আমার তরফ থেকে সাদামাঠা। কিন্তু ও বোধহয় আমাকে পছন্দ করে একটু বেশিই করে। ওর জন্যে দুঃখ হয় আমার। অস্বস্তি বোধ করছে। মিলি। যেন কোন সাংঘাতিক অন্যায় কিংবা বেআইনী কাজ করে ফেলেছে বিলির পছন্দের দাম দিতে না পেরে। সহপাঠী। অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল হাসপাতালে। মায়া দেখাতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম গরীব মানুষ, লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে দুচারটে পয়সা পাক…কিন্তু…
গ্যারেজের চাকরিটা কি তুমিই তোমার বাবাকে বলে নিয়ে দিয়েছিলে নাকি? জানতে চাইল কিশোর।
মাথা ঝাঁকাল মিলি। হ্যাঁ। তার কয়েক দিন পর থেকেই ফোন আসতে থাকল। রিং হয়। আমি ধরলে কিছু না বলেই ছেড়ে দেয়।
কি করে বুঝলে বিলিই করত?
ভ্রূকুটি করল মিলি। আমাকে দেখলে যেভাবে গদগদ হয়ে তাকিয়ে থাকে…যা-ই হোক, বুঝতে পারতাম ঠিকই। কিশোরের দিক থেকে রবিনের দিকে ফিরল সে। মুসাকে দেখল। আবার ফিরল কিশোরের দিকে। বিলিই যে করত কোন সন্দেহ নেই আমার।
ওর কথা বিশ্বাস করল কিশোর। কিন্তু মিলির এসব কথা বিলির বিরুদ্ধে প্রমাণ নয়। এখনও এমন কিছু বলেনি সে, যেটা দিয়ে ফাসানো যায় বিলিকে।
কখন থেকে সন্দেহ করলে অঘটন ঘটাতে শুরু করেছে বিলি?
সরাসরি কিশোরের চোখের দিকে তাকাল এতক্ষণে মিলি। ও নিজেই আমাকে বলেছে।
বিস্ময়ে সামনে ঝুঁকে গেল রবিন। মানুষ খুন করেছে এ কথা বলেছে ও?
না, তা অবশ্য বলেনি। তবে ওর নাকি ক্ষমতা আছে। ভয়ঙ্কর ক্ষমতা।
মাথা ঝাঁকাল রবিন।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, কবে বলেছে?
শেষ লোকটাকে খুন করার পর।
লেসলি কার্টারিসকে?
মাথা ঝাঁকিয়ে মুখ নিচু করে ফেলল মিলি। আমি ওর কথা বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম আমাকে ভজানোর জন্যে গল্প করছে। কিন্তু আজ যা ঘটল মুখ তুলল সে। বুঝতে পারছি এক বর্ণও মিথ্যে বলেনি। যা বলেছে, সবই করতে পারে।
আর কাউকে বলেছ একথা?
হাসল মিলি। ছোট্ট, বিষণ্ণ হাসি। মাথা নাড়ল। কে বিশ্বাস করবে এসব আজগুবী কথা?
একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
আমি এখন রীতিমত ভয় পেয়ে গেছি, মিলি বলল। আমি ওকে এড়িয়ে চলতে গেলে না জানি কি করে বসে বাবাকে করল.. আমাকে করতে কতক্ষণ? বাবাকে একবার বাঁচিয়ে রেখেছে, দ্বিতীয়বার
মুখে হাত চাপা দিল মিলি।
এগিয়ে গিয়ে সান্তনা দেয়ার ভঙ্গিতে একটা হাত রাখল ওর কাঁধে রবিন। এখন আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই তোমার। তুমি এবং তোমার বাবা দুজনেই নিরাপদ। আমরা আছি।
চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না মিলি। কাউকে জমিয়ে রাখা কথাগুলো বলে মনের ভার লাঘব হয়েছে। ভাবসাব দেখে মনে হলো রবিনের কথা বিশ্বাস করেছে। ভরসা জন্মেছে তিন গোয়েন্দার ওপর।
*
ফেরার পথে আলোচনা করতে করতে চলল তিন গোয়েন্দা। উপায় খুঁজতে লাগল কি করে বিলির মত একটা ভয়াবহ বিপজ্জনক এবং মারাত্মক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করানো যায়।
বিষাক্ত কেউটের চেয়েও ভয়ঙ্কর ও, কিশোর বলল। হাইভোল্ট বিদ্যুৎ। ছোঁয়া লাগলেই মৃত্যু। আমি ভাবছি, না ছুঁয়েও…
যা সব কথা শুরু করেছ না তুমি আমার জিনের আসরও এর চেয়ে কম উদ্ভট! গাড়ি চালাতে চালাতে বলল মুসা। রাস্তার দিকে নজর।
কয়েক মিনিট পর জেলখানায় পৌঁছল ওরা। যে কোন রকম অঘটন দেখার জন্যে তৈরি।
গাড়ি থেকে নেমে সবার আগে ভেতরে ঢুকল কিশোর। অজানা আশঙ্কায় অস্থির। কি দেখতে পাবে কে জানে! ডেপুটিকে দেখল টেবিলে বসে একটা ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছে। সে ছাড়া আর কেউ নেই ঘরে। তারমানে কোন ক্ষতি হয়নি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল কিশোর, বিলি কোথায়?
ডেপুটি জবাব দেয়ার আগেই জানতে চাইল রবিন, অন্য কোন জেলে ট্রান্সফার করেছেন?
কিশোরের পেছন পেছন ঢুকেছে সে। মুসা রয়ে গেছে গাড়িতে।
বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি, পেছন থেকে বলে উঠল একটা কণ্ঠ।
ফিরে তাকাল দুজনে। শেরিফ রবার্টসন।
ছেড়ে দিয়েছেন? বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর।
আর কি করব? হাতের ফাইলটা নেড়ে বললেন, এটা পড়ার পর ছেড়েছি। তোমরাই তো লিখে রেখে গেছ।
ছেড়ে দেয়ার কথা লিখিনি.. রবিন বলল।
দৌড় দিল কিশোর। যেতে যেতে বলল, মিলিকে ফোন করতে যাচ্ছি।
একটা মুহূর্ত ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন শেরিফ। চোখ ফেরালেন রবিনের দিকে। ফাইলটা খুলে পড়লেন, নিজের শরীরে বিদ্যুৎ তৈরি করে সেটার সাহায্যে খুন করে সে! রবিনের দিকে তাকিয়ে চোখের পাতা সরু করে বললেন, অনুমান? না সত্যি বিশ্বাস করো একথা?
বুকের ওপর দুই হাত আড়াআড়ি রাখল রবিন। শেরিফের মতই চোখের পাতা সরু করে জবাব দিল, করি। আমাদের বিশ্বাস ওই পাঁচটা রহস্যময় খুনের জন্যে বিলিই দায়ী। আপনি ওকে ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছেন, স্যার। কি যে অঘটন ঘটাবে এখন সে-ই জানে!
শুকনো হাসি হাসলেন শেরিফ। তোমরা বলতে চাইছ বজ্র ছুঁড়ে মারতে পারে বিলি?
এটাই তো আপনার রিমোট কন্ট্রোলড ইলেকট্রিক শকের জবাব, তাই না?
গভীর ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালেন শেরিফ, মনে হচ্ছে। তবে বিশ্বাস করতে পারছি না। ফাইলটা টেবিলে ছুঁড়ে ফেললেন তিনি। বুঝতে পারছি না কি করব! তোমাদের কথা বিশ্বাস করে শেষ বয়েসে শেষে তোক হাসাব নাকি কে জানে!…অবশ্য ইয়ান ফ্লেচারের ওপর ভক্তি আছে আমার। ও যখন তোমাদের সার্টিফাই করেছে…
আপনার দ্বিধা করার কিছু নেই, স্যার। আপনিই বলেছেন বজ্রের ব্যাপারে অনেক কথাই অজ্ঞাত রয়ে গেছে। বড় বড় বিজ্ঞানীরাও সব জানেন না। আর বজ্র মানেই বিদ্যুৎ। এখানে একটা কথা, অন্য জীব যদি নিজের দেহে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে, মানুষই বা পারবে না কেন?