চোখ মিটমিট করল এলিজা, তাতে কি?
বুঝলেন না? শেরিফের চোখ দুটোও এখন হাসছে। এখানে এই হিলটাউনে বজ্র উৎপাদন করে আমাদের বিজ্ঞানীরা। বিশ্বাস হয়?
জবাব দিল না এলিজা।
আমরা বজ্র বানাই, শেরিফ বললেন। শহরের ধারে অস্টাডোরিয়ান লাইটনিং অবজারভেটরিতে। আকাশের দিকে মাথা তুলে চেয়ে থাকে ওখানে একশো আইওনাইজড রড। বিদ্যুৎকে খুঁচিয়ে বজ্র তৈরি করে ওগুলো।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলল এলিজা, এখবরটা তো জানতাম না!
তারমানে ঠিকমত হোমওয়ার্ক করেন না আপনি, রসিকতা করলেন শেরিফ।
বস্ত্রের ব্যাপারে যা-ই বলেন না কেন, স্যার, এই ময়না তদন্তের রিপোর্টে গলদ আছে।
কে বলল?
একজন ডাক্তার হিসেবে আমি বলছি। কারণ দাগ নেই…
সেই কথাটাই তো বোঝাতে চাইছি এতক্ষণ ধরে। সাধারণ শক হলে দাগ থাকত। এটা হয়তো কোন ধরনের অসাধারণ শক, তাই নেই। বজ্রপাত সম্পর্কে এখনও সব জানেন না বিজ্ঞানীরা, আগেই তো বললাম। হতে পারে, কিছু কিছু বজ্রপাতে বিদ্যুৎ এমন ভাবে ঢুকে যায় মানুষের শরীরে, ভেতরটা ঠিকই পুড়ে কয়লা হয়, কিন্তু চামড়ায় বা অন্য কোথাও কোন দাগ বা ক্ষত থাকে না…
রিমোট কন্ট্রোলড ইলেকট্রিক শক! বিড়বিড় করল কিশোর।
কি বললে? ঝট করে তার দিকে ঘুরে গেলেন শেরিফ। রিমোট? বুদ্ধিমান ছেলে! হয়তো ঠিকই বলেছ, রিমোট কন্ট্রোলড লাইটনিং। স্পর্শ ছাড়াই বিদ্যুৎ পাচার করে দেয় মানুষের শরীরে কে জানে! কিশোরের দিকে তাকালেন তিনি। একে একে চোখ বোলালেন রবিন আর মুসার দিকে। সন্তুষ্ট হয়ে মাথা ঝাঁকালেন, দেখে অবশ্য চালাক-চতুরই লাগছে তোমাদের। ঠিক আছে, করো তদন্ত, বাধা দেব না। তবে এমন কিছু করবে না, কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাবে না, যাতে কেউ তোমাদের বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারে। যদি করে, শহর থেকে তোমাদের চলে যেতে বলতে বাধ্য হব আমি।
থ্যাংকিউ, স্যার, হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। কেউ খারাপ রিপোর্ট করবে না, কথা দিতে পারি।
*
কিভাবে মারা গেছে, কি মনে হয় তোমার? কিশোরকে জিজ্ঞেস করল এলিজা।
করোনারের অফিস থেকে বেরিয়ে এসে একটা কফিশপে নাস্তা আর কফি খেতে বসেছে ওরা।
আমি ডাক্তার নই। আপনাদের আলোচনা থেকে যা বুঝলাম, একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, কিশোর বলল, বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটেনি। লেসলির।
মুসা বলল, শেরিফের সঙ্গে তো একমত হয়ে এলে…
বজ্রপাতে মারা গেছে এ ব্যাপারে একমত হইনি। বলেছি ইলেকট্রিক শক। বজ্রপাত আর ইলেকট্রিক শক এক জিনিস নয়।
কিন্তু বজ্রপাতে বিদ্যুতের কারণেই মারা যায় মানুষ।
তা যায়। তবে লেসলি বাজ পড়ে মারা যায়নি। কিংবা সাধারণ ইলেকট্রিক শকও খায়নি। তাহলে শরীরে দাগ নিশ্চয় থাকত।
তাহলে কিসে মরল? ভুরু নাচিয়ে জানতে চাইল রবিন।
ইলেকট্রিক শকেই মরেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সেই বিদ্যুটা বড় আজব! পরিবহনের জন্যে তার লাগে না এর, কোন মাধ্যম লাগে না। বাতাসের ইথারই যথেষ্ট। আরও একটা ব্যাপার। যেন মন আছে, মগজ আছে, চিন্তা-ভাবনা করে শিকার বেছে নেয়ার ক্ষমতা আছে ওটার।
এমন করে বলছ যেন ওটা একটা প্রাণী!
