ক্রমেই ক্ষমতা বাড়ছে আমার, আপনমনে বিড়বিড় করল সে। নতুন আরেক রেকর্ড তৈরি করব খুব শীঘ্রি।
.
০২.
হিলটাউনের কাউন্টি বিল্ডিংটা আহামরি কিছু নয়। রঙ ওঠা, পুরানো। নতুন এলেও দ্বিতীয়বার ওটার দিকে চোখ তুলে তাকানোর কথা ভাববে না কেউ। করনির্ধারক, সমাজসেবকের আস্তানা আর হলভর্তি রেকর্ডপত্র আছে ওটাতে। আর আছে কাউন্টি করোনার হিউগ ওয়াগনারের অফিস।
অস্বস্তি বোধ করছেন করোনার। যে রায় দিয়েছেন, তাতে নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। জীবনে অনেক দেখেছেন, অনেক তার অভিজ্ঞতা। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যা শুরু হয়েছে হিলটাউনে, এরকম কাণ্ড ঘটতে আর দেখেননি কোনদিন। অন্য চারটা মৃত্যুর মত লেসলি কার্টারিসের মৃত্যুটাকেও অপঘাতে মৃত্যু বলে রায় দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু খুতখুত করছে মনটা।
তাকিয়ে আছেন ওদের দিকে। তিনটে কিশোর ছেলে আর একজন। সুন্দরী মহিল। লাশটা দেখছে ওরা।
তিরিশ মিনিট আগে তার অফিসে ঢুকেছিল। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড আর পুলিশ চীফ ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারের একটা প্রশংসাপত্র তার সামনে বাড়িয়ে দিয়ে লাশটা দেখার অনুমতি চেয়েছিল ছেলেগুলো। মহিলা জানিয়েছে, সে একজন ডাক্তার। লাশটা পরীক্ষা করতে চায়।
একবার রায় দেয়ার পর সেটা নিয়ে আর দ্বিতীয়বার ভাবতে চান না। ওয়াগনার। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। ওরা যদি নতুন কিছু বের। করতে পারে করুক না। ক্ষতি কি?
ঘটনাটা সত্যি অদ্ভুত। নমুনা দেখে বজ্রপাতে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না একে। কিন্তু লেসলি যখন মারা গেছে, তখন একবারও বজ্রপাত হয়েছে বলে রেকর্ড নেই।
লাশের ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়েছে ডাক্তার এলিজা। চোখে লাগানো প্রোটেকটিভ গগলস। পেশাদারী দৃষ্টিতে তাকাল মৃত ছেলেটার বাঁ কানের ভেতর। লাশের মাথা পুরো নব্বই ডিগ্রি ঘুরিয়ে একই ভাবে দেখল ডান কানের ভেতরটাও। ভাল করে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাকাল তিন গোয়েন্দার দিকে, যারা ওকে অনুরোধ করে নিয়ে এসেছে এখানে। অবশ্য নিজেরও খানিকটা ইচ্ছা আর কৌতূহল জন্মেছিল গত কিছুদিনে হিলটাউনের অদ্ভুত মৃত্যুগুলোর কথা পত্রিকায় পড়ে।
রকি বীচ হাসপাতালের ডাক্তার এলিজা। তিন গোয়েন্দার বন্ধু। একবার একটা বিশেষ কাজে তাকে সাহায্য করেছিল ওরা। সেই থেকে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।
দুটো কানের পর্দাই ফেটে গেছে, তিন গোয়েন্দাকে জানাল সে। ভোতা কণ্ঠস্বর। সামান্য একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল কি পড়ল না।
ডাক্তারী পাস করতে গিয়ে বহু লাশ পরীক্ষা করেছে এলিজা। অনেক ধরনের মৃত্যু দেখেছে। মানুষের শরীর অনেক কাটাকুটি করেছে। কিন্তু লাশ দেখলে তার এখনও মন কেমন করে। কেবলই মনে হয়, হাড়-মাংসে তৈরি এই নিথর দেহটাও একদিন তার মতই জ্যান্ত ছিল, চলেফিরে বেড়াত, কথা বলত। এরও আশা ছিল, নেশা ছিল, স্বপ্ন ছিল।
দস্তানা পরা হাতের আঙুল দিয়ে লাশের এক চোখের পাতা টেনে খুলল। সে। মৃত চোখের দিকে তাকাল। মণিটা একধরনের ঘোলাটে পাতলা পর্দায়। ঢাকা পড়েছে। অন্য চোখটা পরীক্ষা করেও একই জিনিস দেখতে পেল।
দুই চোখেই ছানি, কিশোর বন্ধুদের জানাল এলিজা। কণ্ঠস্বর এখনও ভোতা। কিশোর পাশার দিকে তাকিয়ে বলল, অতিরিক্ত উত্তাপের কারণে হয়েছে সম্ভবত।
সম্ভবত কেন? এলিজার কথায় অবাক হয়েছে কিশোর। শিওর হতে পারছেন না?
