.
০২.
তারমানে ঘরটা দেখতে পারলে না!
কিশোরের মতই নিরাশ হলো মুসাও। বেড়ায় হেলান দিল। তিন গোয়েন্দার ওঅর্কশপে বসে আছে ওরা।
আরেকবার গেলেই হয়, রবিন বলল। বলে তো এসেছই।
হ্যাঁ। যাব।
আঁতকে উঠল মুসা, ওই ভূতের ঘর দেখতে!
হাসল কিশোর, এইমাত্র না দেখে আসতে পারলাম না বলে দুঃখ করলে?
ঝটকা দিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। আমি যাই। ফায়ারকে অনেকক্ষণ খাবার দেয়া হয়নি। খিদে পেলে চেঁচিয়ে, মাটিতে লাথি মেরে পাড়া মাত করবে। মা শেষে রেগে গিয়ে আমাকে সহ কানটি ধরে বের করে দেবে বাড়ি থেকে। পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে মোড়ক খুলল সে। মট মট করে দুই টুকরো ভেঙে তুলে দিল দুজনের হাতে। বাকিটা মুখে পুরে কিশোরের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল, তাহলে যাচ্ছই ভূত দেখতে?
হ্যাঁ।
কবে? কাল সকালে।
সকালে আমার গিটারের ক্লাস আছে, রবিন বলল। তারপর যাব লাইব্রেরিতে। দুপুরের পর হলে যেতে পারি।
ঠিক আছে। দুপুরের পরই যাব।
.
মুসা আর রবিন চলে যাওয়ার পর দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল কিশোর। ডেস্কের অন্য পাশে তার চেয়ারে এসে বসল। টেবিলে উপুড় করে ফেলে রাখা হয়েছে একটা বই, একটা রহস্য কাহিনী : দি মিস্টরি অভ দা রেড জুয়েলস। কিছুটা পড়ে ফেলে রেখে গিয়েছিল। তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করল।
শেষ হওয়ার বহু আগেই বুঝে ফেলল চোর কোন লোকটা। আর পড়ার কোন মানে হয় না। বিরক্ত হয়ে বইটা রেখে দিল। রহস্য কাহিনী পড়তে গেলেই এই অবস্থা হয় তার। আগেই বুঝে ফেলে। ব্যস, মজা শেষ।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলল সে। স্কুলের ম্যাগাজিনের জন্যে একটা আর্টিকেল লেখার কথা। হাতে সময় আছে। এখন বসতে পারে। কিন্তু লিখতে ইচ্ছে করছে না। একে তো ম্যাগাজিনের সম্পাদিকা কেরি জনসনের সঙ্গে বনাবনতি নেই, তার ওপর বিষয় যেটা ঠিক করে দেয়া হয়েছে সেটাও একেবারে পচা-শহুরে মানুষের ঘুরে বেড়ানোর প্রবণতা এবং ফুটপাথ সমস্যা। এ জিনিস নিয়ে যে কেউ ভাবতে পারে, ভাবলেও অবাক লাগে তার। তথ্য জানার জন্যে লাইব্রেরি থেকে খুঁজেপেতে একটা বই নিয়ে এসেছে সে। সঙ্গে রকি বীচের একটা ম্যাপ।
স্যারকে কথা যখন দিয়েছে লিখবে, লিখতেই হবে। খানিকক্ষণ উসখুস করে কাগজ-কলম টেনে নিল সে। এই সময় বাঁচিয়ে দিল তাকে টেলিফোন।
তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল, হালো!
কিশোর?
মিসেস সেভারনের গলা। সঙ্গে সঙ্গে কান খাড়া হয়ে গেল কিশোরের। ঢিলেঢালা ভাবটা চলে গেল। হ্যাঁ, বলছি!
