চক্কর কেটে হেঁটেছে। কাজেই তোমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলে সেখানেই ফিরে এসেছ।
সত্যি? বলে উঠল মুসা।
আকাশের দিকে তর্জনী তাক করল অন্ধ মানুষটি।
কাছের এক গাছে ওদের ম্যাজিক ট্রীহাউস।
খাইছে, অস্ফুটে বলল মুসা।
বলেছিলাম না চিন্তার কিছু নেই? বলল রবিন। তিন বন্ধু জুতো মোজা পরে সটান উঠে দাঁড়াল।
বিদায় নেওয়ার আগে সন্ন্যাসীর হাত স্পর্শ করল রবিন।
আপনাকে ধন্যবাদ, বলল ও। সব কিছুর জন্যে।
মুহূর্তের জন্য ওর হাতটা ধরে রইল সন্ন্যাসী। এবার একে একে কিশোর আর মুসার হাত ধরল। কিশোর সারা দেহে শীতল এক পরশ অনুভব করল।
ধন্যবাদ, সন্ন্যাসীকে বলল ও আর মুসা।
রানী আর টিটো কিচকিচ করে লম্বা বাহু বাড়িয়ে দিল। তিন বন্ধু লাঙ্গুর দুটোকে জড়িয়ে ধরল।
আমরা তোদেরকে ভুলব না, বলল রবিন।
তোরা দুর্দান্ত টুর গাইড, বলল কিশোর।
গুড-বাই, বলল মুসা।
এবার ওরা মসজিক ট্রী হাউসের উদ্দেশে পা বাড়াল। বাঘা ছুটল ওদের পিছন পিছন।
মইয়ের কাছে পৌঁছে বাঘাকে প্যাকে তুলে নিল কিশোর। এবার মই বাইতে লাগল।
জলপদ্মটা রয়েছে রবিনের কাছে।
ও আর মুসা কিশোরকে অনুসরণ করল।
ট্রীহাউসে প্রবেশ করে, পেনসিলভেনিয়ার বইটা তুলে নিল কিশোর। কিন্তু ইচ্ছা প্রকাশের আগে, জানালা দিয়ে বাইরে চাইল।
দূরে, দেখতে পেল মায়া আর তার সঙ্গী-সাথীরা নদীতে নাইছে।
লতা ধরে ঝুলছে রানী আর টিটো।
বাঘটা ঘাসে বসে রোদ পোয়াচ্ছে, চাটছে পায়ের ক্ষত।
হরিণ চরছে। গাছে-গাছে রঙিন পাখি।
সন্ন্যাসী গুহার সামনে বসে। ঠোঁটে স্মিত হাসি। মুখের চেহারায় প্রশান্তি।
বইটা খুলল কিশোর। ফ্রগ ক্রীক উডসের একটা ছবিতে আঙুল
রাখল।
আমরা ওখানে ফিরতে চাই, বলল ও।
ঘুরতে শুরু করল ট্রী-হাউসটা। বাতাস বইতে আরম্ভ করল। ক্রমেই জোরাল হচ্ছে বাতাসের বেগ। এবার সব কিছু নিথর। একদম স্থির।
দশ
চোখ মেলল কিশোর।
ট্রী-হাউসে চুঁইয়ে এসে পড়েছে পড়ন্ত বিকেলের ম্লান রোদ।
আচ্ছা, রবিন, তুমি জানলে কীভাবে বাঘা আমাদেরকে পাথরের পিছনে লুকাতে বলছে? প্রশ্ন করল মুসা।
শ্রাগ করল রবিন।
কেন জানি মনে হলো। মনে হয় ব্যাপারটা ওর চোখে পড়তে পেরেছিলাম।
তাই নাকি রে? বাঘাকে প্রশ্ন করল কিশোর।
খুদে কুকুরটা ঘাড় কাত করে ওর দিকে চেয়ে রইল।
চোখজোড়া নেচে উঠল বাঘার, ও যেন অনেক রহস্য জানে।
দারুণ দেখিয়েছিস তুই, বলল মুসা। তোর সামনে বুনো কুকুরও ফেল।
খুশিতে লেজ নাড়ল বাঘা।
ওকে প্যাকে তুলে নিল কিশোর। এবার একে একে দড়ির মই বেয়ে নেমে এল তিন বন্ধু।
মাটিতে নেমে, মুখ তুলে ট্রী-হাউসটাকে দেখল।
বাই! বলল রবিন।
হুফ! হুফ!
গাছ-গাছালির মাঝ দিয়ে পথ করে নিল ওরা।
গোধূলিবেলায় পাখিরা গান গাইছে। কাঠবেড়ালী খেলা করছে। গাছের ডালে।
ভারতের জঙ্গল থেকে ঘুরে আসার পর ফ্রগ ক্রীক উডসকে নিতান্ত নিরীহ দেখাল ওদের চোখে।
একটু পরেই, রাস্তায় উঠে এল ওরা। বাড়ির উদ্দেশে হাঁটছে, আলো মরে এল।
ভিতরে ঢোকার আগে সিঁড়ির ধাপে বসল তিন বন্ধু।
আমার দুটো প্রশ্ন আছে, বলল রবিন। সন্ন্যাসী যদি চোখে না-ই। দেখতে পান তা হলে ব্রীহাউসের কথা জানলেন কীভাবে? আর আমরা
যে সারা রাত হাতির পিঠে ঘুরেছি সেটাই বা বুঝলেন কী করে?
সোজা ব্যাপার। উনি দিব্য দৃষ্টিতে দেখেছেন। আর বনদেবতার কণ্ঠ তো আছেই, বলল কিশোর।
হুম, সায় জানাল রবিন।
চোখ বুজে কান পাতল ও।
রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি চলে গেল।
একটা কাঠঠোকরা ঠুকঠুক করছে। ঝিঁঝি ডাকছে।
একটা স্ক্রীন ডোর খুলে গেল।
হিরু চাচার খানসামা জন বলল, ডিনার খেতে এসো।
সব কটা শব্দ যেন একটাই শব্দ হয়ে কানে বাজল। বাড়ি ফেরার আনন্দে বুক ভরে শ্বাস টানল রবিন।