করোনারের মতই এলিজাও কিছু বুঝতে পারছে না। কিশোরের দিকে তাকাল। যুক্তি যেখানে অচল সেখানে কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়। আর সেটা খুব ভাল পারে এই ছেলেটা। কল্পনার দৌড় আর বুদ্ধি এত বেশি, কিভাবে যেন প্রায় শূন্য থেকেও বের করে নিয়ে আসে মূল্যবান সূত্র। ইতিমধ্যেই কোন জবাব, কোন উদ্ভট ব্যাখ্যা তার মাথায় ঠাই গেড়ে ফেলেছে কিনা বুঝতে চাইল। অবাস্তব কোন কিছুতে বিশ্বাস করে না কিশোর। ভূতুড়ে ঘটনাকে ভূতের কাণ্ড না ভেবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে। দেখা যাক, এই ঘটনাটার কি ব্যাখ্যা দেয়।
কিশোর কিছু বলার আগেই দরজার দিকে ঘুরে গেল করোনারের চোখ। সেটা লক্ষ করে এলিজাও তাকাল সেদিকে। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন বিশালদেহী লোক। বুকে শেরিফের ব্যাজ।
কোন কেসের দায়িত্ব নিলে পুলিশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে খাতির রাখার চেষ্টা করে কিশোর। নইলে তদন্তে প্রচুর অসুবিধে হয়। শেরিফ যদি ওদের কাজে বাধা দেন, পছন্দ না করেন, তার এলাকা থেকে বের করে দেন, কিছু করার থাকবে না। হিলটাউনে যখন পৌঁছেছিল ওরা, শেরিফ ছিলেন না এখানে। জরুরী একটা কাজে পাশের শহরে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে কোন রকম বাধার মুখোমুখি না হয়ে সহজেই করোনারের অফিসে ঢুকে পড়েছিল ওরা। এখন তিনি এসেছেন। ওদের তদন্তটাকে কোন চোখে দেখবেন কে জানে। করোনারের মত এত সহজে যদি তদন্ত করার অনুমতি না দেন?
এলিজার এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। লাশ পরীক্ষা করতে এসেছে, করছে। করা হয়ে গেলে চলে যাবে। গোয়েন্দাগিরি করার জন্যে থাকতে হবে না এখানে। অতএব শেরিফের তোয়াক্কা তার না করলেও চলবে। কিভাবে ঘটনাটা ঘটেছে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফিরে তাকাল করোনারের দিকে, এ নিয়ে এরকম মৃত্যুর ঘটনা পাঁচটা ঘটল হিলটাউনে। পত্রিকায় পড়লাম। বাকি লাশগুলোর গায়েও কি কোন রকম দাগ ছিল না?
পায়ের ওপর ভার বল করলেন ওয়াগনার। অস্বস্তিবোধটা বাড়ল। না, ছিল না। ওগুলোকেও বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটেছে–এই রায় দিতে বাধ্য হয়েছি আমি।
তারমানে আপনি বিশ্বাস করেন না বজ্রপাতেই মারা গেছে লোকগুলো? আচমকা যেন প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল কিশোর।
অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন ওয়াগনার। জবাব দিতে পারলেন না। কিংবা আসল কথাটা স্বীকার করতে হয় বলে ইচ্ছে করেই দিলেন না।
দরজায় দাঁড়িয়ে বুকের ওপর আড়াআড়ি হাত রেখে কথাগুলো শুনলেন। শেরিফ। তারপর কাশি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন সবার। করোনারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এরা কারা?
