হাই তুলল কিশোর। রবিন আর মুসা কোথায়?
অন্য হাতিগুলো উজানে। শুড় দিয়ে পরস্পরকে পানি ছিটাচ্ছে।
জঙ্গলের কিনারে বাঘা, রানী আর টিটো। লম্বা ঘাস শুকল বাঘা। লাঙ্গুর দুটো ফুল খেল।
গুড মর্নিং! চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
ভাটিতে বড়, কালো এক পাথরের উপর বসে ও। খালি পা। পানিতে ভেজা।
হাই, বলল কিশোর। নামলে কীভাবে?
বাঘা আর আমি পিছলে কাদায় নেমে পড়েছি, জানাল রবিন।
তোমরাও চেষ্টা করো। তবে আগে স্নিকার্স আর ব্যাকপ্যাক ফেলে। দাও।
রবিন মায়ার পাশে চলে এল। গোড়ালি অবধি ডুবে গেছে কাদায়।
কিশোর জিনিসপত্রগুলো ছুঁড়ে দিল রবিনের দিকে। মায়ার রুক্ষ, কুঁচকানো চামড়ায় হাত বুলাল।
তোকে অনেক ধন্যবাদ, মৃদু কণ্ঠে বলল।
শুঁড় দিয়ে ওকে স্পর্শ করল হাতিটা।
হাতিটার শরীরের পাশ দিয়ে হড়কে নেমে গেল ও আর মুসা-প্রথমে দুপা নামাল-পড়ে গেল কাদার মধ্যে।
নদীতে ধুয়ে নাও, বলল রবিন।
ওদের ব্যাকপ্যাক আর জুতো পাথরের উপর রাখল ও। ওদিকে কিশোর আর মুসা ঠাণ্ডা পানিতে নামল।
হাত-পা ধুয়ে চারধারে নজর বুলাল কিশোর।
পালের বাদবাকি হাতির সঙ্গে যোগ দিয়েছে মায়া। সকালের কুয়াশায় অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে ওদেরকে।
চারদিকে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
হলদে-নীল পাখিরা ডানা মেলে দিয়েছে। ঝুলন্ত লতা দুলছে। মৃদুমন্দ বাতাসে। পানিতে ভাসছে বড় বড় ফুল।
এবার অদ্ভুত এক প্রাণী দেখতে পেল মুসা। দেখে মনে হলো একটা শিং আর দুটো কান বেরিয়ে এসেছে পানি থেকে। একটা কান একটা মাছি তাড়াল।
গণ্ডার! গণ্ডার! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
পানিতে নামল রবিন।
বইটা দেখি, বলল কিশোর।
প্যাকের কাছে তড়িঘড়ি চলে এল ও। টি-শার্টে হাত মুছল। ইণ্ডিয়া বুকটা বের করল।
পানি থেকে শিং বেরিয়ে আসা এক ছবি। পড়ল ও:
একশিঙা গণ্ডার বনের নদীতে গা ধোয়। গণ্ডাররা বিপজ্জনক নয়। কিন্তু যেহেতু ওরা চোখে ভাল দেখে না, তাই ভুল করে কখনও কখনও ধেয়ে আসে। জোরাল
শব্দ সাধারণত থামিয়ে দেয় ওদেরকে। আরও খানিকটা পড়ল কিশোর: ভারতীয় গণ্ডার বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। পোচাররা ওদের হত্যা করে ওষুধ আর গুড-লাক চার্ম হিসেবে শরীরের নানান অংশ বিক্রি করে।
কিশোর নোটবই বের করতে যাবে, এসময় পানিতে ছলাৎ করে বিরাট এক শব্দ উঠল।
খাইছে! বলে উঠল মুসা।
কিশোর মুখ তুলে চাইল।
নদী থেকে উঠে পড়েছে গণ্ডারটা। প্রাচীন এক জলাভূমির দানোর মত দেখাচ্ছে ওটাকে।
বাপ রে! বলে উঠল কিশোর।
খুদে খুদে চোখে রবিনের দিকে চাইছে গণ্ডারটা।
এবার ঘোত করে শব্দ করে মাথা নামাল। শিংটা সোজা রবিনের উদ্দেশে তাক করা।
জোরে শব্দ করো! চেঁচাল মুসা।
রবিন হাতে তালি দিয়ে চেঁচাল, আমরা শান্তি চাই!
