চলে এসেছেন, রিসিপশনিস্ট বলল। এত সকালে আসবেন তা তো বলেননি।
হ্যাঁ, ডরোথি, আসতে হলো, শোনা গেল অস্বাভাবিক তীক্ষ্ণ একটা কণ্ঠ। জরুরী আরও কয়েকটা চিঠি লিখতে হবে। ডিকটেশন মেশিন আর কম্পিউটারটা এসেছে?
না, রেডি হয়নি এখনও। কাল গিয়ে আনতে বলেছে।
তাই নাকি। তাহলে তো মুশকিল হয়ে গেল…
নিশ্চয় অগাস্ট শাজিন। দেখার জন্যে দরজা ফাঁক করে উঁকি দিল রবিন। কালো জিনস আর কালো শার্ট পরা লম্বা এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে শাজিনের অফিসের সামনে। একটা হাত দরজার নবে। কুচকুচে কালো চুল। চোখও তেমনি কালো। গায়ের রঙ মোমের মত সাদা। ঠোঁটে টুকটুকে লাল লিপস্টিক। হরর ছবির ভ্যাম্পায়ারের কথা মনে পড়িয়ে দেয়-ড্রাকুলার স্ত্রী।
মাথার চুল সরানোর জন্যে হাত তুলল শাজিন। হাতের তালুতে প্লাস্টার। দেখতে পেল রবিন। যখম-টখম হলে এ রকম প্লাস্টার লাগায়।
ডরোথি, এক কাপ কফি দেবে? আর আগের চিঠিগুলো নিয়ে এসো তো। একটু আমার অফিসে। কিছু অদল-বদল দরকার।
অফিসে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল শাজিন। আর দেরি করল না রবিন। বেরিয়ে এল পেছনের ঘর থেকে।
পেয়েছ? হেসে জিজ্ঞেস করল ডরোথি।
হ্যাঁ, নিচুস্বরে জবাব দিল রবিন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কয়েকটা কাগজের কপিও করে নিয়েছি। দেখতে চান?
ডরোথি দেখতে না চাইলেই খুশি হয় রবিন। ভয় পাচ্ছে, কোন সময় বেরিয়ে চলে আসে শাজিন, দেখে ফেলে তাকে। আপাতত ওর সামনে পড়তে চায় না। মহিলাকে দেখেই ওর সামনে যাওয়ার চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিয়েছে সে। থাক তো সাক্ষাৎকার নেয়া।
হাত নাড়ল ডরোথি, লাগবে না। নিয়ে যাও।
আরও একবার ধন্যবাদ আর সেই সঙ্গে গুডবাই জানিয়ে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে এল রবিন। দ্রুতপায়ে নিচে নামতে শুরু করল।
বাইরে বেরিয়ে ঘড়ি দেখল। অনেকক্ষণ লাগিয়ে দিয়েছে। চিন্তায় পড়ে গেছে নিশ্চয় মুসা আর কিশোর।
.
ম্যানিলা রোডে উন্নয়নের প্ল্যানটা পাওনি? জানতে চাইল কিশোর। তিন গোয়েন্দার ওঅর্কশপে বসেছে ওরা।
না, মাথা নাড়ল রবিন। ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের অফিসেই রয়ে গেছে হয়তো এখনও। রিসিপশনিস্ট বলল, তিনদিনের মধ্যে জমির মালিকানার দলিল জমা দিতে না পারলে ওদের অনুমতিপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
এ জন্যেই মরিয়া হয়ে উঠেছে ড্রাকুলাটা, মুসা বলল। রবিনের মুখে শাজিনের বর্ণনা শুনে প্রথমে তার সন্দেহ হয়েছিল, মহিলাটা আসল ড্রাকুলাই নয় তো? তবে পরে মনে পড়েছে, আসল ভ্যাম্পায়াররা দিনের আলোয় বেরোতে পারে না। শাজিন বেরিয়েছে, তারমানে সে আসল ভ্যাম্পায়ার নয়, মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার-নইলে সেভারনদের মত এত নিরীহ বুড়ো মানুষকে অত্যাচার করতে পারে! তবে তার মতে আসল ভ্যাম্পায়ারের চেয়ে মানুষ-ভ্যাম্পায়াররা অনেক বেশি খারাপ।
ছিড়ে আনা নোটিশটা দেখল কিশোর। সেভারনদের হুমকি দিয়ে লেখা নোটটা বের করল। দুটোতেই ও অক্ষরটা অবিকল এক রকম।
শাজিনের টেবিলে একটা পুরানো টাইপরাইটার দেখেছি, রবিন জানাল, নিশ্চয় ওটা দিয়ে টাইপ করেছে। ওদের কম্পিউটার বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে বা কোন কিছু, পচা টাইপরাইটার দিয়ে তাই চিঠি টাইপ করেছে।
হু! মাথা দোলাল কিশোর। তাহলে রান্নঘরের মেঝেতে জুতোর ছাপও দেখেছ?