পরিচয় দিলেন ওয়াগনার।
হু! তাহলে তোমরা গোয়েন্দা, মাথা ঝাঁকালেন শেরিফ। এক এক করে নজর বোলালেন তিনজনের মুখে। তোমাদের জানা না-ও থাকতে পারে, তাই নিজের পরিচয়টা দিয়েই নিই। আমি শেরিফ মরফি রবার্টসন।
দেখেই অনুমান করে নিয়েছি, স্যার, খুশি করার জন্যে বিনীত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। রহস্যময় মৃত্যুর খবরগুলো পত্রিকায় পড়ে ইনটারেস্টেড হয়েছি। শখের গোয়েন্দা আমরা, একটা কার্ড বের করে দিল সে।
ভুরু কুঁচকে তিনটে নামের নিচে প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলোর দিকে তাকালেন শেরিফ। এগুলো কেন? নিজেদের কাজের ব্যাপারে সন্দেহ আছে নাকি?
সন্দেহ নেই, কণ্ঠস্বরটাকে বড়দের মত ভারিক্কি করে তুলে কিশোর বলল, এগুলোর মানে, যে কোন ধরনের রহস্যের তদন্ত করতে আগ্রহী আমরা। জটিল, উদ্ভট কিংবা ভুতুড়ে কেস হলে আরও ভাল। এমন অনেকগুলো কেসের কিনারা করেছি আমরা, বহুদিন ধরে পুলিশ যার কোন সমাধান খুঁজে পায়নি। এই দেখুন না, ইয়ান ফ্লেচারের প্রশংসাপত্রটা বের করে দেখাল সে। আমাদের সার্টিফাই করেছেন ক্যাপ্টেন নিজে।
কার্ডটা ফিরিয়ে দিতে দিতে আবার মাথা আঁকালেন শেরিফ। হু! তারপর তাকালেন ডাক্তারের দিকে।
আমি ডক্টর এলিজা, হাত বাড়িয়ে দিল এলিজা।
হাত মেলালেন শেরিফ। কি সাহায্য করতে পারি, বলুন?
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। বুঝে গেল, এক্ষুণি বেরিয়ে যেতে বলবেন না শেরিফ। তবে শেষ পর্যন্ত তদন্ত করতে দেবেন কিনা স্পষ্ট নয় এখনও।
কিশোরের দিকে তাকাল এলিজা। আবার ফিরল শেরিফের দিকে। এখানে গত কিছুদিনে বজ্রপাতের কারণে যেসব মৃত্যু ঘটেছে বলে বলা হয়েছে, সেগুলোর সপক্ষে তেমন কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি..
কিছু মনে করবেন না, ডাক্তার, বজ্রপাতের ব্যাপারে আপনি কতখানি জানেন?
জানি। অনেক কিছুই।
আপনি কি জানেন, বাড়িতে ঘরের মধ্যেও অনেকে বজ্রপাতের শিকার হয়? হয়তো শাওয়ারে গোসল করছিল তখন, কিংবা টেলিফোনে কথা বলছিল। এমনও দেখা গেছে, হলঘরে অনেকে মিলে নাচার সময় তাদের মধ্যে কোন একজন বাজ পড়ে মরে গেছে। বাকিদের কারও কিচ্ছু হয়নি। শিওর হয়ে কেউ বলতে পারে না কখন, কোথায় বাজ পড়বে। সাধারণ বিজ্ঞান বইতে আমরা পড়ি মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, আর তাতেই বজ্রপাতের সৃষ্টি। কিন্তু ভেতরে এত প্রশ্ন আর রহস্য রয়ে গেছে, অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীও তার জবাব দিতে পারেন না। জানেন সেটা?
আসলে আপনি কি বলতে চাইছেন, শেরিফ?
এতক্ষণে হাসি ফুটল শেরিফের মুখে। বলতে চাইছি, শরীরের দাগ নিয়ে যে প্রশ্নটা আপনি তুলেছেন, সাধারণ ইলেকট্রিক শকের বেলায় সেটা থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু বজ্রপাত একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার…হিলটাউনে বাস না, করলে হয়তো আপনার মতই কথা বলতাম। কিন্তু এখন আর বলব না। কারণ রোজ সকালে এখানকার বেশ কিছু বিজ্ঞানীর সঙ্গে বসে আমাকে নাস্তা খেতে হয়।