বেশি নাটকীয় করে ফেলছ সবকিছু, অত আবেগের ধার দিয়ে গেল না ক্লডিয়া। অ্যাক্সিডেন্ট হলে আরও কত বিকৃত হয়ে যায় মানুষের দেহ। টুকরো টুকরো হয়ে যায়, থেতলে ভর্তা হয়ে যায়। সেই তুলনায় এটা তো কিছুই না।
তা ঠিক, একমত হয়ে মাথা দোলাল ড্যানি। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক অ্যাক্সিডেন্ট বলে ধরে নেয়াই ভাল। কারণ ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক গাড়িতে ছিল না। থাকলে সে-ও বাচত না। চিঠি যখন লিখতে পারে, তখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ভূত নয় সে। তোমার-আমার মতই মানুষ। আমার ধারণা, সরাসরি ও খুন করেনি সোফিকে। তবে পরোক্ষভাবে যে এই খুনের জন্যে সে দায়ী, তাতেও কোন সন্দেহ নেই।
আচ্ছা, মুসা বলল, গাড়ির যন্ত্রপাতির মধ্যে কোন কারসাজি করে রাখেনি তো তত্ত্বাবধায়ক? যাতে ব্রেক ফেল করে…
ব্রেক ফেল করে মারা যায়নি সোফি। মনে করিয়ে দিল রবিন, পুলিশ অফিসার কি বলল? গাছের সঙ্গে তো লাগিয়েছে। তারমানে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে রাস্তা থেকে সরে ধাক্কাটা লাগিয়েছিল সোফি। এর মধ্যে জেমস বন্ড ভিলেনদের শয়তানি খুঁজে লাভ নেই।
কিন্তু শয়তানি তো কেউ একজন করছে। এই চিঠিই তার প্রমাণ।
তবে সে সোফিকে খুন করেনি, এটাও ঠিক, জোর দিয়ে বলল ক্লডিয়া।
ড্যানি বলল, আমার প্রশ্ন, এই তত্ত্বাবধায়ক লোকটা কে?
কেউ জবাব দিতে পারল না। একে অন্যের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। জবাবের আশায়। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রবিন বলল, আমার কি মনে হচ্ছে জানো? মরুভূমিতে যে লোকটাকে কবর দিয়ে এসেছি আমরা, তার কোন পরিচিত লোক কিংবা বন্ধু হতে পারে।
সে কেন করবে একাজ?
প্রতিশোধ। আমরা ওর বন্ধুকে খুন করেছি। সে এখন আমাদের শাস্তি দেবে।
ব্ল্যাকমেইল?
না, তাহলে টাকা চাইত। বা অন্য কোন কিছু। সে আমাদের এমন সব কাজ করতে বলছে, যাতে আমরা ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণা পাই।
সেই লোকটা কে? আবার আগের প্রশ্নে ফিরে গেল ড্যানি।
কি করে বলব? হতাশ ভঙ্গিতে দুই হাত তুলল রবিন। জানলে তো গিয়ে চেপেই ধরতাম। যে লোকটাকে গাড়ি চাপা দিলাম তার পরিচয়ই জানি না, আর এর কথা জানব কিভাবে?
এখন কিশোরকে খুব প্রয়োজন ছিল আমাদের, হাই তুলতে তুলতে। বলল মুসা। এত জটিল একটা ধাঁধার সমাধান ও ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না।
আবার এক মুহূর্ত নীরবতার পর ক্লডিয়া বলল, আমাদের মধ্যে কেউ কাজটা করিনি তো? জোক করার জন্যে? সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল সে।
তুমি কিছু করেছ কিনা তুমি জানো, মারলা বলল, তবে আমি এই জঘন্য চিঠি লিখিনি। সোফিকেও আমি খুন করিনি।
আবার খুনের কথা আসছে কেন? ও তো নিজে নিজে অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। আমি বলতে চাইছি চিঠিটার কথা:..
