অ্যাই, জ্যাকি, দেখে যান! ডাক দিল সে। আপনার বাবাকে লেখা চিঠির কপি …একটা নিউজপেপার কাটিংও আছে। আদালতে আপনার কেসের রিপোর্ট।
এগুলো রেখেছে কেন? অবাক হলো রবিন।
দেখি? এগিয়ে এল জ্যাকি।
কিশোরও দেখার জন্যে মুসার পাশে এসে দাঁড়াল। রিপোর্টটা পড়ে বলল, পনেরোই অগাস্ট টাকাটা ফান্ড থেকে চুরি গেছে বলে লিখেছে কাগজওলারা।
হ্যাঁ, তাই তো দেখছি, মাথা ঝাঁকাল জ্যাকি। একটা ভুয়া ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানের নামে জাল দলিল সই করার অপরাধে অভিযুক্ত করেছে আমাকে শাজিন। চেকটা লেখা হয়েছে দশ তারিখে। কেউ আমার সই জাল করে স্বাক্ষর দিয়েছে ওটাতে। কে, নিশ্চয় বুঝতে পারছ।
কিন্তু ওই তারিখে তো আপনি ছিলেন না এখানে।
জানি। আমি তখন গ্রীসে। কিন্তু কোন সাক্ষী নেই আমার, যে সেটা প্রমাণ করবে।
আছে, কিশোরের কালো চোখের তারা উত্তেজনায় চকচক করছে।
ভ্রূকুটি করল জ্যাকি, কে?
আপনার ছবি…আপনাদের বাড়ির বসার ঘরের ম্যান্টলপীসে যেটা রাখা আছে।
মাথা নাড়তে লাগল জ্যাকি, কি বলছ বুঝতে পারছি না। বসার ঘরে ঢুকি না অনেকদিন।
তুই জেলে যাবার পর ডাকে এসেছে ছবিটা, মিস্টার সেভারন বললেন। অ্যাথেনসে তোলা হয়েছে।
অ্যাথেনসে?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর, পারথেননের সামনে দাঁড়ানো।
নাক-চোখ কুঁচকে ভাবতে লাগল জ্যাকি, মনে করার চেষ্টা করছে। উজ্জ্বল হলো মুখ। হা হা, মনে পড়েছে; একটা আমেরিকান মেয়ে তুলে দিয়েছিল ছবিটা। বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলাম ওকে। ভাবিইনি ছবিটা পাঠাবে সে।
আর তাতে… উত্তেজনায় গলা কাঁপছে কিশোরের, ছবির নিচে তারিখটা ছাপা হয়ে গেছে, ১০ অগাস্ট। আপনি জানেন, কিছু কিছু ক্যামেরায় ছবি তোলার তারিখটা ছাপা হয়ে যায়।
কিন্তু আমি তো কোন তারিখ দেখলাম না, মিস্টার সেভারন বললেন।
আছে, জবাবটা দিল এবার রবিন, ভালমত খেয়াল করেননি, তাই দেখেননি। আমি হাতে নিয়ে দেখছিলাম সেদিন, মাউন্ট থেকে পড়ে গেল; তুলে নিয়ে আবার বসানোর সময় দেখেছি একেবারে নিচে তারিখ ছাপা রয়েছে। কিশোরও জানে। তখন অবশ্য তারিখটা নিয়ে কোন কথা ভাবিনি আমরা। ছবিতে তারিখ ছাপা থাকতেই পারে, সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
স্বাভাবিক ব্যাপারটাই কাজে লেগে গেল এখন, কিশোর বলল। জোরাল সাক্ষী হয়ে দাঁড়াল।
হাসি ফুটল জ্যাকির মুখে। রবিনের কাঁধ চাপড়ে দিতে দিতে বলল, ভাগ্যিস হাত থেকে ফেলে দিয়েছিলে।
কিন্তু কথা হলো, মুসা বলল, মিসেস শাজিন এভাবে ফাসাতে গেল কেন আপনাকে?
প্রথম কথা, আমার ওপর একটা আক্রোশ আছে তার। একজন ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলরকে ঘুষ সেধেছে সে, সেই লোক আবার আমার বন্ধু। কয়েকটা বিল্ডিঙের প্ল্যান পাস করে দিলে তাকে অনেক টাকা ঘুষ দেবে বলেছে।
পুলিশকে জানাল না কেন আপনার বন্ধু?