কেন, প্রাণীরা কি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না?
তা তো পারেই। অনেক প্রাণীই আছে যারা নিজের দেহে বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম। চুপ হয়ে গেল রবিন।
একপাশে চেয়ারে রাখা ব্রীফকেস খুলে একটা ফাইল বের করল। কিশোর। সেটা থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে টেবিলে বিছাল। কি লেখা, দেখার জন্যে গলা বাড়িয়ে দিল রবিন আর মুসা।
দেখুন, এলিজাকে বলল কিশোর, একটা হিসেব বের করেছি। এই এলাকায় যারা যারা বজ্রপাতের শিকার হয়েছে তাদের সবারই বয়েস সতেরো থেকে একুশ। সবাই পুরুষ। লেসলি কার্টারিসও সেই দলেই পড়ে। এর মানে। কি? মনে কি হয় না, বুঝেশুনে, শিকার বাছাই করে মৃত্যুবাণ মারছে সেই আজব বিদ্যুৎ?
বিস্মিত হলো এলিজা। তাকিয়ে রইল কিশোরের দিকে।
লেসলি কার্টারিস কোন জায়গায় মারা গেছে, একবার দেখা দরকার, কিশোর বলল। আপনার কাজ আপনি করে দিয়েছেন। যা বোঝার বুঝে নিয়েছি। আপনাকে না দেখালে শিওর হতে পারতাম না। যাই হোক, এবার আমাদের তদন্ত শুরু। দেখা যাক আমার যুক্তির সপক্ষে কোন সূত্র মেলে। কিনা। আপনি আমাদের সঙ্গে যেতে চান?
মাথা নাড়ল এলিজা, যাওয়ার তো খুবই ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আরেকটা জরুরী কাজ আছে। নতুন কিছু জানলে জানাবে অবশ্যই। আমার সাহায্যের প্রয়োজন আছে বুঝলে তখন নাহয় চলে আসব। এখন তো আমাকে আর কোন দরকার নেই তোমাদের?
মাথা নাড়ল কিশোর, না, নেই।
.
০৩.
স্ট্রিপ মলের পার্কিং লট থেকে এখনও বের করে আনা হয়নি লেসলি কার্টারিসের গাড়িটা। শেরিফের লোকেরা গাড়ি ঘিরে অরেঞ্জ-কোন বসিয়ে। গাড়িটাকে আলাদা করে রেখেছে। কেউ যাতে ওটার কাছে না যায়, কিছু না ধরে।
গাড়িটার পেছনে হাতখানেক দূরে ঝুঁকে বসল কিশোর। স্কিড় করে যাওয়া চাকার দাগ দেখতে পেল।
গাড়ির ভেতরে উঁকি দিচ্ছে মুসা।
একটা ফাইল হাতে তার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রবিন। ফাইল পড়ে বলল, রাত বারোটা সতেরো মিনিটে এই গাড়ির ভেতরে লেসলির লাশটা পেয়েছে পুলিশ। শর্ট সার্কিট হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে সমস্ত ইলেকট্রিক্যাল সিসটেম। ওয়্যারিঙের তার সব পুড়ে, গলে গেছে।
কিশোরের কাছে এসে দাঁড়াল সে।