জ্বলে উঠল বিলির চোখ। ভাবল, গাধাগুলো জানে না আমার শক্তির খবর। তিনজনকে মুহূর্তে ধোয়া বানিয়ে উড়িয়ে দিতে পারি কল্পনাও করতে পারছে না।
তাড়াতাড়ি বিলির আরও কাছে চলে এল মিলি। মাথা নেড়ে চিৎকার করে উঠল, না না, বিলি! চলো, আমি তোমার সঙ্গে যাব। ওদের কথা শুনব না।
ওর একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরল বিলি। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে গেল মনে হলো মিলির শরীরে। হাসল বিলি। লজ্জা পাওয়া শিশুর হাসি। চলো। এসো।
মিলির কোমর জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে দরজার দিকে পিছাতে শুরু করল বিলি। চোখ রবিনের দিকে। গুলি করে কিনা দেখছে। নিরাপদেই। বেরিয়ে এল কেবিন থেকে। লাগিয়ে দিল দরজাটা। তারপর নবের দিকে তাকিয়ে একটা মনো-বাণ ছাড়ল। মুহূর্তে গলে গেল ধাতু। বিকৃত, অকেজো হয়ে গেল তালাটা।
কেবিনের মধ্যে আটকা পড়ল রবিন। বিলি দরজা লাগিয়ে দিতেই পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। ডান হাতের তর্জনীর দিকে তাকাল একবার। যেটা পর্দায় ঠেসে ধরে পিস্তলের নল বুঝিয়ে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করেছিল বিলিকে।
দরজার নবের অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেল সে। মোচড় দিয়ে খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করল একবার। বুঝল, হবে না। এগিয়ে গিয়ে টিপে ধরল একটা বোতাম। ইমার্জেন্সি বাটন। টিপলেই তাড়াহুড়ো করে ছুটে আসবে নার্স।
.
১৫.
বাইরে পার্কিং লটের বাতাস কনকনে ঠাণ্ডা। তাজা। পরিষ্কার। যেন মুক্তির গন্ধ মিশে রয়েছে তাতে। হঠাৎ করেই এই অন্ধকার রাতটা এক ধরনের অদৃশ্য আলোয় ভরে উঠল যেন, অনুভব করল বিলি। আলোটা আলো নয়, এক ধরনের আনন্দ। বিচ্ছুরিত হচ্ছে মিলির কাছ থেকে। ওর হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি বুকে কান না লাগিয়েও ডাক্তারের স্টেথো দিয়ে শোনার মত শুনতে পাচ্ছে সে। ওর মগজের পাগল হয়ে ওঠা বিদ্যুৎ-তরঙ্গও স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে।
ও আমাকে ভালবাসে, ভাবল বিলি।
জীবনে তুমিই একমাত্র ভাল ব্যবহার করলে আমার সাথে, মিলিকে বলল সে। নিজের কণ্ঠ শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেল। এতটা উষ্ণ আর কোমল কণ্ঠস্বর যে ওর গলা দিয়েও বেরোতে পারে, ভাবেনি কোনদিন। রাগ চলে গেছে। মানুষ খুনের ঘটনাগুলো যেন এখন দূর অতীতের ধোয়াটে দুঃস্বপ্ন। ওসব ভুলে যেতে চায় সে। ওগুলোর কথা আর মুহূর্তের জন্যেও মনে করতে চায় না।
সেই প্রথম যেদিন তোমার সঙ্গে ক্লাসে দেখা হলো আমার, মনে আছে? জিজ্ঞেস করল বিলি। সবুজ একটা ফুক পরেছিলে তুমি। বড় বড় হলুদ ফুল। কি সুন্দরই না লাগছিল তোমাকে। ছেলেমানুষের মত হেসে উঠল সে। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। নামেও কি মিল, দেখছ? মিলি! বিলি!
