এটাই সুযোগ! দ্রুত টেবিলটার কাছে চলে এল কিশোর। লস অ্যাঞ্জেলেস পোস্ট অফিসের ছাপ মারা চিঠিটা তুলে নিল। ঠিকানার হাতের লেখাটা দেখতে লাগল ভালমত। কোন সন্দেহ নেই। বইটাতে জ্যাকি সেভারনের লেখার সঙ্গে ঠিকানার হাতের লেখার হুবহু মিল রয়েছে।
কাঁপা হাতে চিঠিটা বের করল কিশোর। ওপরের দিকটায় শুধু তারিখ লেখা, কোনখান থেকে পাঠিয়েছে লেখেনি। নিরাশ ভঙ্গিতে মাটিতে পা ঠুকল সে। কিন্তু কাগজ উল্টে অন্যপাশটা দেখতেই চোখ স্থির হয়ে গেল তার। রবারের স্ট্যাম্প দিয়ে সীল মারা রয়েছে : পাড়। প্যাসিফিক কাউন্টি প্রিজন, প্যাসিফিক কাউন্টি, লস অ্যাঞ্জেলেস।
প্রিজন! মানে জেলখানা! নিজের অজান্তেই ভুরু কুঁচকে গেল কিশোরের। সেভারনদের ছেলে জেল খানায় বন্দি। সেজন্যেই তার সম্পর্কে কোন কথা বলতে চান না, এতক্ষণ পরিষ্কার হলো ব্যাপারটা।
জেলখানায় বন্দি, তারমানে অপরাধী। কিন্তু সেভারনদের মত ভালমানুষদের ছেলে অপরাধী এটা মেনে নিতে কষ্ট হলো তার। মনে পড়ল পত্রিকার নিউজটার কথা : শাজিন-হ্যারিসন কোম্পানির এক কর্মচারী কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছিল, পরে তাকেই চোর সাব্যস্ত করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
চিঠিটা আবার খামে ভরে টেবিলে আগের জায়গায় রেখে দিল কিশোর।
.
বাজি রেখে বলতে পারি আমি, জ্যাকি অফিস থেকে টাকা চুরি করেনি। সব সাজানো ঘটনা। তাকে ফাঁদে ফেলার জন্যে।
বাড়ি ফেরার পথে সাইকেল চালাতে চালাতে বলল কিশোর।
কে ফাঁদে ফেলল? জানতে চাইল রবিন।
এখনও বুঝতে পারছ না? চলো, বাড়ি চলল। সব বলব।
.
০৮.
তারমানে তুমি বলতে চাইছ জ্যাকি নির্দোষ? বেড়ায় হেলান দিল টলে বসা মুসা। তিন গোয়েন্দার ওঅর্কশপে জরুরী আলোচনায় বসেছে ওরা।
হ্যাঁ, দৃঢ়কণ্ঠে বলল কিশোর। নিশ্চয় জ্যাকি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল শাজিনের জন্যে, কায়দা করে তাই জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। একই সাথে সেভারনদের মনোবলও ভেঙে দিতে চেয়েছে।
অফিসে চাকরি করত বলে নাহয় ছেলেটাকে জেলে ঢোকানোর সুযোগ পেয়েছে, রবিন বলল, কিন্তু তার বাবা-মাকে কি করে কটেজ থেকে সরাবে?
ওই যে, ভয় দেখাচ্ছে। সারাক্ষণ এ রকম স্নায়ুর ওপর চাপ দিতে থাকলে, এক সময় হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন সেভারন। সেটা রুখতে হবে। আমাদের। ওই চোরটা কে, কোনখান থেকে এসেছে জানতে পারলে ভাল হত।
সেই লোকটা না তো, মুসা বলল, যে আমার ওপর গুলি চালিয়েছিল? আমাদের গাড়ি চাপা দিতে চেয়েছিল?
আমার তাই ধারণা, কিশোর বলল।
লোগোওয়ালা ভ্যানটা যেহেতু চালায়, তারমানে শাজিনের কোম্পানিতে চাকরি করে সে?
