- বইয়ের নামঃ আরেক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
আরেক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন
০১.
ঝড় একবার হয়ে গেছে। আকাশের অবস্থা, দেখে মনে হচ্ছে শেষ হয়নি, আবারও হবে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ছোট্ট শহর হিলটাউনে দোকানপাট সব আটটা বাজলেই বন্ধ হয়ে যায়। আর এখন বাজে রাত এগারোটা। তার ওপর ঝড়। ঘরের বাইরে লোকজন স্বভাবতই কম।
এখানকার স্ট্রিপ মলটা এমন আহামরি কিছু নয়। একটা লন্ড্রি, একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং একটা ভিডিও আর্কেড, ব্যস। আর কিছু নেই। স্টোরটা বন্ধ হয়ে গেছে আগেই। লন্ড্রিও বন্ধ। খোলা রয়েছে কেবল ভিডিও আর্কেড। মাঝরাতের আগে কখনোই বন্ধ হয় না।
ভেজা, তেলতেলে হয়ে আছে পার্কিং লট। চকচক করছে। একটামাত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আজ। একটা ক্লাসিক কনভার্টিবল। ছাতটা খোলা। যেন বৃষ্টিতে ভেজার পরোয়া নেই।
ওটার মালিক লেসলি কার্টারিসও বৃষ্টিকে পরোয়া করে না। করার উপায়ও নেই। তাহলে পেট চলবে না। ঝড়ের মধ্যেও বাড়িতে বাড়িতে পিজ্জা সাপ্লাই দিতে হয়েছে ওকে। বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই আর্কেডে এসেছে ভিডিও গেম মেশিনের ওপর রাগ ঝাড়তে।
সে ভেবেছে সে-ই একমাত্র কাস্টোমার, তাকে বিরক্ত করবে না কেউ। ভারটিউয়াল ম্যাসাকার-২ খেলছে। নিজেকে পর্দার একজন ভারটিউয়াল ফাইটার কল্পনা করে নিয়ে তাক করে লাথি মারছে শত্রুকে। যদিও হাই স্কুলের, ফুটবল ম্যাচে খেলার মত আনন্দ নেই এতে। কিন্তু স্কুলে খেলতে যাওয়ার আর উপায় নেই। দুই বছর আগেই সে পাট চুকিয়ে এসেছে।
বোতামে টিপ দিয়ে গাড়ির গিয়ারের মত করে জয়স্টিক ধরে টান দিল লেসলি। কয়েক মাস আগেই হাই স্কোর লিস্টে নাম উঠে গেছে তার। BPE নাম সই করে রেখেছে কোন একজন হেরে যাওয়া খেলোয়াড়। শয়তানি করে সমস্ত হাই স্কোর লিস্ট লক করে দিয়েছে আজকে। চাপাচাপি করে তাতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিল লেসলি, কিন্তু ভরসা কম। ইতিমধ্যেই দুজন খেলোয়াড়কে হারিয়ে বসে আছে। তৃতীয়টাকেও হারাতে চলেছে
এই যে, ভাই, পেছন থেকে ডেকে বলল একটা ভোতা কণ্ঠ, আমি খেলছিলাম ওখানে।
কাঁধের ওপর দিয়ে ঘুরে তাকাল লেসলি। ফ্যাকাসে চেহারার একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে পেছনে। মাথায় তেলকালি লাগা বেজবল ক্যাপ। গায়ে, টি-শার্টেও কালি।
বাথরূমে গিয়েছিলাম, ছেলেটা বলল।
তো আমি কি করব? কর্কশ জবাব দিল লেসলি। দেখেই রাগ লাগছে। তার। এই ছেলেটাই বোধহয় সেই হেরে যাওয়া খেলোয়াড়। বয়েস আঠারো-উনিশ। বখাটে চেহারা। মোটেও পছন্দ হলো না লেসলির। তার ধারণা, পাড়ায় পাড়ায় মস্তানি আর মেয়েদের পেছনে লাগা ছাড়া এর অন্য কোন কাজ নেই।
পর্দার দিকে নজর ফেরাল সে। দেরি হয়ে গেছে। কারাতের কোপ মেরে তার ভারটিউয়াল ফাইটারের ঘাড় মটকে দিয়েছে শত্রুপক্ষের এক যোদ্ধা। তাকে উদ্দেশ্য করে ব্যঙ্গভরা মন্তব্য আর পিত্তিজালানো যান্ত্রিক হাসি ছুঁড়ে দিল মেশিন। আরও রাগিয়ে দেয়ার জন্যেই যেন উজ্জ্বল লাল আলোয় গেম ওভার লেখাটা টিপটিপ করতে লাগল চোখের সামনে।
বিরক্ত হয়ে মেশিনকে এক চড় মারল লেসলি। ঝটকা দিয়ে ঘুরে তাকাল হাড্ডিসার ছেলেটার দিকে। সব রাগ গিয়ে পড়ল ওর ওপর। খেলা পণ্ড করেছে বলে। গর্জে উঠল, দিলে তো!
