ছেড়ে দিতে চাও?
না না, ছাড়ার কথা বলছি না।
লোকটার চেহারা দেখেছ? শার্ট থেকে ময়লা ঝেড়ে ফেলল রবিন।
মাথা নাড়ল কিশোর, না। গাঢ় রঙের জ্যাকেটটা শুধু চোখে পড়েছে। সরেই তো সারতে পারছিলাম না, দেখব কখন?
আমিও পারিনি, মুসা বলল। এক পলকের জন্যে দেখলাম, খেপাটা স্টিয়ারিঙে হুমড়ি খেয়ে আছে।
তবে ভ্যানের পেছনের হলুদ লোগোটা দেখেছি। তোমরা দেখেছ?
রবিন আর মুসা দুজনেই মাথা নাড়ল।
আমারও তো তোমার অবস্থা, রবিন বলল। সরে বাঁচব, না দেখব? হাঁটু ডলল। জ্বালা করছে। ছড়ে গেছে মনে হয়। হাড়িতে লাগল কিনা কে জানে। সকালে উঠে আর হাঁটতে পারব না কাল।
লোগোটা আমার চেনা, বিড়বিড় করল কিশোর, খামের কোণায় যে লোগো দেখেছি, অবিকল সেরকম। হলুদ রঙের দুটো অক্ষর। এস আর এইচ অক্ষর দুটো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে একটার ভেতর আরেকটা ঢুকিয়ে লিখে তৈরি করেছে।
তবে ওই পেঁচানো অক্ষরের মালিক যারাই হোক, শুকনো গলায় মুসা বলল, তারা ড্রাইভারের পদে একটা পাগলকে চাকরি দিয়েছে, যে দিনে-দুপুরে গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ মারতে চায়।
ব্যাপারটা কাকতালীয়ও হতে পারে, রবিন বলল।
আমার তা মনে হয় না।
আমারও না, কিশোর বলল। বনের মধ্যে গুলি করা, রাস্তায় গাড়িচাপা দেয়ার চেষ্টা, এবং একটা বিশেষ লোগো; সবই কাকতালীয় হতে পারে না। ওই লোগোটা কোন্ কোম্পানির, সেটা এখন খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের।
কি করে? রবিনের প্রশ্ন।
জানি না। তবে উপায় একটা বেরিয়েই যাবে।
.
পুরানো জিনিস নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন রাশেদ পাশা, পুরানো বহু বাড়ি থেকে বহুবার জিনিসপত্র কিনে এনেছেন তিনি। সামনে পেয়ে তাকেই প্রথম জিজ্ঞেস করে বসল কিশোর। হতাশ হতে হলো না। ম্যানিলা রোড চেনেন রাশেদ পাশা। দুদিন আগেও গিয়েছেন একটা বাড়িতে পুরানো মাল দেখে আসার জন্যে। আবারও যাবেন। যাই হোক, জায়গাটার আগের মালিক কারা ছিল, পরে কারা কিনেছেন, বলতে পারলেন। সেভারনরা যে কিনেছেন, জানেন তিনি। ভূতের গুজবটাও শুনেছেন। তবে লোগোটা কোন কোম্পানির বলতে পারলেন না। তা না পারলেও একটা মূল্যবান পরামর্শ দিলেন, পাবলিক লাইব্রেরিতে চলে গেলেই পারিস। কোম্পানিগুলোর ওপর একটা ডিরেক্টরি করেছে ওরা। ওতে পেয়ে যাবি। এক কোম্পানির লোগো কখনও আরেক কোম্পানি নকল করে না, দুটোর চেহারা অবিকল এক রকম হয় না। সহজেই। পেয়ে যাবি।
চাচাকে ধন্যবাদ দিয়ে তক্ষুণি সাইকেল নিয়ে রওনা হলো লাইব্রেরিতে।
লাইব্রেরির তথ্য বিভাগে ঢুকে তাকের দিকে এগোতে যাবে, কে যেন তার নাম ধরে ডাকল, হাই কিশোর!
