ঠিক দেড় মিনিটের মাথায় দরজাটা খুলে দিল মুসা।
ভেতরে ঢুকে গেল কিশোর আর রবিন।
সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠতে শুরু করল তিনজনে। তিনতলায় শাজিন হ্যারিসনের অফিসের সামনে আসতে কথা শোনা গেল ভেতর থেকে। চাপা স্বরে কথা বলছে দুজন লোক।
মিস্টার সেভারনের গলা মনে হচ্ছে না? ফিসফিস করে বলল রবিন।
তাই তো, মুসা বলল।
শিওর হওয়ার একটাই উপায়, নিচের ঠোঁট কামড়াল কিশোর, ভেতরে ঢুকে পড়া।
.
অবাক হয়ে তিন গোয়েন্দার দিকে তাকালেন মিস্টার সেভারন আর তার সঙ্গী।
তোমরা!…তোমরা এখানে! মিস্টার সেভারন বললেন।
জবাব না দিয়ে কিশোর তাকিয়ে আছে তার সঙ্গীর দিকে।
আপনি জ্যাকি না? কিশোর বলল। কি করে এলেন?
হাসল জ্যাকুয়েল সেভারন যার ডাকনাম জ্যাকি। তাহলে তোমরাই তামাকে চিঠি লিখেছিলে।
কিন্তু এখানে এলেন… আবার জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল কিশোর।
মাথা নেড়ে তাকে থামিয়ে দিল জ্যাকি, সব বলার সময় নেই। একটা থাই বলি, তোমাদের চিঠি পেয়ে মনে হলো এখানে কি ঘটছে দেখে যাওয়া দরকার। বাবার দিকে ফিরল সে, বাবা, তোমাকে বলিনি, ওরা আমাকে শাজিনের শয়তানির কথা চিঠি লিখে জানিয়েছে।
ও, বাড়ি আসার তোর এটাই আসল কারণ। আমি তো ভেবেছি প্যারোলে ছাড়া পেয়ে আমাদের দেখতেই এসেছিস, বাবার কণ্ঠে মৃদু অভিমান।
দুটো কাজই করতে এসেছি, হাসল ছেলে। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে বলল, আমার হাতে বেশি সময় নেই। আজকেই সন্ধ্যার আগে গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে।
আপনারা ঢুকলেন কি করে এখানে? জানতে চাইল মুসা। সামনের দরজায় তো তালা লাগানো ছিল।
আবার হাসল জ্যাকি। এখানে চাকরি করতাম যে ভুলে গেলে? ডুপ্লিকেট একটা চাবি এখনও আছে আমার কাছে।
কিন্তু তোমরা এখানে কেন? আবার সেই প্রথম প্রশ্নটাই করলেন মিস্টার সেভারন। ঢুকলেই বা কি করে? আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলে নাকি? জ্যাকির মা ভাল আছে? কিছু ঘটেছে?
কি ঘটেছে, জানাল কিশোর।
রক্ত সরে গেল বৃদ্ধের মুখ থেকে। ডেস্কের কিনার খামচে ধরলেন তিনি। এখনি যাওয়া দরকার।
যেতে তো হবেই, তার আগে কিছু তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে নিই। ও অক্ষর নষ্ট হওয়া ওই টাইপরাইটার দিয়ে একটা চিঠিও লিখতে হবে, ড্রাইভারকে বোঝানোর জন্যে যে সে একটা মস্ত ভুল করতে যাচ্ছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুসা বলল, মাত্র দশ মিনিট সময় আছে আমাদের
এখনও দশ মিনিট আছে! বিশ্বাস হচ্ছে না রবিনের। আমার তো মনে হচ্ছে দশ হাজার বছর পার করে দিয়েছি। তবে সময় নিয়ে ভাবছি না, হেসে পকেটে হাত ঢোকাল সে। একটা চাবি বের করে দেখিয়ে বলল, ডিগারের ইগনিশন কী। চুরি করেছি।
