আরও দুই ধাপ উঠে ঘাড় বাঁকা করে, কাঁধ ঠেকিয়ে ঠেলতে আরম্ভ করল মুসা। নড়াতে পারল না পাল্লাটা। তাকে সাহায্য করল রবিন আর কিশোর। ফাঁক হতে শুরু করল পাল্লা। ঠিক এই সময় পা ফসকাল রবিনের। ছোট্ট একটা চিৎকার বেরিয়ে এল মুখ থেকে। গড়িয়ে পড়তে শুরু করল।
তাড়াতাড়ি নেমে এসে তাকে ধরে তুলল মুসা। ব্যথা পেয়েছ?
সিঁড়ি থেকে পড়লে ব্যথা আর না পায় কে! তিক্তকণ্ঠে জবাব দিল রবিন। তবে তেমন কিছু না।
এই, দেখে যাও, ফিসফিস করে ডাকল কিশোর। জলদি এসো!
ডালা আরও ফাঁক করে ফেলেছে সে। সেই ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ছে লাল রঙের একটা জিনিস।
কার্পেটের কিনারটা না? দেখে বলল রবিন। ভূতের ঘরের নিচে রয়েছি। আমরা, কোন সন্দেহ নেই।
তারমানে জোয়ালিনের প্রেমিক চুরি করে এখান দিয়েই ঢুকত, মুসা বলল।
হয়তো, কিশোর বলল। পুরানো বাড়িটা তখন ছিল এখানে। সেলার থেকে সরাসরি এদিক দিয়েই ডাইনিং রূমে মদ নিয়ে যেত চাকর-বাকরেরা।
হ্যাঁ, রবিন বলল। সামার-হাউসের ভেতর দিয়ে এসে চোরও ঢুকেছিল সেদিন এপথেই।
দুই ধাপ নেমে এসে ডালাটা ছেড়ে দিল কিশোর। কিন্তু এটা যে আছে এখানে, জানল কি করে সে? জানার তো কথা নয়। সব সময় কার্পেটে ঢাকা থাকে।
নিশ্চয় পুরানো প্ল্যানটা থেকে। আমি যেটা কপি করে এনেছি। শাজিনের তো জানাই আছে। যে লোকটাকে পাঠিয়েছে নকশা দেখিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কোনখান দিয়ে ঢুকতে হবে…
আর সেজন্যেই, কিশোর বলল, কার্পেটটা অমন অগোছাল হয়ে ছিল। মিসেস সেভারন জানতেন পেরেক দিয়ে আটকানো ছিল..ঠিকই জানতেন; তার তো আর জানার কথা নয়, তথাকথিত ভূতটা সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসে নিচ থেকে ঠেলে ট্র্যাপ-ডোর খুলেছে, ওপরে বিছানো কার্পেটটাও পেরেক থেকে ছুটে গেছে ঠেলা লেগে।
চমৎকার! ভূত রহস্যের সমাধান হয়ে গেল। চলো, সেভারনদের জানাইগে।
এদিক দিয়েই যাব?
দরকার কি ঠেলাঠেলি করার।
সামার-হাউস দিয়ে আবার বাইরে বেরোল ওরা। উজ্জ্বল রোদে চোখ ধাধিয়ে গেল।
বাড়ির পাশ ঘুরে আসার আগেই একটা গাড়ির দরজা লাগানোর শব্দ হলো। স্টার্ট নিল এঞ্জিন। দৌড় দিল কিশোর। বাড়ির সামনের দিকটায় পৌঁছে দেখল মিস্টার সেভারনের গাড়িটা বেরিয়ে যাচ্ছে গেট দিয়ে।
কার সঙ্গে গেলেন? অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মুসা।
ভ্রুকুটি করল কিশোর। গাল চুলকাল, সেটাই তো বুঝতে পারছি না…এমন কে এল, সাতসকালে বের করে নিয়ে যেতে পারল তাকে? গাড়িটাও নিশ্চয় ড্রাইভ করছে ওই লোকই।
আচ্ছা… কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল রবিন। চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
কি বলতে চাও?
মিসেস ড্রাকুলা লোক পাঠিয়ে কিডন্যাপ করাল না তো?