মিলির হাতটা কাঁপছে, টের পেল বিলি। নিশ্চয় শীতে, ভাবল সে।
কোথায় যাচ্ছি আমরা? দুর্বল কণ্ঠে জানতে চাইল মিলি। কোথায় নিয়ে। যাচ্ছ আমাকে?
তাই তো! এই প্রথম মনে পড়ল বিলির, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে? কখনও তো ভেবে দেখেনি। একটাই চিন্তা ছিল, কোনমতে মিলিকে হাসিল করা। সেটা করেছে। এখন কোথায় নিয়ে গিয়ে তুলবে?
তা তো জানি না, জবাব দিল সে। তুমি যেখানে যেতে চাও, সেখানেই নিয়ে যাব। যে কোন দোকানের ক্যাশ মেশিন থেকে সহজেই টাকা বের করে নিতে পারব আমি। যে কোন গাড়ি জোগাড় করতে পারব। তুমি শুধু মুখ ফুটে বলো একবার।
সামনে একসারি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওগুলোর দিকে হাত তুলে বলল, দেখো। কোনটা পছন্দ? ওই অ্যাকর্ডটা? ম্যাক্সিমা? ঘুরে তাকাল মিলির দিকে। কোনটা পছন্দ?
কিন্তু মোটেও খুশি মনে হলো না মিলিকে।
ওর হাত ছেড়ে দিল বিলি। পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, জাপানী গাড়ি পছন্দ না হলে অন্য দেশ দেখি? টরাসটা কেমন মনে হচ্ছে? কিংবা ওই ফোর্ডটা?
ফোর্ড গাড়িটার দিকে শুধু তাকিয়ে থেকেই ওটার এঞ্জিন চালু করে ফেলল সে। গাড়ির উজ্জ্বল হেডলাইটের আলোয় চকচক করতে লাগল ভেজা চত্বরটা।
আনমনে মাথা নাড়তে লাগল সে। নাহ, এসব গাড়ি তার নিজেরই পছন্দ হচ্ছে না। মিলির জন্যে আরও ভাল কিছু চাই। একটা মার্সিডিজ দরকার। কিংবা ফেরারি।
দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এগুলো, নাক কুঁচকে বলল বিলি। চলো অন্য কোনখানে। চলে যাই। ভাল গাড়ি খুঁজে বের করতে হবে। আপাতত এখান থেকেই কোন একটা নিয়ে কাজ চালানো যাক।
হঠাৎ নতুন একজোড়া হেডলাইটের আলো ঘুরে এসে পড়ল ওদের গায়ে। কয়েক গজ এগিয়ে থেমে গেল গাড়িটা। পুলিশের গাড়ি। লাফ দিয়ে সেটা থেকে নেমে এলেন শেরিফ রবার্টসন। হাসপাতাল থেকেই তাকে ফোন করে দিয়েছে কিশোর।
এটা কোন সমস্যাই নয় বিলির কাছে। ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে। শেরিফকে। ভয় পেয়ো না, মিলি। চুপ করে খালি দেখো, লোকটার কি করি আমি।
জবাব না পেয়ে মিলি কোথায় আছে দেখার জন্যে ঘুরে তাকাল সে।
কিন্তু মিলি নেই ওর পাশে। প্রাণপণে ছুটছে। দেখতে দেখতে পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে চলে গেল অন্যপাশের ঘাসে ঢাকা মাঠে।
না! মিলি! যেয়ো না! চিৎকার করে উঠল বিলি।
ওর স্বপ্ন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে দূরে। সইতে পারছে না সে। নিজেকে বড় একা মনে হতে লাগল আবার।
*
অ্যাই বিলি, দাঁড়াও! নড়বে না বলে দিলাম! যেন মানুষ নয়, একটা পাগলা, কুত্তার উদ্দেশে ধমকে উঠলেন শেরিফ।
কিন্তু দাঁড়াল না বিলি। বুনো জানোয়ারের মত ঘুরে দৌড় মারুল। নজর অনেক সামনে। পলকের জন্যে দেখল একটা ঝোপ পার হয়ে গিয়ে ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ছে মিলি।