হ্যাঁ। যে লোক রাতে এসে সেভারনদের বাগান তছনছ করেছে, সেই লোক ঢুকেছিল শাজিনের অফিসের রান্নাঘরে, জ্যাকেট লুকিয়ে রেখেছে আলমারিতে।
এক মুহূর্ত চুপচাপ নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটার পর হঠাৎ জিজ্ঞেস করল কিশোর, সেভারনদের কটেজের নকশাটা কপি করে এনেছ কেন?
কৌতূহল হলো, তাই। ভাবলাম, নকশা দেখে সেলার আর ভূতুড়ে ঘরটায় খোঁজাখুঁজি করতে সুবিধে হবে।
হু! চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। মুহূর্তে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে, হারিয়ে গেছে গভীর চিন্তায়।
১১.
পরদিন সকালে ফায়ারের পিঠে চেপে সেভারনদের বাড়ি রওনা হলো মুসা।
সুন্দর সকাল। মাঠ আর ঝোপঝাড় থেকে ওঠা ভোরের কুয়াশায় সবে প্রবেশ করতে আরম্ভ করেছে সোনালি রোদের বর্শা। দৃপ্ত পায়ে হেঁটে চলেছে পেশীবহুল, খয়েরী রঙের ঘোড়াটা।
সামনে ঝুঁকে চকচকে গলাটায় চাপড়ে দিয়ে বলল মুসা, কতদিন ঠিকমত দৌড়াই না, নারে? জায়গাই নেই সেরকম। আজ পেয়েছি। মনের সুখে দৌড়ে নেব।
যেন মুসার কথা বুঝে সায় দিতেই মাথা ঝাড়ল ফায়ার।
কটেজের পাশ দিয়ে ওকে নিয়ে বনের দিকে এগোল মুসা। নেচে নেচে এগোচ্ছে ফায়ার। নাক উঁচু করে দুই ফুটো ছড়িয়ে তাজা বাতাস টানল বুক বেভরে, অস্থির ভঙ্গিতে মাথা ঝাড়ল আরেকবার
অত অস্থির হচ্ছিস কেন? আদর করে ওর গলায় হাত বুলিয়ে দিল মুসা, জায়গামত আসিনি এখনও। শক্ত করে জিনের ওপর চেপে বসল সে। লাগামটায় আঙুলের চাপ শক্ত করে পা টান টান করে দিল রেকাবে। দৌড়ানোর জন্যে তৈরি হচ্ছে।
গেট পেরিয়ে এসেই হাতে পেঁচিয়ে খাটো করে ফেলল লাগামটা। জোরে চলার ইঙ্গিত করল ফায়ারকে। মুসাদের বাড়ি থেকে হেঁটে এসে ইতিমধ্যেই গা গরম হয়ে গেছে ঘোড়াটার। মুহূর্তে দৌড়ানো শুরু করল।
দক্ষ ঘোড়সওয়ারের মত ওকে নিয়ন্ত্রণে রাখল মুসা। বেশি জোরেও ছুটল; বেশি আস্তেও না। হেসে বলল, ওভাবে পেশী ফোলাচ্ছিস কেন? উড়তে চাস? থাক, পঙ্খীরাজ হওয়ার দরকার নেই। যেভাবে বলছি সেভাবেই চল।