ফিরে তাকিয়ে দেখে কেরি জনসন হাত নাড়ছে। তেতো হয়ে গেল, মনটা। শুরু করবে এখন খোঁচানো কথা। আসার আর সময় পেল না মেয়েটা!
না গেলে কথা বলার জন্যে উঠে আসবে কেরি, কোনভাবেই তার হাত থেকে মুক্তি নেই। নিজে গিয়ে বরং কিজন্যে ডাকছে শুনে আসা ভাল। এগিয়ে গেল কিশোর। হাসিটা ধরে রেখে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছ, কেরি?
ভাল। তুমি এই অসময়ে?
পড়াশোনার কি আবার সময়-অসময় আছে নাকি?
জবাব দিতে না পেরে জিজ্ঞেস করল কেরি, তোমার লেখাটার কর? ফুটপাথ অ্যান্ড হাইওয়ে?
হয়নি এখনও। হয়ে যাবে।
ও ব্যাপারে পড়াশোনার জন্যেই এলে নাকি?
নাহ, বই ঘাটতে গেলে তাক দেখেই অনুমান করে ফেলবে কেরি, কি খুঁজতে এসেছে কিশোর। কৌতূহল বেড়ে গেলে উঠে চলেও আসতে পারে দেখার জন্যে। ঝামেলা এড়ানোর জন্যে সত্যি কথাটাই বলল সে, একটা সাদা ভ্যানে বিচিত্র একটা লোগো দেখলাম। এস আর এইচ পেঁচিয়ে আঁকা। ভ্যানটা আরেকটু হলেই চাপা দিচ্ছিল আমাকে। পালিয়ে চলে গেল ড্রাইভার। কমপ্লেন করব আমি ওর নামে। ডিরেক্টরি দেখে কোম্পানির নামটা খুঁজে বের করতে এসেছি।
লোগোটা কেমন, এঁকে দেখাও তো।
চেনো নাকি তুমি?
দেখাওই না।
কেরির সামনে নোটবুক আর পেন্সিল পড়ে আছে। একে দেখাল কিশোর।
ও, শাজিন-হ্যারিসন কোম্পানি। চিনি তো। আমার আঙ্কেল চাকরি করে ওখানে।
কি বললে?
অবাক হওয়ার কিছু নেই। কোম্পানি যখন, যে কেউ চাকরি করতে পারে ওখানে, তাই না? আমার আঙ্কেল হলেই বা কি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত প্রায় কতজ্ঞ দৃষ্টিতে কেরির দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। যাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল, কাকতালীয়ভাবে সে-ই একটা মস্ত উপকার করে দিল; অবশ্য না জেনে, কিশোররা যে তদন্ত করছে এটা জানলে হয়তো এত সহজে বলত না।
তা তো বটেই, অবশেষে জবাব দিল কিশোর। কোম্পানিটা কিসের? মাছ বেচাকেনার নাকি?
হাসল কেরি। এ কথা মনে হলো কেন?
লোগোটা দেখে।
মাছের ধারেকাছেও না। জমি কেনাবেচার ব্যবসা করে ওরা। বাড়ি বানানোর কন্ট্রাক্ট নেয়।
জমি বেচাকেনা!
তোমার হলো কি আজ? কথায় কথায় অবাক হচ্ছ। কেন, জমি বেচাকেনা কি দোষের নাকি?
না না, তা নয়…এমনি…
বেশি কথা বলতে গেলে কি সন্দেহ করে বসে কেরি, এজন্যে তাড়াতাড়ি ওকে ধন্যবাদ দিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। বাড়ি ফিরে চলল।
.
তারমানে…সত্যি সত্যি বলে দিল! বিশ্বাস করতে পারছে না রবিন।
বাড়ি ফিরেই ওকে ফোন করেছে কিশোর। হ্যাঁ। ভুল করে কি একখান উপকার করে ফেলেছে আমাদের, জানলে এখন নিজের হাত নিজেই কামড়ে খেয়ে ফেলবে।
মেজাজ-মর্জি বোধহয় খুব ভাল আছে আজ ওর। যাকগে, কি করবে। এখন?