ওর মুখোমুখি দাঁড়াল কিশোর। কেউ বলছে না তুমি কিছু করেছ। আমরা ভাবলাম আমাদের কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে তুমি। সেজন্যেই এসেছি। যদি দিতে পারো, ভাল। না পারলে
লম্বা দম নিল বিলি। বেরোনোর জন্যে ছটফট করছে বিদ্যুৎ। জোর করে ঠেকিয়ে রেখেছে। জমে ওঠা শক্তিটাকে ধীরে ধীরে কমানো শুরু করল। কমাতে কমাতে ধিকিধিকি আগুনের পর্যায়ে নিয়ে এল।
বেশ, অবশেষে বলল সে, কি জানতে চাও?
*
কাউন্টি জেলের ইন্টারোগেশন রূমে বসে আছে রবিন। বিলিকে চোখ ডলতে দেখছে। খুব ক্লান্ত লাগছে ওকে। নিরীহ ভাবভঙ্গি। কেমন ভঙ্গুর। ভাবাই যায় না গোবেচারা চেহারার ওই অতি সাধারণ ছেলেটা তার রোগাটে শরীরের ভেতর থেকে ওই ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্মক শক্তি বের করতে পারে। বিলি একাজ। করতে পারে, এটা এখনও কেবল অনুমানের পর্যায়েই রয়েছে। কোন প্রমাণ জোগাড় করা যায়নি। সত্যি কি এতটা ক্ষমতা আছে বিলির?
মুখ তুলে তাকাল বিলি। শীতল, হিসেবি দৃষ্টি। দেখে অবিশ্বাস দূর হয়ে গেল রবিনের। হ্যাঁ, পারে। এই ছেলে ধ্বংস করতে পারে!
আর কতবার বলব, বিলি বলল, ওই লোকগুলো কিভাবে মারা গেছে আমি জানি না!
তাহলে আমাদের দেখে পালাচ্ছিলে কেন?
প্রচণ্ড জোরে টেবিলে চাপড় মারল বিলি। বার বার বলছি, ঘুরতে বেরিয়েছিলাম!
সব সময় ওরকম জানালা দিয়েই বেরোও নাকি?
ভয়ঙ্কর ভঙ্গিতে জ্বলে উঠল বিলির চোখ। প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলল, তোমাদের তো একটা মেডেল দেয়া উচিত আমাকে। আমার বসের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছি বলে।
নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে লাগল রবিন। নাহ, বড় কঠিন ঠাই। এর। পেট থেকে কথা আদায় করতে পারবে না। বার বার একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে। বিলির জবাবেরও কোন পরিবর্তন নেই। জোরাল প্রমাণ না পাওয়া গেলে ওকে আর বেশিক্ষণ আটকে রাখা যাবে না।
সত্যি বাঁচিয়েছ কিনা এখনও শিওর না আমরা, বলে চেয়ার ঠেলে উঠে। দাঁড়াল রবিন।
চেয়ারে হেলান দিল বিলি। রবিনকে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে। প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল সে। কেন? কেউ কি তোমাদের বলেছে কিছু? পটেটো বলেছে?
বাইরে বসে আছে একজন ডেপুটি। রবিনকে দরজা খুলে দিল।
শেষবারের মত বিলির দিকে ফিরে তাকাল রবিন। সামনে ঝুঁকে বাকা হয়ে বসেছে এখন বিলি। দুই হাতে খামচে ধরেছে টেবিলের কিনার। অসহায় লাগছে ওকে। রবিনের চোখে চোখ পড়তেই বদলে যেতে শুরু করল ভঙ্গিটা। জানোয়ারের মত জ্বলে উঠতে শুরু করল দুই চোখ-না, জানোয়ার নয়। রবিনের মনে হলো বৈদ্যুতিক বাতির মত!