ক্যাপের ছায়ায় মুখের অনেকটাই আড়াল করে রেখেছে ছেলেটা। খেলা তো আপনি আমারটা নষ্ট করলেন। আমি ওখানে খেলছিলাম। মাঝখান থেকে আপনি ঢুকে পড়লেন।
তুমি গেলে কেন?
বাথরূম পেলে কি করব? আপনি অন্য কোন মেশিনে খেলতে পারতেন। এটাতেই কেন?
তুমি যে খেলছিলে কি করে জানব?
খেলাটা খোলা ছিল। ছিল না?
কতজনে অর্ধেক খেলে ফেলে রেখে চলে যায়…
বিলিই খেলছিল ওখানে, বলে উঠল আরেকটা কণ্ঠ। আপনি ওর খেলাটা নষ্ট করেছেন।
ঘুরে তাকিয়ে মোটাসোটা একটা ছেলেকে দেখতে পেল লেসলি। লম্বা চুল। কোমরে ঝোলানো কয়েন রাখার ব্যাগ। ওর নাম উইলিয়াম গ্লেজব্রুক। কিন্তু সবাই ডাকে পটেটো। নামটা চেহারার সঙ্গে মানিয়ে গেছে। ডাকতে ডাকতে এটাই নাম হয়ে গেছে এখন। আসল নামে কেউ ডাকে না। লোকে জিজ্ঞেস করলে সে নিজেও এই নাম বলে। বোধহয় আসল লম্বা নামটা ভাল লাগে না তারও, খাটোটাই পছন্দ।
তুমি আবার কে? খেঁকিয়ে উঠল লেসলি। ওর চামচা?
না, নাইট ম্যানেজার, জবাব দিল পটেটো।
মেশিনের দিকে সরে এল বিলি। সরুন।
লেসলির সন্দেহ হলো এই হাড্ডিসার ছেলেটাই মেশিনের রহস্যময় BPF। রাগ বেড়ে গেল তার। বিলির বুকে হাত রেখে জোরে এক ধাক্কা মারল।
একটা টেবিলের পায়ায় পা বেধে উল্টে পড়ল বিলি। টুপিটা খুলে পড়ে গেল। অদ্ভুত একটা দাগ দেখা গেল মাথার একপাশে।
ভুরু কুঁচকে গেল লেসলির। কিসের দাগ? মগজ অপারেশন করেছিল নাকি? ঠিক কাটা দাগের মত নয় দাগটা। বরং পোড়া দাগের সঙ্গে মিল বেশি।
হামাগুড়ি দিয়ে সরে গেল বিলি। লেসলির মনে হলো, একটা কিলবিলে পোকা পায়ের চাপে ভর্তা হওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি সরে যেতে চেষ্টা করছে। নোংরা পাথরের তলায়। কল্পনাই করতে পারল না পোকাটা কি ভয়াবহ বিষাক্ত!
ঠিক এই সময় বিদ্যুৎ চলে গেল।
অন্ধকারে চিৎকার করে উঠল পটেটো, মানা করেছিলাম, শুনলেন না! নিজের সর্বনাশ নিজে ডেকে আনলেন! এখন আর কেউ ঠেকাতে পারবে না ওকে…