দূরবীন দিয়ে চোখ রাখছিল যে লোকটা, সে-ই তাহলে?
কাঁধ ঝাঁকাল মুসা, আর কে হবে।
ইস, আল্লাহ বাঁচিয়েছে! ওর কাঁধে হাত রাখল কিশোর, গুলি যে লাগেনি তোমার গায়ে! সর্বনাশ হয়ে যেত!
হ্যাঁ, আমি মারা যেতাম, কৃত্রিম গাম্ভীর্য নিয়ে বলল মুসা। এতিম হয়ে যেতে তোমরা।
হাসল কিশোর।
ওকে জিজ্ঞেস করল রবিন। তুমি কি জেনেছ?
কিছু চিঠি দেখেছি, তার মধ্যে দুটো চিঠি এসেছে কোন একটা কোম্পানি থেকে। লোগো দুটো এক। আরেকটা জিনিস অনুমান করছি-কেউ একজন। হুমকি দিচ্ছে সেভারনদের?
হুমকি; তারমানে ব্ল্যাকমেল?
জানি না। মিসেস সেভারন কি বললেন শুনলে না? ও আমাদের ছাড়বে না। এই ও-টা কে?
রবিন কোন জবাব দিতে পারল না। জিজ্ঞেস করল, লোগোটা দেখতে কেমন?
নোটবুক বের করে কলম দিয়ে তাতে এস এবং এইচ অক্ষর পেঁচিয়ে একটা ছবি আঁকল কিশোর। সেটা দেখিয়ে বলল, এই যে, এই রকম। দেখেছ কখনও?
মাথা নাড়ল রবিন।
মুসাও মাথা নেড়ে বলল, না। কি এঁকেছ, মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারছি না।
বোঝা যাবে, পরে, নোটবুকটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল কিশোর, এ সব ছাড়াও ওবাড়িতে আছে একটা ভূতুড়ে ঘর। সারা ঘরে জিনিসপত্র ছড়িয়ে রেখে যাওয়ার ব্যাপারটা ইঙ্গিত করে, ওদের ভয় দেখাতে চাইছে কেউ। ঘরটা ভূতুড়ে হলেও কাজটা ভূতের নয়, এটা ঠিক।
জোয়ালিনের গল্প তুমি বিশ্বাস করছ না তাহলে? ভুরু কোঁচকাল মুসা।
গল্প গল্পই। তবে ঘটনা যা ঘটছে, তাতে ভূতের হাত নেই, আছে জলজ্যান্ত মানুষের হাত। কেউ ঘরে ঢুকে জিনিসপত্রগুলো ছড়িয়ে ফেলে গেছে, কোন সন্দেহ নেই আমার তাতে।
তাহলে আমাদের জানতে হবে এখন, রবিন বলল, সেই শয়তান। লোকটা কে এবং কেন এই উৎপাত করছে।
ঠিক, মুসা বলল।
কিন্তু জানা যাবে কি করে?
সেকথায় পরে আসছি। তার আগে আরেকটা কথা বলে নিই-লোগো। ছাড়াও আরও কয়েকটা চিঠি দেখেছি আমি। ঠিকানার ওপর যে রকম হাতের লেখা, জ্যাকির বইতেও একই রকম লেখা দেখেছি। তারমানে…
চিঠিগুলো জ্যাকির কাছ থেকে এসেছে। কথাটা শেষ করে দিল রবিন। উত্তেজিত মনে হলো তাকে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। হ্যাঁ। পোস্টমার্কও দেখেছি। যেখান থেকে চিঠিগুলো এসেছে সেখানকার পোস্টমার্ক।
কোনখান থেকে?
লস অ্যাঞ্জেলেস।
লস অ্যাঞ্জেলেসের কোনখান থেকে?
তা কি করে বলব?
