মনে মনে রাগে জ্বলে উঠল কিশোর। মহিলাটা মানুষ না, আসলেই ড্রাকুলা!
ভ্যানটা দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ, শাজিন বলছে। পেছনে রাখা জিনিসগুলো জলদি ফেলে দিয়ে আসুন।…হা হা, পাবেন টাকা, যা বলেছি পাবেন। কাজটা আগে হয়ে যাক..তবে মুখ বন্ধ রাখতে হবে আপনাকে। খুললে আপনিও বিপদে পড়বেন। আপনি আমাকে সহায়তা করেছেন, অস্বীকার করতে পারবেন। না। প্রমাণ করে দিতে পারব আমি। বন্দুকটার লাইসেন্সও আপনার নামে। পুলিশ জানতে পারলে আমাকে যেমন ছাড়বে না, আপনাকেও ছাড়বে না।
আস্তে মাথা তুলে তাকাল আবার কিশোর। এখনও এদিকে পেছন ফিরে আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে শাজিন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
ইনটারকমে আবার ভেসে এল তার কণ্ঠ। হ্যাঁ, মিস্টার সেভারন জায়গাটা বেচতে রাজি হয়ে গেলেই কাজ শুরু করে দিতে পারব আমরা। আবার টাকা আসতে আরম্ভ করবে। এখনকার টানাটানি আর থাকবে না।…কি বললেন? আবার হাসি। ঠিকই আছে, বুড়োটার উপযুক্ত শাস্তি…ভালভাবে বলেছিলাম, কানে তোলেনি…
পেছনে খুট করে শব্দ হতে ফিরে তাকাল কিশোর। দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন মিস্টার সেভারন। ছড়িটা তুলে ধরেছেন। রাগে লাল হয়ে গেছে চোখমুখ।
আরে করছেন কি! তাড়াতাড়ি বলল কিশোর, বসে পড়ুন, বসে পড়ুন! দেখে ফেলবে তো!
কিন্তু কানেও তুললেন না মিস্টার সেভারন। চিৎকার করে উঠলেন, শয়তান বেটি! আরেকটু হলেই বাড়িটা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল আমার…শয়তানি করে করে আমার স্ত্রীকে ভয় দেখিয়েছিস, আমার জায়গা তছনছ করেছিস, তোকে আমি ছাড়ব না!
গটমট করে গিয়ে এক ধাক্কায় দরজাটা খুলে ফেললেন তিনি। এত জোরে ধাক্কা দিলেন, দেয়ালের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল কাচ। পায়ের কাছে ছড়িয়ে পড়ল। লাগলে যে কেটে যেতে পারে, তোয়াক্কাই করলেন না। লাঠিটা নাড়তে নাড়তে গিয়ে ঢুকলেন শাজিনের অফিসে, শয়তান…
লাফিয়ে উঠে দৌড় দিল কিশোর, মিস্টার সেভারন!
পেছনের অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে জ্যাকি। কিশোরের আগেই গিয়ে বাবার হাত চেপে ধরল। বাবা, কি করছ! থামো না!
ঘুরে দাঁড়িয়েছে অগাস্ট শাজিন। গায়ে কালো জ্যাকেট, পরনে কালো। জিনস। লম্বা কালো চুল ছড়িয়ে পড়েছে কাঁধে। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে সাদা দাঁত। মনে হচ্ছে, যে কোন সময় বেরিয়ে আসবে। জানোয়ারের মত শ্বদন্ত-ড্রাকুলার যে রকম থাকে।
জ্যাকির ওপর চোখ পড়তে সরু হয়ে এল চোখের পাতা। ধমকে উঠল, এখানে কি? তোমার তো জেলে থাকার কথা। পেছনে তিন গোয়েন্দাকে দেখে বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল চোখ, সরু হলো আবার; মোমের মত ফ্যাকাসে চেহারায় কালো ছাপ পড়ল। হচ্ছেটা কি?
