দেখি।
ফিতেটা খুলে কাগজগুলো দেখে গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর, হু, বাড়ির পুরানো দলিল।
এগুলো নিতে চেয়েছিল কেন?
জানি না। হতে পারে, সেভারনদের মালিকানার প্রমাণ গায়েব করে দিতে চেয়েছে।
আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। নিলে লাভটা কি? ভূমি অফিস থেকে যে। কোন সময় দলিলের নকল জোগাড় করে নিতে পারবেন মিস্টার সেভারন। জানালার বাইরে চোখ পড়তে বলে উঠল, রবিন, ওই যে, সেভাররা আসছেন।
কিশোরও এসে দাঁড়াল রবিনের পাশে। স্ত্রীকে ধরে ধরে আনছেন মিস্টার সেভারন।
ঘরের মধ্যে দুই গোয়েন্দাকে দেখে চমকে গেলেন তারা।
কিশোর! কিছুই বুঝতে না পেরে চোখ মিটমিট করতে লাগলেন মিসেস সেভারন। কি করছ তোমরা এখানে? খুব ক্লান্ত লাগছে তাকে। কতরকণ্ঠে গুঙিয়ে উঠলেন।
কি হয়েছে মিসেস সেভারনের? জানতে চাইল কিশোর।
ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে, মিস্টার সেভারন বললেন। মোড়ের ওপাশে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে মিনিবাসের ড্রাইভার, ডে সেন্টার থেকে এলাম আমরা। হেঁটে এগোচ্ছি, এই সময় মোড়ের ওপাশ থেকে দৌড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে কোরিনকে মাটিতে ফেলে দিল একটা লোক, একেবারে উন্মাদ, পাগল ছাড়া কিছু তো মনে হয় না!
খামোকা ভয় পাচ্ছ তুমি, জন, মিসেস বললেন। আমার কিছু হয়নি। লাগেনি কোথাও। পড়ে গিয়ে চমকে গেছি, এ ছাড়া আর কিচ্ছ হয়নি।
চিনতেও পারলাম না লোকটাকে…
আমি জানি, কে, কিশোর বলল। যে লোক এ ঘরে ঢুকেছিল, সে-ই হধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে মিসেস সেভারনকে।
এ ঘরে ঢুকেছিল! চোখ বড় বড় হয়ে গেল মিসেস সেভারনের। চিৎকার দিয়ে উঠতে গিয়ে, মুখে হাত চাপা দিলেন। কিন্তু তোমরাই বা ঢুকলে কি করে?।
কিভাবে ঢুকেছে জানাল কিশোর। শেষে বলল, আপনাদের না বলে ঢোকার জন্যে দুঃখিত। কিন্তু ঘরের মধ্যে শব্দ শুনে সন্দেহ হলো, ভাবলাম চোরটোর হবে, তাই…
বাধা দিয়ে মিসেস বললেন, জন, আমি ভেবেছি জানালাটা তুমি লাগিয়ে গেছিলে!
গম্ভীর হয়ে গেলেন মিস্টার সেভারন, মনে তো ছিল লাগিয়েছি…বাসটা এসে যেভাবে হর্ন দিতে শুরু করল, মাথার ঠিক থাকে নাকি কারও!
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, কিশোর বলল, চোরটা ঢুকল কোন পথে? জানালা দিয়ে ঢোকেনি। বেরিয়ে গেল সামনের দরজা খুলে। একটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল দুজনের দিকে। তবে কিছু নিতে পারেনি।
আর থাকছি না আমি এখানে, অনেক হয়েছে? আচমকা তীক্ষ্ণ স্বরে। চেঁচিয়ে উঠলেন মিসেস সেভারন। তোমার বাড়ির মায়া ছাড়ো!
একটা চোরের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাব? মিস্টার সেভারন নরম হলেন না।
তাহলে কি পড়ে পড়ে মরব?
কে মারছে তোমাকে? অতি সাধারণ চোর। দুটো ছেলেকে দেখেই ভয়ে পালাল। ও কি করবে?
আমি একবার ভাবলাম, কিশোর বলল, ওকে আটকে ফেলে পুলিশকে ফোন করব…
করোনি তো? ভাল করেছ। পুলিশ-টুলিশ চাই না এখানে।
কিন্তু…
কোন কিন্তু নেই!
ধরে ধরে একটা চেয়ারে মিসেস সেভারনকে বসিয়ে দিল কিশোর আর রবিন।
রবিন, কিশোর বলল, এক কাপ চা বানিয়ে এনে দাও না মিসেস সেভারনকে।
যাচ্ছি, বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেল রবিন।
তাকের ওপর কাপ-পিরিচ নাড়াচাড়ার শব্দ শোনা গেল। দুজনের দিকে তাকাল কিশোর। দেখুন, দয়া করে এবার সব বলুন এখানে কি ঘটছে। কিছু লুকাবেন না, প্লীজ। আমরা আপনাদের সাহায্য করতে চাইছি। আমার বিশ্বাস, কেউ একজন ভালমত পেছনে লেগেছে আপনাদের। বাড়ি থেকে না তাড়িয়ে ছাড়বে না।
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিসেস সেভারন। তারপর মাথা ন্টতুলে তাকালেন স্বামীর দিকে। শান্তকণ্ঠে বললেন, বলো, জন।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন মিস্টার সেভারন। যত নষ্টের মূল একজন মহিলা।
অগাস্ট শাজিন?
ভুরু কুঁচকে গেল মিস্টার সেভারনের, তুমি জানলে কি করে?
তদন্ত করে।
দীর্ঘ একটা মুহর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিস্টার সেভারন। তদন্তটা কিভাবে করেছ, জানতে চাই না। তবে একটা কথা স্বীকার করছি, বয়েস কম হলে কি হবে, খুব ভাল গোয়েন্দা তোমরা। নাম যখন জানো, এটাও নিশ্চয় জানো, জমি কেনাবেচার ব্যবসা আছে তার।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। জানি। এটাও অনুমান করেছি, আপনাদের বাড়ি থেকে আপনাদের তাড়াতে চাইছে সে-ই। জোর করে কিনে নিতে চাইছে। যেহেতু আপনারা রাজি হচ্ছেন না, ভয় দেখিয়ে বিদেয় করতে চাইছে।
হ্যাঁ। বনের ওপাশে যে স্পোর্টস সেন্টার আর শপিং সেন্টার করেছে, ওগুলোর মালিক শাজিন কোম্পানি। আরও নানা রকম সেন্টার করতে চায় সে, এর জন্যে বড় জায়গা দরকার, আর সেকারণেই আমাদের জায়গাটা নেয়ার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছে। বাজারদরের চেয়ে বেশি তো দিতেই চায়, অন্য জায়গায় একটা বাড়িও দেবে বলেছে। কিন্তু সাফ বলে দিয়েছি, বেচব না। বুড়ো বয়েসে একটু শান্তি দরকার, শান্তিতে বাস করতে চাই; নড়াচড়া এখন একদম সহ্য হবে না।
কিন্তু জন, জ্যাকি…
ওর কথা থাক।
ছেলের কথা উঠতে কাঁদতে শুরু করলেন মিসেস সেভারন।
মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন মিস্টার সেভারন।
অস্বস্তিতে পড়ে গেল কিশোর। উসখুস করে বলল, যাই, দেখি, রবিনের চা কদ্দূর হলো।
রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার পথে হলঘরে চোখ পড়ল তার। টেবিলে পড়ে আছে এখনও চিঠিগুলো। কানে আসছে স্ত্রীর প্রতি মিস্টার সেভারনের সান্ত্বনাবাক্য।