কাঁধ ঝাঁকাল জ্যাকি। তাকে ব্ল্যাকমেল করছিল শাজিন। অল্প বয়েসে একটা অপরাধ করে ফেলেছিল-তেমন কিছু না, তবু বন্ধুটির সেটা নিয়ে মাথাব্যথার অন্ত নেই। সেটা জেনে গিয়েছিল শাজিন; ওই কথা মনে করিয়ে দিয়ে, পুলিশকে বলে দেবার ভয় দেখিয়ে দেখিয়ে তার কাছ থেকে কাজ আদায় করেছে। আমার বন্ধুটি জেলে যাবার ভয়ে শাজিনের কথা মানতে বাধ্য হয়েছে। বউ-বাচ্চা আছে তার… রেগে গেল জ্যাকি। তিক্তকণ্ঠে বলল, মহিলাটা এতই শয়তান, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে হেন দুষ্কর্ম নেই যা সে করতে পারে না। আমি যখন জেনে ফেললাম এসব খবর, আমাকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে চাইল সে। আমি ঘুষ নিতে রাজি না হওয়াতে গেল খেপে। শেষে আমাকেই দিল ফাঁসিয়ে।
আস্তে, সচকিত মনে হলো মিস্টার সেভারনকে, কে যেন আসছে!
সবাই শুনতে পেল সিঁড়িতে পায়ের শব্দ।
মিসেস শাজিন না তো! তাড়াতাড়ি দুই সহকারীকে নির্দেশ দিল কিশোর, আই, পেছনের অফিসটায় লুকিয়ে পড়া। আপনারাও আসুন।
দ্রুত পেছনের অফিসটায় চলে এল সবাই। ফাইলিং কেবিনেটের আশেপাশে ঘাপটি মেরে রইল। নিঃশ্বাস ফেলতেও ভয় পাচ্ছে। বাইরের ঘরে ঢুকল কেউ। হেঁটে গেল শাজিনের অফিসের দিকে। দরজা খুলল। সুইচবোর্ড অন করার শব্দ। রিসিভার তুলে নিয়ে ডায়াল করতে লাগল কেউ।
কে; দেখে আসি, ফিসফিস করে বলল কিশোর। আপনারা সব এখানেই থাকুন। আমি না ডাকলে নড়বেন না।
মাথা নুইয়ে পা টিপে টিপে সেক্রেটারির অফিসের দিকে এগোল সে। ডেস্কের ভেতরের দিকটায় এসে বসে পড়ল। দরজার কাচের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে, শাজিনের অফিসে ডেস্কের এককোণে ঝুঁকে রয়েছে কালো পোশাক পরা একটা মূর্তি। মুখটা উল্টোদিকে ফেরানো।
আস্তে হাত বাড়িয়ে সেক্রেটারির ডেস্কে রাখা ইনটারকমের সুইচটা অন করে দিল কিশোর। সঙ্গে সঙ্গে কানে এল ভারী নিঃশ্বাস আর অস্থির ভঙ্গিতে টেবিলে অধৈর্য আঙুল ঠোকার শব্দ।
দ্রুত ভাবনা চলেছে কিশোরে মগজে। বসে থেকেই টান দিয়ে ড্রয়ারটা খুলল। ডিকটেশন মেশিনটা পাওয়া গেল। সারিয়ে নিয়ে এসেছে। ভাল। কাজ হবে এখন। ইনটারকমের পাশে সেটা রেখে রেকর্ড লেখা বোতামটা টিপে দিল।
খিলখিল হাসির শব্দ।
আরে হ্যাঁ…হ্যাঁ, কথা শুনতে পাচ্ছে কিশোর, আজ সকালেই গিয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয় ওদের অত সাধের বাগানটার অর্ধেকটাই নেই আর, বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে…কৈফিয়ত? কোন সমস্যা নেই। স্রেফ বলে দেব, ড্রাইভার ভুল করেছে। ক্ষমাটমা চাওয়া যেতে পারে পরে, কিন্তু তাতে লাভ কিছু হবে না, বাগান আর ফেরত আসবে না… আবার হাসি। এ রকম ভুল হতেই পারে, তাই না?