করতে পারে। কিংবা শাজিন ওকে বহালই করেছে সেভারনদের ভয় দেখানোর জন্যে। ভয় পেয়ে সরে গেলে তখন বাধ্য হয়ে কটেজ আর সমস্ত জায়গা শাজিনের কাছে বিক্রি করে দেবেন মিস্টার সেভারন, মহিলা নিশ্চয় সেটাই ভাবছে।
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে মুসা বলল, এক কাজ করলে কেমন হয়, জ্যাকিকে একটা চিঠি লিখে দিতে পারি আমরা। ও এখন কোথায় আছে জানি।
কোন অসুবিধে নেই, ড্রয়ার থেকে কাগজ-কলম বের করল কিশোর। বরং ভাল হবে। বাবা-মাকে তখন চিঠি লিখে বাড়ি ছাড়তে নিষেধ করবে সে। হতাতে মনে জোর পাবেন সেভারনরা।
কি লিখবে? রবিনের প্রশ্ন।
লিখব, আমরা তার বাবা-মার তিনজন বন্ধু। লিখব, তাদের জন্যে আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ অগাস্ট শাজিন… থেমে গেল কিশোর।
থামলে কেন? ভুরু নাচাল মুসা।
চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁট কামড়াল কিশোর। লিখব, তার বাবা-মাকে ভয় দেখানোর জন্যে তোক নিয়োগ করেছে শাজিন। ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছে।
তা লেখা যায়, মাথা দোলাল রবিন।
এখানে যা যা ঘটছে, সবই লিখব। ওর বাবা-মা যে পুলিশের কাছে যেতে চাইছেন না, এ কথাও জানাব।
আচ্ছা, অন্য প্রসঙ্গে গেল মুসা, শাজিন আর তার শয়তান গুণ্ডাটা কি বুঝতে পারছে আমরা তদন্ত করছি?
মাথা নাড়ল কিশোর, মনে হয় না। ও হয়তো ভেবেছে, আমরা সেভারনদের বন্ধু, কিংবা আত্মীয়; তাই ওঁদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ করার জন্যে আমাদেরও ভয় দেখিয়েছে। ভেবেছে বন্দুক তুললে আর গাড়ি চাপা দেয়ার ভয় দেখালেই সুড়সুড় করে গর্তে ঢুকে পড়ব আমরা।
ব্যাটাকে হাতে পেলেই হয় একবার, ওর বন্দুক দেখানো আমি বের
জ্যাকিকে চিঠি একটা লিখেই ফেলল কিশোর।
রবিন বলল, আমার কাছে দাও। বাড়ি যাবার পথে পোস্ট করে দিয়ে যাব। আশা করি কালই চিঠিটা পেয়ে যাবে সে।
.
পরদিন সকালে মিসেস সেভারনের ফোন পেল কিশোর।
কিশোর, উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন তিনি, তোমরা কি একবার আসতে পারবে?
পারব। কেন, মিসেস সেভারন?
কাল রাতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। তোমরা এসো। এলে তদন্ত করতে পারবে।
.
তিন গোয়েন্দা কটেজে পৌঁছে দেখল রাতের ঘটনায় মিসেস সেভারন গেছেন ভড়কে, মিস্টার সেভারন গেছেন রেগে।
দেখো, কি করেছে, মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা ফুলের বেডগুলো দেখালেন। মিস্টার সেভারন। পাতাবাহারের বেড়াটা পুরো ধসিয়ে দিয়েছে। রাগে, ক্ষোভে হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এল তার। গলাটা খসখসে শোনাল। আরও কি সর্বনাশ করেছে জানো? বাগানের পুকুরটার পানি নষ্ট করে দিয়েছে পোকা মারার বিষ ফেলে। গন্ধ পাচ্ছ? সমস্ত গোল্ডফিশগুলো মেরে ফেলেছে।
নাক উঁচু করে বাতাস শুঁকতে লাগল কিশোর। হ্যাঁ, পাচ্ছি। ফুল গাছের পোকা মারার জন্যে আমিও এ বিষ পানির সঙ্গে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করেছি বহুবার।