ওদের মানে? আর কে আছেন মিস্টার সেভারনের সঙ্গে?
কিছুক্ষণ থেকেই ভারী একটা ইঞ্জিনের শব্দ কানে আসছিল। জোরাল হলো সেটা। উঠে দেখতে গেল মুসা। জানালার পর্দা সরিয়ে দেখেই চিৎকার করে উঠল, কিশোর, জলদি এসো!
দৌড়ে গেল রবিন। কিশোর গেল তার পেছনে।
গেটের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে একটা দৈত্যাকার জেসিবি ডিগার। ইচ্ছে করে ইঞ্জিনটাকে প্রচণ্ড গো-গো করাচ্ছে ড্রাইভার। এগজস্ট দিয়ে ভলকে ভলকে বেরোচ্ছে কালো ধোয়া। নীরব রাস্তাটার নীরবতা ভেঙে চুরমার করার বিকৃত আনন্দে মেতেছে যেন।
বার কয়েক গো-গোঁ করিয়ে ইঞ্জিনের গর্জন কমাল ডাইভার। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে তাকিয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড। ঠিকানা ঠিক আছে কিনা দেখল বোধহয়। তারপর পিছাতে শুরু করল বিশাল যন্ত্রটাকে। কিছুদূর পিছিয়ে গিয়ে নাক ঘুরাল কটেজের দিকে। ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করল।
খাইছে! বলে উঠল মুসা।
উদ্দেশ্যটা কি ওর বুঝতে পারলেও বিশ্বাস করতে পারছে না রবিন।
দেখছ না, ভাঙতে আসছে! গেট, বেড়া সব ভেঙে ঢুকে পড়বে বাগানে…
ঠেকানো দরকার ওকে! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। সচল হলো হঠাৎ। দরজার দিকে দৌড় দিল।
.
১৩.
কামানের গোলার মত সামনের দরজা দিয়ে ছিটকে বেরোল যেন তিন। গোয়েন্দা। হাত নাড়তে নাড়তে গেটের দিকে ছুটল।
এই, থামুন, থামুন!
কিন্তু ওদের চিৎকার কানেই গেল না যেন ড্রাইভারের।
সামনের দরজায় এসে দাঁড়ালেন মিসেস সেভারন। মুখে হাতচাপা দিয়েছেন। সম্মোহিতের মত তাকিয়ে আছেন দানবটার দিকে। হঠাৎ মুখ থেকে বেরিয়ে এল ছোট্ট চিৎকার। বুড়ো পা দুটো যেন আর ধরে রাখতে পারল না। শরীরটাকে। হাঁটু ভাজ হয়ে বসে গেলেন দরজার গোড়ায়।
দৌড়ে ফিরে গেল তিন গোয়েন্দা। হাত ধরে টেনে সরাল তাঁকে। দরজার ফ্রেমে পিঠ লাগিয়ে যতটা সম্ভব আরাম করে বসিয়ে দিল।
মিসেস সেভারন, কি হয়েছে আপনার? উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চাইল রবিন।
ঘন ঘন কয়েকবার ভারী দম নিলেন মিসেস সেভারন। না না, আমার কিছু হয়নি।
শোবেন নাকি? নিয়ে যাব ভেতরে?
না, আমি এখানেই থাকব।
ওদিকে প্রচণ্ড গর্জন তুলে বেড়ার কাছে চলে এসেছে ডিগারটা। বেড়া ভাঙতে প্রস্তুত।
সত্যি সত্যি ভাঙবে! এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না মুসা। পাগল হয়ে গেছে! না হুমকি দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে?
ও শয়তান মহিলাটার লোক হয়ে থাকলে, কিশোর বলল, সত্যিই ভাঙবে।
হাত নাড়তে নাড়তে আবার ছুটল সে। ড্রাইভারের চোখে পড়ল। ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে নেমে এল লোকটা। চিৎকার করে বলল, কি ব্যাপার? চাপা পড়ে মরার ইচ্ছে হলো নাকি?
জবাব না দিয়ে রাগত স্বরে প্রশ্ন করল কিশোর, আপনি কি করছেন?
