মেঝেতে চোখ পড়ল ওর। আটকে গেল দৃষ্টি। ধুলোয় ঢাকা ময়লা। মেঝেতে জুতোর ছাপগুলো চেনা চেনা লাগল। কোথায় দেখেছে? মনে পড়ল। সেভারনদের বাগানে। জুতোর সোল অবিকল এক রকম। গোড়ালিতে গোল গোল চক্র। রাতের বেলা চুরি করে যে লোক বাগানে ঢুকেছিল সে এসেছিল এ ঘরে! বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবু চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে অকাট্য প্রমাণ। একই ডিজাইনের জুতো অনেকেই পরতে পারে ভেবে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করল সম্ভাবনাটা, কিন্তু খুঁতখুতি গেল না মন থেকে। এককোণে। একটা কাঠের আলমারি দেখে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। ভেতরে হুক থেকে ঝুলছে একটা কালো রঙের জ্যাকেট। ঘরের একমাত্র জানালাটায় উঁকি দিয়ে বাইরে একটা ফায়ার এসকেপ দেখতে পেল।
এ ঘরে আর কিছু দেখার নেই। তবে যা দেখেছে, অনেক। বেরিয়ে এল রান্নাঘর থেকে। পাশে দুটো দরজার পরে আরেকটা দরজা দেখল, পাল্লার গায়ে লেখা রয়েছে অফিস।
দম নিয়ে আস্তে করে টোকা দিল দরজায়। সাড়া এল ভেতর থেকে, আসুন।
পাল্লাটা ফাঁক করে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে বলল সে, হাই।
টেলিফোনের রিসিভার কানে ঠেকিয়ে বসে আছে এক তরুণী, রিসিপশনিস্ট। রবিনের দিকে তাকিয়ে নীরবে হাসল, চেয়ার দেখিয়ে বসতে ইশারা করল।
হাতের ফাইলটা কোলের ওপর রেখে নিরীহ ভঙ্গিতে বসে পড়ল রবিন। চারপাশে তাকাতে গিয়ে চোখ পড়ল পাশের একটা দরজার ওপর, তাতে নেমপ্লেটে লেখা অগাস্ট শাজিন-এর নাম। সামান্য ফাঁক হয়ে আছে পাল্লাটা। টেবিলে রাখা একটা টাইপরাইটারের খানিকটা দেখা যাচ্ছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, ফোনে কথা বলছে তরুণী। কাল রেডি হবে? হবে তো?…ঠিক আছে, আমি নিজেই আসব নিতে…না ভাই, তাড়াতাড়ি দরকার। বড় অসুবিধার মধ্যে আছি। শর্টহ্যান্ডে ডিকটেশন নিতে নিতে আর ভাঙা টাইপরাইটার দিয়ে টাইপ করতে করতে জান শেষ হয়ে গেল।
ডেস্কে রাখা কতগুলো কাগজ দেখতে পেল রবিন। শর্টহ্যান্ডে কি সব লেখা।
ধন্যবাদ, বলে ফোনটা নামিয়ে রাখল তরুণী। রবিনের দিকে তাকাল, বলো?
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল রবিন। মনে মনে গুছিয়ে নিল কথাগুলো। বলল, আমার নাম রবিন মিলফোর্ড। স্কুলের একটা প্রোজেক্টের জন্যে তথ্য জোগাড় করতে এসেছি আমি। স্থানীয় কন্ট্রাক্টর আর বিল্ডাররা আগামীতে শহরটাকে উন্নত করার জন্যে কি কি প্ল্যান করেছে সে-সম্পর্কে জানতে চাই। আগামী দশ বছরে কি কি করছে তারা।
রবিনের কথা শুনে খুশি মনে হলো রিসিপশনিস্টকে। অনেক কাজই করবে, অন্তত আমাদের কোম্পানি। শহরের পশ্চিম ধারে বড় বড় কতগুলো শপিং সেন্টার আর হাউজিং এস্টেট বানানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের। কিন্তু সমস্যা হয়েছে জায়গা নিয়ে। কিছু কিছু বাসিন্দা তাদের জায়গা বিক্রি করতে নারাজ। কোনমতেই তাদের বোঝানো যাচ্ছে না।
তাই নাকি? ভুরু উঁচু করল রবিন। তাইলে তো আর হচ্ছে না।
দ্বিধা করল রিসিপশনিস্ট। অবশ্য, মিসেস শাজিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একবার যেটা ধরেন সেটা শেষ না করে তিনি ছাড়েন না। ম্যানিলা রোডের ধারে যে বন আছে, ম্যানিলা উড, সেটা পরিষ্কার করে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বানানোরও ইচ্ছে আছে তাঁর। সবচেয়ে ঝামেলাটা হচ্ছে ওখানকার জমি নিয়েই।
কান খাড়া করে ফেলল রবিন। কি ধরনের ঝামেলা?
