গরম বাতাসে মিষ্টি একটা গন্ধ।
নীল ময়ূরেরা পেখম মেলে দিয়েছে।
এ গাছ থেকে ও গাছে উড়ে যাচ্ছে হলদে পাখির দল।
ফাঁকা এক টুকরো জমিতে লাল ফুল খাচ্ছে খুদে হরিণ।
খাইছে, ঠিক যেন স্বর্গ, বলে উঠল মুসা।
হ্যাঁ, কিন্তু বইয়ের নামটা ভুলো না। ওয়াইল্ড লাইফ বলতে ভয়ঙ্কর জীব-জন্তুও বোঝায়, সাবধান করল কিশোর।
একটা গাছের পাশ কাটানোর সময় মুসা লম্বা, গভীর দাগ দেখতে পেল। থমকে দাঁড়াল ও।
কী হয়েছিল এখানে? বলল।
রবিন শ্রাগ করে হেঁটে চলল।
প্যাক থেকে বইটা বের করল কিশোর। লম্বা, গভীর দাগ কাটা একটা গাছের ছবি খুঁজে পেল।
জোরে জোরে পড়ল: বাঘেরা গাছের গুঁড়িতে ঘষে ঘষে থাবার নখ ধারাল করে। যার ফলে বাকলে লম্বা লম্বা দাগ পড়ে।
খাইছে! মুসা ভয়মাখা চোখে গাছটার দিকে চাইল।
বলেছিলাম না? বলল কিশোর। এখানে বাঘ আছে। একটু আগেই এখান দিয়ে গেছে।
তিন
বলো কী? বাঘ! বলে উঠল রবিন।
কিশোর আরও পড়ল: বুনো বাঘ বছরে প্রায় পাঁচ হাজার পাউণ্ড কাঁচা মাংস খায়।
খাইছে! অস্ফুটে বলল মুসা। কণ্ঠে ভীতি। কিশোর পড়ে চলল: বাঘ সাধারণত হাতিদের ঘাঁটায় না। এবং বেশিরভাগ ছোট বিড়ালের মতন, বাঘও বুনো কুকুরদের এড়িয়ে চলে। ঘাউ করে উঠল বাঘা।
বুনো কুকুরদের, তোর মত পুঁচকেকে না, বাঘাকে বলল কিশোর। বাঘ তোকে এক মিনিটের মধ্যে সাবড়ে দেবে।
বাঘা গর্জন ছাড়ল আবারও। এসময় রানী আর টিটো ডাক ছাড়তে লাগল। কু-কু-কু! ময়ূরেরা ডাকল কক! কক! খুদে হরিণটা ছোট ছোট ডাক ছেড়ে মাটিতে ক্ষুর দাপাল।
কী ব্যাপার? প্রশ্ন করল রবিন। বাঘাকে প্যাকে তুলে নিই, বলল কিশোর।
তা-ই করল ও। বাঘা এখন নিরাপদ। প্যাক থেকে মাথা বের করে। রাখল কুকুরটা।
অল সেট? খুদে কুকুরটাকে প্রশ্ন করল কিশোর। বাঘা গর্জাল আবারও।
এবার গভীর, ভয়ঙ্কর এক গর্জন জবাব দিল। ওদেরকে ঘিরে ফেলেছে যেন।
ঘাড়ের চুল দাঁড়িয়ে গেল মুসার।
খাইছে!
বাঘ! বলল রবিন।
হুফ! হুফ! ডাক ছাড়ল বাঘা। রানী আর টিটো খিঁচিয়ে উঠল গাছ থেকে।
ওরা আমাদেরকে ওদের কাছে যেতে বলছে! বলল রবিন। এসো! একটা ডাল ধরে উঠে গেল।
ব্যাকপ্যাক চড়াতে গিয়ে হাত কাঁপতে লাগল কিশোরের। একটা ডাল ধরে মাটি থেকে উঠে পড়ল ও। নিজেকে তুলে নিল গাছে। মুসাও বসে রইল না।
বনভূমি আবারও কেঁপে উঠল গর্জনের শব্দে।
খাইছে!