আপনি যে একটা মিথ্যুক, সেই প্রমাণ জোগাড় হয়ে গেছে আমাদের, রাগত স্বরে বলল জ্যাকি।
কিশোরের বগলে চেপে রাখা ফাইলের দিকে তাকিয়ে কালো চোখের মণি জ্বলে উঠল শাজিনের। পুলিশকে যখন বলব, চুরি করে আমার অফিসে ঢুকে কাগজপত্র তছনছ করেছ তোমরা, শীতল কণ্ঠে বলল সে, কে কার কথা বিশ্বাস করে, কে সত্যিকার বিপদে পড়ে, দেখা যাবে তখন।
এবার আর আপনাকে বিশ্বাস করছে না ওরা, কঠিন কণ্ঠে জবাব দিল কিশোর, আপনার বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ আছে আমাদের হাতে। সেভারনদের বাগান নষ্ট করতে ডিগার পাঠিয়েছেন, ওঁদের শান্তি নষ্ট করেছেন, নানা ভাবে যন্ত্রণা দিয়েছেন ওঁদের, ব্ল্যাকমেল করেছেন; অভিযোগের অন্ত নেই, কটা অস্বীকার করবেন? ফাইলটা নাড়ল সে। আপনার শয়তানির সমস্ত প্রমাণ রয়েছে এর মধ্যে।
হঠাৎ ডাইভ দিয়ে পড়ল শাজিন। ড্রয়ার খোলার শব্দ। আবার যখন উঠে দাঁড়াল সে, হাতে উদ্যত ছোট একটা পিস্তল। কিশোরের দিকে হাত বাড়াল। ফাইলটা দাও!
জ্বী-না! ফাইল সহ হাতটা পেছনে নিয়ে গেল কিশোর, আপনার কথা আর শোনা হচ্ছে না।
দেখো, বোকামি কোরো না! বরফের মত শীতল শাজিনের কণ্ঠ, ভাল। চাও তো, দাও বলছি!
দিয়ে দাও, কিশোর, মৃদুস্বরে বলল জ্যাকি। ওকে বিশ্বাস নেই। সত্যি সত্যি গুলি করে বসবে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফাইলটা দিয়ে দিল কিশোর।
ও-কে, ফাইলটা গোল করে পকেটে ঢুকিয়ে, এগিয়ে এসে মিস্টার সেভারনের হাত চেপে ধরল শাজিন। বুড়োটাকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি আমি। কেউ আমার পিছে পিছে আসার চেষ্টা করলে..
নিতে যদি না দিই? মুসা বলল।
বাধা দিয়ে দেখো খালি, ঠোঁটজোড়া ফাঁক হয়ে গেল শাজিনের। ভয়ঙ্কর লাগছে দেখতে।
মিস্টার সেভারনের হাতটা বাঁকিয়ে পিঠের ওপর নিয়ে এল শাজিন। পিস্তলটা অন্যদের দিকে নিশানা করে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল তাঁকে।
যেতে দিচ্ছ কেন! চিৎকার করে উঠল রবিন।
মাথা নেড়ে জ্যাকি বলল, কিছু করার নেই। বাধা দিলে যা বলছে তাই করবে। বরং অপেক্ষা করাই ভাল। বাইরে নিয়ে বাবাকে ছেড়ে দেবে।
মিস্টার সেভারনকে নিয়ে বেরিয়ে গেল শাজিন।
ডিকটেশন মেশিনটার কাছে এসে টেপের ক্যাসেটটা বের করে নিল কিশোর। পকেটে রেখে দিল।
ওটাতে কি আছে বুঝতে পারল জ্যাকি। নীরবে মাথা ঝাঁকাল।
কিন্তু বাইরে নিয়ে গিয়ে আপনার বাবাকে যদি কিছু করে! রবিন বলল।
এই সময় সিঁড়ি থেকে ভেসে এল গুলির শব্দ।
সর্বনাশ! বলেই দৌড় দিল জ্যাকি।
তিন গোয়েন্দাও ছুটল পেছনে।
দোতলার ল্যান্ডিং ফ্লোরে বসে আছেন মিস্টার সেভারন। বিমূঢ়ের মত তাকাচ্ছেন। হাতে শাজিনের পিস্তলটা। ছেলেদের দেখে বললেন, ল্যাং মেরে, ফেলে দিয়েছি। পিস্তলটা মাটিতে পড়ে আপনাআপনি গুলি বেরিয়ে গেল।