বেরিয়ে এল রবিন।
হলওয়েতে ওর সঙ্গে দেখা করল কিশোর আর মুসা। কিশোর আশা করেছিল, রবিনকে যেহেতু নিরীহ চেহারার মনে হয়, তার কাছে মুখ খুলবে। বিলি। সেজন্যেই কথা বলতে পাঠিয়েছিল। বুঝল, সুবিধে করতে পারেনি রবিন। তবু জিজ্ঞেস করল কিশোর, কি খবর?
কিছুই বলে না। বার বার একই কথা, সে একজন হিরো।
ধরে থাবড়া লাগানো দরকার। ফুঁসে উঠল মুসা।
লাগাতে গেলে তোমাকেও খতম করে দেবে, হাত নেড়ে ওকে শান্ত হতে ইশারা করল কিশোর। রবিনকে জিজ্ঞেস করল, জোসেফ হাওয়ার্ডকে কিভাবে বাঁচিয়েছে? কিছু বলল?
কিছুই না। গোপন বিদ্যা নাকি জানে সে। কোন্ এক গুরুর কাছে শিখেছে।
কোন্ গুরু?
বলবে না বলে দিয়েছে।
মাথা দোলাতে দোলাতে কিশোর বলল, হু। রবিন, আমার ধারণা পুরো ঘটনাটাই ওর সাজানো নাটক।
মানে? তুমি বলতে চাইছ হার্ট অ্যাটাকটাও ওই ঘটিয়েছে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
এসব ঝামেলা কেন করতে গেল?।
জানি না, আনমনে বলল কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল। তবে এমন একজনকে চিনি যে জানে।
.
১২.
হিলটাউনের সবচেয়ে দামী এলাকায় সুন্দর একটা দোতলা বাড়ির সামনে মুসাকে গাড়ি রাখতে বলল কিশোর। রবিনের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, ঠিকানা ঠিক আছে তো?
নোটবুক দেখে নিশ্চিত হয়ে নিয়ে রবিন জানাল, হ্যাঁ, এটাই।
আসার পথে মিলির কথা রবিনকে জানিয়েছে কিশোর। হাসপাতালে ওর সঙ্গে কিভাবে দেখা হয়েছে বলেছে।
বেল বাজানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে দিল মিলি। বিশ্রাম নেয়ার জন্যে হাসপাতাল থেকে যদি বাড়ি এসে থাকে সে, সফল হয়নি সে চেষ্টা। বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বস্ত লাগছে তাকে।
তিন গোয়েন্দাকে দেখে জমে গেল যেন।
মিলি…. শুরু করতে গেল কিশোর।
কিন্তু তাকে চুপ করিয়ে দিল মিলি। সরি। এখন কথা বলতে পারব না। হাসপাতালে রওনা হচ্ছিলাম। ভঙ্গি দেখে মনে হলো কেঁদে ফেলবে।
বিলি ফক্সকে হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মিলি, মোলায়েম করে বলল কিশোর। কিছুক্ষণ আগে শেরিফকে বলে তাকে আটকানোর ব্যবস্থা। করেছি।
তাকিয়ে রইল মিলি। কিছু বলল না।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে লক্ষ করছে কিশোর। ঠিকই অনুমান করেছিল। মিলি কিছু জানে। বলতেও চায়। কিন্তু ভয় পাচ্ছে।
ভেতরে আসব? স্বর আরও নরম করে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
দ্বিধা করল মিলি। তারপর সরে গিয়ে পুরো মেলে ধরল দরজা।
লিভিং রূমে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। সুন্দর করে সাজানো। দামী আসবাব, ঘর সাজানোর সরঞ্জাম, কার্পেট, টবে লাগানো গাছ আর অ্যানটিক প্রচুর আছে। তবে বাড়াবাড়ি নেই।
আমি হাই স্কুলে পড়ি, বলার মত অন্য কোন কথা যেন খুঁজে পেল না মিলি। বিলিও একই ক্লাসে পড়ে।
ওর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন তোমার? জানতে চাইল রবিন।