ভুরু ওপরে উঠে গেল ড্যানির, না তো!
সত্যি?
মিথ্যে বলব কেন?
না, কোন চিঠিটিঠি লেখেনি, রবিনকে জানাল মুসা।
ঠিক বলছে তো?
ড্যানির দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। উদ্বিগ্ন লাগছে ড্যানিকে। না, বলছে না। চিঠিটা পড়ো তো শুনি।
পড়ে শোনাল রবিন। কোন পোস্ট অফিসের সিল আছে জানাল। মুসা চুপ করে থাকায় জিজ্ঞেস করল, মুসা, শুনছ?
হ্যাঁ। ঢোক গিলল মুসা। বুকের দুরুদুরু আরও বেড়েছে।
চিঠির কথামতই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে, রবিন জানাল। সাঙ্কেতিক ভাষায়। লিখেছে: সোফির কুকুরের বাচ্চাটাকে ওর নিজের হাতে চুবিয়ে মারতে হবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে।
দম বন্ধ করে ফেলল মুসা। বলো কি?
মুসা, কেউ জোক করেনি তো? ক্লডিয়া? কিংবা অন্য কেউ?
কি জানি। জিজ্ঞেস না করে বলি কিভাবে। ওকে ফোন করেছিলে?
নাহ। ভাবলাম তুমি করলেই ভাল হয়। তোমার সঙ্গে খাতির বেশি।
বেশি আর কই…
তবু
ঠিক আছে। করব।
মুসা, নামের সারিতে আমার নামটা নেই।
তাই নাকি?
ইন্টারেস্টিং, তাই না?
না, ডেঞ্জারাস! সোফি আবার ভাবছে না তো তুমি লিখেছ?
না, ভাবছে না।
ভাবনা চলেছে মুসার মাথায়। চিঠিতে যে কজনের নাম লেখা আছে, সবার এই বিপদের জন্যে ড্যানি দায়ী। গাড়িটা সে চালাচ্ছিল। আহাম্মকি করতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টটা করেছে।
মুসা?
বলো।
খুব মুষড়ে পড়েছে সোফি।
পড়বেই। প্রথম পরীক্ষাটা ওকেই দিতে হবে। জোক, না সত্যি, এটা আগে ওকেই প্রমাণ করতে হবে। কুকুরের বাচ্চাটাকে না মারলে হয়তো সত্যি সত্যি বিপদে পড়তে হবে তাকে। এখনও কিছুই বলা যাচ্ছে না কি ঘটবে!
ডিসাইড করতে পারছে না ও কি করবে।
পারা সম্ভবও নয়। ঠিক আছে, আমি এখনই ক্লডিয়াকে ফোন করছি। দেখি কি বলে?
যা বলে জানিয়ো। তাড়াতাড়ি। ওকে না পেলেও জানিয়ো। রাখব?
রাখো।
লাইন কেটে দিয়ে ড্যানিকে সব জানাল মুসা।
গম্ভীর হয়ে গেল ড্যানি। পায়চারি শুরু করল। ফিরে তাকিয়ে বলল, ক্লডিয়া যদি না লিখে থাকে তো ভয়ের কথা। বাইরের কেউ লিখেছে। অ্যাক্সিডেন্টের কথাটা জানে। জানল কি করে?
সেটা পরেও ভাবা যাবে। ক্লডিয়াকে ফোন করে দেখো আগে কি বলে।
আবার রিসিভার কানে ঠেকাল মুসা।
ফোন ধরলেন মিসেস নিউরোন, ক্লডিয়ার আম্মা। জানালেন, কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে পর্বতের ওদিকে বেড়াতে চলে গেছে সে। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিল মুসা।
কি বলল? মুসার একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ড্যানি।
বেড়াতে চলে গেছে। ইয়োজিমাইটে। বৃহস্পতিবারের আগে ফিরবে না।
হু, চিন্তিত ভঙ্গিতে আবার পায়চারি শুরু করল ড্যানি। ধপ করে বসে পড়ল বিছানায়। মুসা, কি মনে হয় তোমার? ক্লডিয়াই একাজ করেছে?