নিরাশ হলো রবিন। তাহলে আর লাভটা কি হলো! ঠিকানা না জানলে কিছু বের করা যাবে না।
জানব। শুরুতেই হাল ছেড়ে দিচ্ছ কেন? সবে তো তথ্য পেতে আরম্ভ করেছি আমরা।
পকেট থেকে চকলেট বের করে মোড়ক ছাড়াল মুসা। শান্ত থাকতে হলে চকলেটের বিকল্প নেই। একটা টুকরো ভেঙে রবিনকে দিল সে। আরেকটা কিশোরকে। বাকিটা নিজের মুখে ফেলে চিবাতে শুরু করল।
চকলেট মুখে দিয়ে হাসি ফুটল রবিনের মুখে।
হেসে মাথা ঝাঁকাল মুসা, দেখলে তো, মগজটা কেমন হালকা হয়ে। গেল? চকলেটের বিকল্প নেই।
চকলেট গালে ফেলে কিশোর বলল, বাড়ি যাওয়া দরকার। ওই পচা প্রবন্ধটা শেষ করে ফেলতে হবে। যত তাড়াতাড়ি ঘাড় থেকে নামানো যায় ততই মঙ্গল। হুহ, আর কাজ পেল না, পথিকদের নিয়ে প্রবন্ধ। নামটাও বাজে-ফুটপাথ এবং পথচারী!
সত্যি, মুখ বাঁকাল মুসা, পচা সাবজেক্টই। তুমি না নিলেই পারতে।
কি করব না নিয়ে যে ভাবে চাপাচাপি শুরু করল…
তা ঠিক। মিস্টার গোবরেডকে এড়ানোই মুশকিল। বাচলাম। আমি এ সব লেখালেখির মধ্যেও নেই, আমাকে গছাতেও পারবে না…
সাইকেলটা রাস্তায় এনে উঠে বসল কিশোর। রবিন আর মুসাও চড়ল যার যারটায়। এগিয়ে চলল আবার।
পথের মোড়ে হঠাৎ দেখা গেল সাদা একটা ভ্যান। টায়ারের আর্তনাদ তুলে তীব্র গতিতে ছুটে আসছে।
খাইছে! বলেই ব্রেক কষে গতি কমিয়ে ফেলল মুসা। ভ্যানটাকে দেখেছি!
কোথায়? কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল কিশোর।
বনের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। আমি আর মিস্টার সেভারন দুজনেই দেখেছি।
সাবধান হয়ে গেল কিশোর। মুসার কথা শুনে নয়, গাড়িটাকে অস্বাভাবিক দ্রুত ছুটে আসতে দেখে। সরু রাস্তায় আরও যে যানবাহন আছে কেয়ারই করছে না যেন গাড়িটা। গতি বাড়াচ্ছে বরং। কিছু বলতে যাচ্ছিল সে, এঞ্জিনের শব্দে চাপা পড়ে গেল।
সরে যাবার চেষ্টা করল। বেধে গেল মুসার সাইকেলে। হ্যান্ডেলবারটা ছাড়িয়ে আনার জন্যে টানাটানি শুরু করল কিশোর।
ছাড়ো, ছাড়ো! চিৎকার করে উঠল মুসা। লাফ দিয়ে নেমে কিশোরের হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে নিয়ে এল রাস্তার পাশে। আছড়ে পড়ল সাইকেল দুটো।
আরে! চিৎকার করে উঠল রবিন, ইচ্ছে করে চাপা দিতে চাইছে!
০৬.
কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াল কিশোর। তাকিয়ে আছে ভ্যানটার দিকে। গর্জন করে মোড়ের ওপাশে হারিয়ে যাচ্ছে ওটা। ফিরে তাকাল দুই সহকারীর দিকে। তোমাদের লেগেছে?
সামান্য, মুসা বলল। এই ভ্যানটাকেই জঙ্গলের মধ্যে দেখেছিলাম। হলো কি লোকটার? বনের মধ্যে গুলি করল, রাস্তায় বেরিয়ে চাপা দিতে চাইল! মাতাল নাকি? হাতের তালুর দিকে তাকাল সে। ঘষা লেগে ছড়ে গেছে।
উঁহু, মাথা নাড়ল কিশোর, আমার মনে হয় সেভারনদের বাড়ি থেকে আমাদের বেরোতে দেখেছে সে। কোন কারণে ভয় দেখাতে চাইছে আমাদের।
সাইকেলটা তুলল সে। ছিঁড়ে বেঁকে যাওয়া একটা স্পোক সোজা করল।
একই দিনে দুই দুইবার অল্পের জন্যে বাচলাম আজ, শুকনো কণ্ঠে মুসা। বলল। গোয়েন্দাগিরির কাজটা বড় বেশি বিপজ্জনক।