তা কি করে হয়… বলতে গেল মুসা।
কিন্তু সচকিত হয়ে উঠেছে কিশোর। জলদি এসো! মিসেস সেভারনের কি অবস্থা করেছে কে জানে!
জোরে জোরে সামনের দরজা ধাক্কাতে শুরু করল কিশোর।
তাকে অবাক করে দিয়ে খুলে গেল দরজাটা।
মিসেস সেভারনও অবাক, তোমরা! এই সাতসকালে তোমরা কোত্থেকে?
অনেক আগেই এসেছি আমরা, জবাব দিল কিশোর। কিন্তু আপনার স্বামী কোথায় গেলেন?
অস্বস্তি দেখা দিল মিসেস সেভারনের চোখে। গেছে..! দুধের বোতলগুলো তুলে নিলেন তিনি। এসো, ভেতরে এসো। তোমাদের এই ছিরি কেন? নর্দমায় নেমেছিলে নাকি?
নর্দমায় না, সেলারে। রাস্তার দিকে ফিরে তাকাল কিশোর। কার সঙ্গে গেলেন মিস্টার সেভারন? মিসেস সেভারন বলতে চাইছেন না কেন? তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল, কিডন্যাপ করা হয়নি সেভারনকে।
আবার মিসেস সেভারনের দিকে ঘুরল সে। কাল রাতে ফোন করার অনেক চেষ্টা করেছি। নষ্ট নাকি?
মাথা ঝাঁকালেন মিসেস সেভারন। হ্যাঁ। আজ ঠিক করে দেবে বলেছে।
.
সামার-হাউস দিয়ে ঢুকে কি পাওয়া গেছে শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মিসেস সেভারন। বললেন, কিছুই জানতাম না আমরা। জানবই বা কি করে? কার্পেটটা কি কখনও তুলেছি।
এ বাড়ির পুরানো প্ল্যানটাও দেখেননি?
না। এ সব কাজ জ্যাকিই করত।
কিন্তু আসল দলিলগুলো নিশ্চয় আছে আপনাদের কাছে। সেদিন সেই। লোকটা ওগুলোই নিতে এসেছিল।
বোধহয় আছে। অনেক পুরানো কিছু দলিল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেখেছি জ্যাকিকে। বলত, এখানকার পুরানো ইতিহাস জানার চেষ্টা করছে। তবে সবই…সবই…. ওই ভয়ঙ্কর মেয়েমানুষটা এসে জ্বালানো শুরু করার আগে।
বার বার দেয়ালের ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছেন তিনি। চেহারায় উদ্বেগের ছাপ। ব্যাপারটা লক্ষ করল কিশোর। বৃদ্ধার দিকে ঝুঁকে বলল, আপনি সত্যি বলছেন মিসেস সেভারন, আপনার স্বামী কোন বিপদে পড়েননি?
লম্বা করে শ্বাস টানলেন মিসেস সেভারন। এবারেও জবাব দিলেন না কিশোরের প্রশ্নের। বড় চিন্তা হচ্ছে…হুট করে এভাবে চলে গেল…আবার না কোন বিপদে জড়ায়…
কোথায় গেলেন?
মেয়েলোকটার অফিসে… বলেই চুপ হয়ে গেলেন মিসেস সেভারন। নাহ তোমাদের এ ভাবে বলে দেয়াটা ঠিক হচ্ছে না…
মিসেস শাজিনের অফিসে! কেন?
বিরক্তর চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কত আর সহ্য করবে। আজ একটা হেস্তনেস্ত না করে ছাড়বে না বলেছে। দরকার হয় পুলিশের কাছেই যাবে। ওরা বিশ্বাস করবে না বলেই এতদিন যায়নি। …সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে ওই শয়তান বেটিটার অত্যাচার।
রুমাল বের করে নাক ঝাড়লেন মিসেস সেভারন। ওদের যেতে নিষেধ ন্ট করেছিলাম, কিন্তু পারলাম না। পুলিশ আগেও বিশ্বাস করেনি। আমাদের কথা, এখনও করবে না। শুধু শুধু আমাদের ছেলেটাকে… কান্নায় বুজে এল তাঁর কণ্ঠ।