এক বুড়োর অনেকখানি জায়গা আছে ওখানে। সে ওটা ছাড়তে চাইছে না। এদিকে ভূমি অফিস থেকে নোটিশ দিয়ে দিয়েছে আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি মালিকানার দলিল দাখিল করতে না পারেন মিসেস শাজিন, ওই জায়গার মালিক আর হতে পারবেন না। অনুমতিপত্র বাতিল করতে হবে। আবার নতুন করে দরখাস্ত করতে হবে তাকে।
হু, নিজের জায়গা না হলে ঝামেলাই। অন্যের জায়গার ওপর কিছু করার চিন্তা করে আগে থেকেই প্ল্যান করে বসে থাকার কোন মানে হয় না।
তা ঠিক, নড়েচড়ে উঠল রিসিপশনিস্ট। তোমার বোধহয় আরও কিছু জানা বাকি আছে? এক কাজ করো, পেছনের অফিসটায় চলে যাও। অনেক পরিকল্পনার নীলনকশা আর তথ্য লেখা কাগজ দেয়ালে সাটানো আছে, ওগুলো দেখে জেনে নাওগে। আমার জরুরী কাজ আছে। ডেস্কে রাখা কাগজগুলো দেখিয়ে বলল, এ চিঠিগুলো টাইপ করতে হবে। মিসেস শাজিন এসে ঠিকমত না পেলে রেগে যাবেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, উত্তেজনা চেপে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে রবিন। এ ভাবে তাকে ঢালাও সুযোগ দিয়ে দেবে রিসিপশনিস্ট, ভাবতে ন্টপারেনি।
ইচ্ছে করলে ফটোকপিও করে নিতে পারো, তরুণী বলল। পুরানো প্ল্যানের কপিও পাবে তাকে রাখা ফাইলে। সেগুলোও দেখতে পারো। ফাইলিং কেবিনেটের পাশেই পাবে ফটোকপির মেশিন।
রিসিপশনিস্টকে আরও একবার ধন্যবাদ দিল রবিন।
পেছনের ঘরে এসে ঢুকল। কাগজপত্র দেখে দেখে দ্রুত কিছু নোট নিল। যদি রিসিপশনিস্ট দেখতে চায় যাতে দেখাতে পারে। কোন নোটই না নিলে সন্দেহ করে বসতে পারে। এখান থেকেই শুনতে পেল টেলিফোন বাজছে। রিসিপশনিস্টের কথা কানে এল।
ডেড ফাইলস লেখা কেবিনেটটা টান দিয়ে খুলল রবিন। কাগজপত্র ঘাটতে শুরু করল। গায়ে জারভিস লিখে রাখা একটা ফাইল দৃষ্টি আকর্ষণ করল। মনে পড়ল সেভারনদের আগে কটেজটার মালিক ছিল জারভিস নামে এক লোক।
ফাইলটা বের করে এনে খুলল সে। সেভারনদের জায়গাটাতে কি করা হবে, তার দুটো প্ল্যান পাওয়া গেল। মেশিনে ঢুকিয়ে দুটো প্ল্যানেরই একটা করে কপি করে নিল সে। আরও কিছু কাগজপত্রের কপি করে নিল, যাতে রিসিপশনিস্ট দেখলেও বুঝতে না পারে ঠিক কোন কাগজগুলোতে রবিনের আগ্রহ। ফাইলগুলো আবার ঢুকিয়ে রাখল আগের জায়গায়। রাখতে গিয়েই নজরে পড়ল আরেকটা সবুজ ফাইল। কৌতূহলী হয়ে বের করে আনতে যাবে এই সময় অফিসরুমে কথা শোনা গেল।