কু-কু-কু! লাঙ্গুর দুটো গাছের আরও উঁচু ডালে উঠে গেল।
তিন বন্ধু ওদেরকে অনুসরণ করল।
গোধূলি নেমে এসেছে জঙ্গলে। কিশোর নীচের দিকে চাইল। মাটি দেখতে পাচ্ছে না। কান পাতল ও। রক্তহিম করা গর্জনটা শুনতে চাইছে। বাতাসে আতঙ্কিত জীব-জন্তুদের চিৎকার।
বাঘটা হয়তো চলে গেছে, বলল রবিন।
কিশোর চাইল রানী আর টিটোর দিকে। জড়াজড়ি করে রয়েছে। লাঙ্গুর দুটো। কালো মুখে ভয়ের ছাপ।
হয়তো যায়নি, বলল মুসা।
বাঘের সামনে না পড়ে জঙ্গল পার হব কীভাবে? প্রশ্ন করল নথি।
সেটাই তো ভাবছি, বলল কিশোর। আঁধার হয়ে আসছে। একটু পরে আমরা কিছুই দেখতে পাব না।
রানী আর টিটো ডাক ছাড়ল আবারও। গাছের গুঁড়ির নীচে আঙুল দেখাচ্ছে।
হুফ! হুফ! কিশোরের প্যাক থেকে ডেকে উঠল বাঘা।
ওরা কি বাঘটাকে দেখতে পাচ্ছে? প্রশ্ন করল কিশোর। বুক ধড়ফড় করছে। ডাল-পাতা ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না ও।
এবার, অনেক নীচে, নড়ে উঠল গাছের গুঁড়িটা।
খাইছে, সাপ! বলে উঠল মুসা।
গুঁড়িটাকে ঘিরে পাক খাচ্ছে সাপটা। গায়ে কালো কালো ছোপ। গাছের গুঁড়ির মতন মোটা!
অজগর, শ্বাসের ফাঁকে বলল কিশোর।
গুঁড়ি বেয়ে পাক খেয়ে উঠে আসছে অজগর।
বিষাক্ত নাকি? প্রশ্ন করল রবিন।
বইটা বের করল কিশোর। ম্লান হয়ে আসা আলোয় অজগরের একটা ছবি বের করল। জোরে জোরে পড়ল:
অজগর বিষাক্ত সাপ নয়।
যাক, বাবা, বলে উঠল রবিন।
এখনই এত খুশি হয়ো না, বলে আরও পড়ল কিশোর:
অজগর শিকারকে পিষে মারে।
তারপর আস্ত গিলে খায়। বড়সড় একটা হরিণকেও গিলে ফেলতে পারে অজগর।
খাইছে!
বিপদ! বলল কিশোর। জীবন-মৃত্যুর সমস্যা।
রানী আর টিটো কিচিরমিচির করছে তিন বন্ধুর উদ্দেশে।
পুরু লতা চেপে ধরল বানর দুটো। হেলে পড়ল পিছনে। এবার ঝাঁপ দিল গাছ থেকে!
ট্র্যাপি শিল্পীদের মত শূন্যে দোল খেল বানর দুটো। ঝোপ-ঝাড় আর লম্বা লম্বা ঘাসের উপর দিয়ে দোল খেয়ে পৌঁছে গেল অন্য এক গাছে।
তিন বন্ধুর উদ্দেশে ডাক ছেড়ে হাত নাড়ল।
ওরা চাইছে আমরা ওদেরকে কপি করি! বলল রবিন।
চার
রবিন একটা লতা চেপে ধরল।
কিশোর চাইল অজগরটার দিকে। প্রকাণ্ড সাপটা তখনও পাক খেয়ে উঠে আসছে গাছে। ওদের ডালের কাছে পৌঁছে গেছে প্রায়।
লম্বা শ্বাস টানল কিশোর। এবার একটা লতা চেপে ধরল সে-ও। মুসা ধরল অপর আরেকটা।
হেলে পড়ো, রানী আর টিটোর মত, বলল রবিন।
পিছনে হেলে পড়ল তিন বন্ধু।
এক, দুই, তিন-গো! বলে উঠল রবিন।
গাছ থেকে দোল খেল ওরা।
পেট খালি হয়ে গেছে কিশোরের। হু-হুঁ বাতাস বয়ে যাচ্ছে কানের পাশ দিয়ে। পাতা আর ডাল চাপড় মারল ওকে।
হঠাৎই, কানফাটা গর্জনে কেঁপে উঠল বনভূমি।
অগ্নিশিখার মত ঝোপ থেকে লাফিয়ে পড়ল একটা বাঘ!
হলদে চোখজোড়া ঝলসে উঠল জানোয়ারটার। বেরিয়ে পড়েছে। ধারাল ছোরার মতন দাঁত। অল্পের জন্য থাবা লাগল না ওদের কারও গায়ে!
আআআহহ! চেঁচিয়ে উঠল ওরা।