ও, এ জন্যেই পেছনে পড়ে গিয়েছিলে তখন, হাসি ফুটল কিশোরের মুখেও। খবর লুকিয়ে রাখার দেখি তুমিও ওস্তাদ। যাকগে, কাজের কাজই করেছ একটা।
ড্রাইভারকে যে নির্দেশটা দেয়া হয়েছে, জ্যাকি বলল, তার একটা কপি নিশ্চয় এখানে আছে কোনখানে। যদিও অতটা অসাবধান ভাবতে পারছি না শাজিনকে। ধরা পড়ার মত প্রমাণ রেখে কাজ করার বান্দা নয় ও। আমি আর বাবা এতক্ষণ ধরে স্টেটমেন্ট খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম।
স্টেটমেন্ট? বুঝতে পারল না কিশোর।
হ্যাঁ, জমা-খরচের স্টেটমেন্ট। ইনকাম ট্যাক্স অফিসকে দিতে হয় যেটা। দেখতে চাইছিলাম, আমি যে সময় যে টাকাটা চুরি করেছি বলেছে শাজিন, সেই অঙ্কের টাকা সেই সময়ে অন্য কোন খাতে খরচ করেছে কিনা সে। ব্যাংক থেকে তখন কত টাকা তুলেছে, সেটা স্টেটমেন্টের সঙ্গে মিলিয়ে নিলেই প্রমাণ করে দেয়া যাবে সে-ই খরচ করেছে টাকাটা, আমি চুরি করিনি।
যদি সে সেই টাকার হিসেবটা স্টেটমেন্টে দেখিয়ে থাকে,তবে। অত কাঁচা কাজ করবে বলে মনে হয় না।
নিজের অ্যাকাউন্টের হিসেব রাখার জন্যে ব্যক্তিগত আরেকটা স্টেটমেন্ট বানাতে পারে, যাতে আসল হিসেবটা রাখবে।
তা পারে। কিন্তু সেটা কোথায়?
পাইনি। টাকা যে আমি চুরি করিনি, প্রমাণ করার আর কোন উপায় দেখতে পাচ্ছি না।
এখান থেকে চলে যাওয়া দরকার, মিস্টার সেভারন বললেন। শাজিন এসে যদি দেখে ফেলে আমাদের, সাংঘাতিক বিপদে পড়ব।
যা হয় হবে, জ্যাকি বলল, আবার খুঁজব। ওর বিরুদ্ধে প্রমাণ না নিয়ে আজ আমি বেরোচ্ছি না এখান থেকে।
.
১৪.
জ্যাকির কথামত প্রথমে ফাইলিং কেবিনেটগুলোতে খুঁজতে আরম্ভ করল ওরা।
সেক্রেটারির মেশিনে টাইপ করা যে কাগজ পাও, সব দেখো, কিশোর বলল। ভাঙা কী দিয়ে লেখা হয়েছে, এমন কোন না কোন চিঠি নিশ্চয় পাবে। নিয়ে নেবে সেটা প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে। তোমরা এদিকটায় দেখতে থাকো। আমি ওদিকটায় দেখছি।
কয়েক মিনিট পর হাসিমুখে বেরিয়ে এল কিশোর। হাতে একটা শর্টহ্যান্ড নোটপ্যাড আর দুই তা কাগজ। দুমড়ে ফেলে দেয়া হয়েছিল নিশ্চয় ময়লা ফেলার ঝুড়িতে, তুলে চেপেচুপে সোজা করে নিয়েছে।
সেক্রেটারির টেবিল থেকে একটা পেন্সিল তুলে নিল সে। আলতো করে প্যাডের একজায়গায় দাগ দিয়ে রবিনকে দেখিয়ে বলল, এই যে, রাস্তা চওড়া করার অর্ভারের খসড়া। দুমড়ানো একটা কাগজ দেখিয়ে বলল, আর এটা টাইপ করা অর্ডারের কপি। ভুল হয়েছিল বলে ফেলে দিয়েছে। টাইপরাইটারটা দিয়ে টাইপ করে দেখেছি, ও অক্ষরটা কোনমতেই ছোট হাতের করা যায় না, কী-টা নষ্ট, মারলেই ক্যাপিটল লেটারটা পড়ে…
এটা কিন্তু হঠাৎ বলে উঠল মুসা। একটা ফাইলিং কেবিনেটের একেবারে পেছনে লুকানো সবুজ একটা ফাইল বের করে আনল সে। খুলল।