কি জানি। তবে না করার সম্ভাবনাই বেশি। কেন করবে? সে নিজেও এতে জড়িত। পুলিশকে না জানানোর জন্যে চাপাচাপিটা সে-ই বেশি। করেছিল। সে নিজে যে ব্যাপারে ভয়ে অস্থির, সেটা বলে সোফিকে ভয় দেখানোর কথা ভাবাটাই অর্থহীন। তা ছাড়া রবিন বলল, খামের ওপর। লোকাল পোস্ট অফিসের সিল মারা। ক্লডিয়া গেছে সাতদিন আগে। চিঠিটা। এসেছে আজকে। যদি সত্যিই ও লিখে থাকত, ইয়োজিমাইট পোস্ট অফিসের সিল থাকত।
তা ঠিক। আচ্ছা, সোফি, মারলা আর রবিন মিলে আমাদের সঙ্গে রসিকতা করছে না তো? ভয় দেখানোর জন্যে?
রবিনের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ কানে বাজতে লাগল মুসার। উঁহু! রবিন তো এ ধরনের রসিকতা করবেই না। সোফি আর মারলাও করবে না। তা ছাড়া। ক্লডিয়ার মতই ওদেরও করার কোন যুক্তি নেই।
সেটাই তো কথা। তাহলে?
উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল ড্যানি। বাইরে তাকাল। ভাল এক ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছি আমরা। তত্ত্বাবধায়ক–কি অদ্ভুত নাম! নির্ঘাত লোকটা উন্মাদ। বিকৃত মস্তিষ্ক। ভয়ানক নিষ্ঠুর। নইলে একটা কুকুরের বাচ্চাকে চুবিয়ে মারার কথা কল্পনাও করতে পারত না।
তোমার কি ধারণা সোফি সত্যি বিপদের মধ্যে আছে? আমার ফোনের অপেক্ষা করছে ওরা। একটা কিছু বলতে হবে।
মলিন হাসি হাসল ড্যানি। বাচ্চাটাকে মেরে ফেললে অবশ্য সোফির আর কোন রকম বিপদের আশঙ্কা থাকে না।
তা থাকে না। কিন্তু ওকাজ কি আর করা যায় নাকি!
যায় না। আমি হলে অন্তত পারতাম না। বলো, ক্লডিয়া বেড়াতে গেছে। ওর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। কিংবা বলতে পারো, আমাদেরও অনুমান চিঠিটা ক্লডিয়াই লিখেছে। সবার মুখ থেকে এক কথা শুনলে সোফি খানিকটা নিশ্চিন্ত হতে পারবে।
তা পারবে না। ও নিশ্চিত হতে চাইবে।
জানালার কাছ থেকে ফিরে এসে মুসার মুখোমুখি দাঁড়াল ড্যানি। একটা কথা বলি?
বলো।
এভাবে সর্বক্ষণ একটা দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপের মধ্যে না থেকে পুলিশের কাছে চলে যাই। সব খুলে বলি। আমার একার জন্যে তোমাদের সবাইকে এভাবে ভোগানোর…
অনেক দেরি করে ফেলেছি। সোজা নিয়ে গিয়ে জেলে ভরবে পুলিশ এখন। তা ভরুক..তবে ভাবছি, পুলিশের কাছে যাওয়ার আগে সবার সঙ্গে একবার কথা বলা দরকার। সবাই যখন এতে জড়িত, সবার একসঙ্গে বসে আলোচনারও দরকার আছে।
তাহলে তো ক্লডিয়াকেও থাকতে হবে মীটিঙে। কবে আসছে ও?
বললাম না বৃহস্পতিবার।
সোফিকে কবে পর্যন্ত সময় দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক?
বৃহস্পতিবার।
তারমানে কুকুরের বাচ্চাটাকে না মারলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেঁচে থাকছে সোফি। তাহলে আর অত চিন্তার কিছু নেই। তত্ত্বাবধায়ক কিছু ঘটানোর আগেই মীটিঙে বসার সময় পাচ্ছি আমরা।