লিখলে তাহলে তুমিই লিখেছ, রেগে গেল মারলা, তোমার মাথায়ই ছিট আছে। এখানে ছিলেও না অনেকদিন। চিঠি লিখে ডাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলে। তোমার এই জঘন্য শয়তানির জন্যেই ঘাবড়ে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে সোফি মারা গেছে। ওর মৃত্যুর জন্যে তুমি দায়ী।
দেখো, মুখ সামলে কথা বোলো! আগুন জ্বলে উঠল ক্লডিয়ার চোখে। চিঠিটা যেদিন পেয়েছ তোমরা তার বহু আগে আমি শহর থেকে চলে গেছি…
আহ, কি শুরু করলে তোমরা! বিরক্ত হয়ে হাত নাড়ল রবিন। নিজেরা নিজেরাই মারামারি শুরু করে দিচ্ছ! থামো! চুপ করো!
মুসা বলল, অহেতুক নিজেদের সন্দেহ করছি আমরা। আমাদের মধ্যে কেউ তত্ত্বাবধায়ক নই। আসল কথা বাদ দিয়ে বসে বসে ঝগড়া করলে কাজ এগোবে না।
সরি! নিজেকে সামলে নিল মারলা।
ক্লডিয়ারও চোখের আগুন নিভে এল।
ড্যানি বলল, সমস্যাটা এখন আমার কাঁধে। কারণ এরপর আমাকে টার্গেট করেছে তত্ত্বাবধায়ক। যে কাজটা করতে বলেছে মরে গেলেও আমি তা করতে পারব না।
তা তো সম্ভবই নয়, মাথা নাড়ল ক্লডিয়া। যত বড় হুমকিই দিক তত্ত্বাবধায়ক, ছোট বোনের হাত পোড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না।
পুলিশকে জানানো দরকার, রবিন বলল।
মাথা সোজা করল মারলা। পাগল হয়েছ?
না, হইনি। একটা অন্যায়কে ধামাচাপা দিতে গিয়েই আজ আমাদের এই অবস্থা। কেউ মানসিক শান্তিতে নেই। বুকে হাত রেখে কেউ বলতে পারবে না ঘটনাটার পর কোন একরাত শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছে কেউ। আর সেই অপরাধটা গোপন করার কারণেই চিঠি লিখে হুমকি দেয়ার সুযোগ পেয়েছে তত্ত্বাবধায়ক।
পুলিশকে জানালে এখন জেলে যেতে হবে, ভোঁতা গলায় বলল ড্যানি। তাতে আমার অন্তত আপত্তি নেই। কারও থেকে থাকলে সে গিয়ে আগে একজন উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারো।
তোমার শাস্তিটাই সবচেয়ে বেশি হবে, ড্যানি, মারলা বলল। কারণ গাড়িটা তুমি চালাচ্ছিলে। লোকটাকে তুমি চাপা দিয়েছ…
সেজন্যেই তো যেতে চাই। যতই দিন যাবে, মনের যন্ত্রণা বাড়বেই, শুধু, কমবে না। এই পনেরো দিনে সেটা ভালমতই বোঝা হয়ে গেছে আমার। কোন শাস্তির ভয়েই আর ব্যাপারটা গোপন রাখতে রাজি নই আমি।
কিশোর থাকলে আমাদের এই অবস্থা হত না, রবিন বলল। একটা না একটা ব্যবস্থা করেই ফেলত ও।
কি করত? ভুরু নাচাল ক্লডিয়া। এটা কোন রহস্য নয় যে তার সমাধান করবে। জলজ্যান্ত একজন লোককে গাড়িচাপা দিয়ে মেরে ফেলেছি। আমরা। কিশোর কি করবে? সবারই কমবেশি দোষ ছিল সেদিন। ড্যানি তো বলেইছিল, কনসার্ট শুনে মাথা গরম হয়েছিল ওর, চেঁচামেচিতে কানের মধ্যে ঝা-ঝা করছিল, তারপরেও ওকে গাড়ি চালাতে দিলাম কেন? দিলাম তো দিলাম, শান্তভাবে চুপচাপ বসে থাকলেই পারতাম। এমন হট্টগোল শুরু করলাম গাড়ির মধ্যে, এ ওর গায়ে ঢলে পড়তে লাগলাম, স্যান্ডউইচ নিয়ে খাবলাখাবলি শুরু করলাম যেন জীবনে খাইনিঃ…এবং তার ওপর হেডলাইট না। জেলে অন্ধকারে গাড়ি চালানোর বাজি..