কিশোর, ফিসফিস করে বললেন বৃদ্ধা, জোরে বলতে ভয় পাচ্ছেন যেন, একটা কথা…
বলে ফেলুন! উত্তেজনায় টানটান হয়ে গেছে কিশোরের স্নায়ু।
দুপুরে… ভীত মনে হচ্ছে মিসেস সেভারনকে। আসলে…
কথা শেষ করতে পারলেন না। একটা ধমক শুনতে পেল কিশোর।
এমন করছ কেন, জন! মিসেস সেভারনের কাতর কণ্ঠ শোনা গেল। কিশোরকে বললে ক্ষতি কি?
আবার শোনা গেল ধমক। মিস্টার সেভারন কি বললেন, রিসিভারে কান চেপে ধরেও বুঝতে পারল না কিশোর।
কিশোর, আবার লাইনে ফিরে এলেন মিসেস সেভারন, সরি, বিরক্ত করলাম। পরে কথা বলব…রাখি, গুডবাই।
দাঁড়ান দাঁড়ান, মিসেস সেভারন! চিৎকার করে উঠল কিশোর।
কট করে শব্দ হলো। রিসিভার নামিয়ে রাখা হয়েছে অন্যপাশে।
একটা মুহূর্ত নিজের হাতে ধরা রিসিভারটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। তারপর আস্তে করে নামিয়ে রাখল। ম্যানিলা রোডের ওই বাড়িটাতে রহস্যময় কোন ঘটনা যে ঘটছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই আর তার।
.
আরে এসো না, পায়ে জোর নেই নাকি তোমাদের! ফিরে তাকিয়ে বলল মুসা। সাইকেল থামিয়ে এক পা মাটিতে নামিয়ে দিয়েছে। সেভারনদের বাড়িতে চলেছে। আগের দিন বলেছিল যাবে না, কিন্তু রবিন আর কিশোর রওনা হতেই আর সঙ্গে না এসে পারেনি।
এত তাড়াতাড়ি চালাও কেন, বলো তো! কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল রবিন। তোমার গায়ে নাহয় জোর বেশি, আমাদের তো আর নেই।
বেশ গরম পড়েছে। মুখ লাল হয়ে গেছে তার।
হাসল মুসা। সেজন্যেই তো বলি, ব্যায়ামের ক্লাসে যোগ দাও। শরীরটাকে ফিট করে ছেড়ে দেবে।
কে যায় এত কষ্ট করতে…
তাহলে শরীরও ফিট হবে না।
কি বকবক শুরু করলে! সময় নষ্ট, প্যাডালে চাপ দিল কিশোর। চলো।
ম্যানিলা রোডে সেভারনদের বাড়ির সামনে পৌঁছল ওরা। সামনের রাস্তাটা বাদেও বাড়ির পাশ দিয়ে ঘাসে ঢাকা আরেকটা মোটামুটি চওড়া রাস্তা চলে গেছে একটা ছোট আপেল বাগানে। গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে আঙুরের ঝোপ। তার ওপাশে বুনো গাছপালার জঙ্গল। বাতাসে দুলছে ফুলে ভরা ডালগুলো।
কাঠের গেটের পাশে বেড়ার গায়ে সাইকেল ঠেস দিয়ে রাখল ওরা। বাগানের দিকের রাস্তাটা ধরে এগিয়ে গেল। সামনের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল।
খুলবে বলে তো মনে হচ্ছে না, তৃতীয়বার দরজায় টোকা দেয়ার পরেও সাড়া না পেয়ে বলল কিশোর। ভুল হয়ে গেছে। আমরা যে আসছি, ফোন করে জানিয়ে আসা উচিত ছিল।
বাইরে বেরিয়ে যায়নি তো? একটা ফুলের বেডের পাশে পঁড়িয়ে জানালা দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করল মুসা। পর্দা টানা থাকায় কিছুই দেখতে পেল না।
উঁহু, মাথা নাড়ল কিশোর, বাইরে যেতে পারে না বলেই খাবার দিয়ে যেতে হয় ওদের। বাইরে বেরোনোর সমস্যা আছে।
মুসার হাত ধরে টান দিল রবিন, সরে এসো। এভাবে তোমাকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখলে আরও ঘাবড়ে যাবে ওরা।