দেখে বুঝতে পারছ না? মাথার হলুদ সেফটি হেলমেটটা ঠেলে পেছনে সরাল ড্রাইভার।
বুঝতে তো যা পারছি, বাগানটার সর্বনাশ করার ইচ্ছে হয়েছে আপনার।
কিশোরের পাশে এসে দাঁড়াল মুসা আর রবিন।
ওদের দিকে একবার করে তাকিয়ে আবার কিশোরের দিকে নজর ফেরাল লোকটা, বুঝলেই ভাল। ঘুরে আবার ক্যাবে উঠতে গেল।
দৌড়ে এসে তার হাত চেপে ধরল কিশোর। কে করতে বলেছে আপনাকে?
যে-ই হোক, বলেছে। অর্ডার।
কে দিয়েছে, সেটাই তো জানতে চাইছি।
ওভারঅলের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করল লোকটা। লোকাল কাউন্সিল।
দেখি তো? কাগজটা প্রায় ছিনিয়ে নিল কিশোর।
মুসা আর রবিনও দেখার জন্যে পাশে সরে এল।
কাগজটা রাস্তা বাড়ানোর পার্মিট। রাস্তা চওড়া করার অনুমতি রয়েছে। তাতে।
এ কথা তো নতুন শুনলাম, মুসা বলল লোকটার দিকে তাকিয়ে। যাদের বাড়ি তাদের আগে জানানো হয়নি কেন?
জানাবে কি করে? ব্যঙ্গ করে বলল কিশোর। ভুয়া কাণ্ড তো! সেই ড্রাকুলা বেটির কাজ; দেখছ না, ভাঙা টাইপরাইটার, ও অক্ষরটা ক্যাপিটল লেটারে।
তাই তো!
এ সব ধাপ্পাবাজি ছাড়ন! কাগজটা লোকটার হাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল কিশোর। বিদেয় হোন এখান থেকে!
তাই নাকি? রাগল না লোকটা। কার হুকুমে?
হুকুমের কথা বলা হচ্ছে না। কাউন্সিলের বাপেরও সাধ্য নেই জায়গার মালিকের সঙ্গে কথা না বলে, তার অনুমতি না নিয়ে রাস্তা বাড়ানোর হুকুম দেয়।
ওসব আমার জানার দরকার নেই। আমাকে লিখিত অর্ডার দিয়েছে, পালন করতে আমি বাধ্য। তোমার মত একটা ছেলেমানুষের কথায় ফিরে যাব আমি ভাবলে কি করে?
ছেলেমানুষ কাকে বলছেন! রেগে উঠল মুসা।
হাত তুলে তাকে থামার ইঙ্গিত করে কিছুটা নরম হয়ে বলল কিশোর, ব্যাপারটা যে ধাপ্পাবাজি, আমি প্রমাণ করে দিতে পারি। যদি একটু সময় দেন।
পকেটে কাগজটা রেখে মাথা নাড়ল ড্রাইভার, সরি। আমার কাজ আমাকে করতেই হবে। এদিকের বেড়া আর গাছগুলোর আশা ছাড়ো, ক্যাবে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিল। সামনের দিকে একটা লিভার ঠেলে দিতেই বেড়ে গেল ইঞ্জিনের শব্দ।
কিশোর, ওকে থামানো দরকার! চিৎকার করে উঠল মুসা।
মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুদিক থেকে দুজনের হাত চেপে ধরল রবিন। এসো, সামনে গিয়ে দাঁড়াই। দেখি, আমাদের মাড়িয়ে বেড়া ভাঙতে আসে কি করে।
গেটের বাইরে এসে বেড়ার সামনে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে গেল ওরা।
পাশে ঝুঁকে মাথা বের করল ড্রাইভার, কি হলো, সরো! আরেকটা লিভার ঠেলে দিল সে। ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করল ডিগার।
খাইছে! ঢোক গিলল মুসা। সত্যি সত্যি চাপা দেবে নাকি?
ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে মাথা নাড়ল কিশোর, এত সাহস হবে না।