জবাব দিল না এলিজা। কি বলবে, ভাবছে। অ্যানাটমিক্যাল স্কেলের ওপর রাখা একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ তুলে নিল। মুখ খুলে ভেতরে তাকাল।
ব্যাগের ভেতরের জিনিসটাকে প্রথম দর্শনে মনে হয় পোড়া মাংসের টুকরো। পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। কিন্তু অভিজ্ঞ ডাক্তারের চোখ ঠিকই চিনতে পারল। জিনিসটা মানুষের হৃৎপিণ্ড। ময়না তদন্তের সময় লাশের বুক থেকে কেটে বের করে আনা হয়েছে।
বুকের মধ্যেই হার্টটা পুড়ে কাবাব হয়ে গেছে, এলিজা বলল। আশ্চর্য! করোনারের দিকে তাকাল সে। মিস্টার ওয়াগনার, আপনার কি ধারণা?
হাঁ করে তাকিয়ে আছে মুসা আর রবিন। কিছু বুঝতে পারছে না। বোঝার জন্যে মাথাও ঘামাচ্ছে না। ডাক্তারই যখন পারছে না ওরা কি বুঝবে? তবে কৌতূহল আর আগ্রহ নিয়ে শুনছে এলিজার কথা।
করোনার বললেন, এভাবে হার্টের টিস্যু ড্যামেজ হতে দেখিনি আর। তবে… গাল চুলকালেন তিনি। মনে মনে কথা সাজিয়ে নিলেন বোধহয়। বক্ষাস্থির নিচে এভাবে পুড়ে কিংবা পাজরের হাড় ফেটে যেতে পারে একটা কারণেইহাই-ভোল্টেজে প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক শক খেলে। বজ্রপাতে…
বাধা দিয়ে বলল এলিজা, কিন্তু কোন জায়গা দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবেশ করেছে। শরীরে, তার কোন চিহ্ন নেই। তারের ছোঁয়া লাগলে সেখানে দাগ কিংবা ক্ষত থাকার কথা।
আমার কাছেও এটাই অবাক লাগছে। দাগ নেই কেন?
ছেলেটা মারা গেছে ইলেকট্রিক শকে, কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু শকটা লাগল কোনদিক দিয়ে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
ঢোক গিললেন ওয়াগনার। আমার অনুমান, গাড়ির ছাতে পড়েছিল বজ্রটা। সেখান থেকেই কোনভাবে ছেলেটার শরীরে ঢুকেছে।
তারমানে বলতে চাইছেন ধাতব বডির ছোঁয়া? তাতেও চামড়া পুড়বে। দাগ কোথায়?
কি জানি! এই প্রশ্নটার জবাব পেলে তো সব পরিষ্কারই হয়ে যেত।
তাহলে অপঘাতে মৃত্যু রায় দিলেন যে?
তাতে ভুল করিনি। অপঘাত মৃত্যুই তো। ইলেকট্রিক শক। আমরা কেবল শিওর হতে পারছি না, শকটা লাগল কিভাবে।