থমকে গেল গণ্ডারটা। ঘোত করে উঠল। তারপর আবার ডুব দিল পানিতে।
হেসে উঠল রবিন।
আমি কিছু নোট নিয়ে নিই, বলল কিশোর।
হুফ! হুফ! বাঘার ডাক ভেসে এল বনভূমির কিনারা থেকে।
আমি বাঘাকে নিয়ে আসি, বলল রবিন।
নদী থেকে উঠে দৌড়ে গেল কুকুরটার কাছে। কিশোর ওর নোটবইতে একশিঙা গণ্ডার সম্পর্কে কিছু তথ্য টুকে নিল। এ কিশোর, মুসা, চেঁচাল রবিন। ছুটে আসছে ও, বাঘাকে পায়ের কাছে নিয়ে। জলদি এসো!
কী হয়েছে? প্রশ্ন করল মুসা।
ভয়ঙ্কর ব্যাপার! বলে উঠল রবিন।
সাত
কিশোর ব্যাকপ্যাকে জিনিসপত্র পুরে, মুসাকে নিয়ে রবিনকে অনুসরণ করল।
বাঘা ওদের কাছে কাছেই রইল। নার্ভাস ভঙ্গিতে কিচিরমিচির করছে আর লাফাচ্ছে রানী ও টিটো।
কিশোর কাছিয়ে আসতে, একটা বাঘকে দেখতে পেল। কাত হয়ে। পড়ে রয়েছে জানোয়ারটা। নিস্পন্দ। চোখ বোজা। সামনের একটা থাবা আটকা পড়েছে ফাঁদে।
মরে গেছে? মুসার জিজ্ঞাসা।
না, এখনও শ্বাস নিচ্ছে, জানাল রবিন। কাল রাতে মনে হয় আটকা পড়েছে। সেজন্যেই আমরা গোঙানির শব্দ পাচ্ছিলাম।
কী করা যায়? কিশোরের প্রশ্ন।
একে মুক্ত করতে হবে! বলল রবিন। বাঘটার দিকে এগোল।
দাঁড়াও! দাঁড়াও! ওকে চেপে ধরল কিশোর। ওটা মানুষখেকোও হতে পারে।
ও আটকা পড়ল কীভাবে? প্রশ্ন করল মুসা।
বই খুলল কিশোর।
পোচাররা ইস্পাতের ফাঁদ পেতে বাঘ ধরে, বলল ও। ব্যাপারটা বেআইনী। বাঘ ধরে মেরে ফেলে ওরা, তারপর নানা। অংশ বিক্রি করে দেয়। গণ্ডারের মত বাঘও অনেক কমে এসেছে। পোচারদের ঠেকানো না গেলে বাঘও একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ওকে আমাদের বাঁচাতে হবে, বলল মুসা।
বইটাতে ইস্পাতের ফাঁদের এক ছবি আছে। ওটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করল কিশোর। ফাঁদটা বিপজ্জনক আর মারাত্মক মনে হলো ওর কাছে।
ঠিক আছে, বলল ও। বন্ধুদেরকে ছবিটা দেখাল। আমি এই দিকটা চেপে ধরব। তাতে ফাঁদটা খুলে যাবে। তোমরা তখন ওর পা-টা টেনে বের করবে। পারবে না?
পারব, বলল মুসা। বাঘা, বস। খুদে কুকুরটা বসে পড়ল।
তিন বন্ধু বাঘটার দিকে এগোলে নীরবে ওদেরকে লক্ষ করতে লাগল লাঙ্গুর দুটো।
এমন রাজকীয় জানোয়ারের এরকম বিপদ দেখে কষ্ট পেল কিশোর। বাঘটার প্রকাণ্ড মাথাটা কমলা রঙের। গায়ে ডোরাকাটা দাগ।
ফাঁদে আটকা-পড়া পা থেকে রক্ত ঝরছে। ধীরে, নিঃশব্দে লিভারটায় চাপ দিল কিশোর। বার উঠে গেল বাঘের পা থেকে। বাঘটা তখনও ঘুমিয়ে। আস্তে আস্তে, পা-টাকে মুক্ত করল মুসা।
গেট ওয়েল, রবিন বলল ফিসফিস করে। বাঘটা নড়ল না। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল ওরা। পা টিপে টিপে পিছু হটছে।