.
০৩.
ড্যানিদের বাড়ির ড্রাইভওয়েতে সবে থেমেছে মুসা, তার পেছন পেছনই ঢুকল ড্যানির গাড়িটাও।
এগিয়ে গেল মুসা। ড্যানি গাড়ি থেকে নামতেই বলল, তার মানে বাড়ি ছিলে না। ভালই হলো, দেরি করে এসেছি। বসে থাকতে হলো না।
ড্যানি জানতে চাইল, ছিলে কোথায়? ফোন করে পাওয়া যায় না…
ড্যানিয়েল হার্বার, মুসার ক্লাসফ্রেন্ড। সব সময় হাসিখুশি থাকে। মাথায় ঘন চুলের বোঝা। নাকের ডগাটা মোটা। বড় বড় কানের দিকে ভালমত লক্ষ। করলে চেহারাটা যেন কেমন মনে হয়। কালো দুই চোখে তীক্ষ্ণবুদ্ধির ছাপ। পড়াশোনায় ভাল। অ্যারোনটিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে।
মলে গিয়েছিলাম, মুসা জানাল। বাড়িতে রান্না করে খেতে ইচ্ছে করছিল না।
গাড়ির সীটে ফেলে রাখা একটা বাদামী কাগজে মোড়া বাক্স বের করল ড্যানি। খাবারের প্যাকেট। আরেকটা ঠোঙাও তুলে নিয়ে বলল, এসো।
সামনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল সে। মুসা ঢুকল পেছনে। লিভিংরূমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, জয় কোথায়?
ড্যানির ছোট বোন জয়। সাত বছর বয়েস। ভীষণ ভালবাসে ওকে ড্যানি।
আছে।
একা ফেলে গিয়েছিলে!
ড্যানির বাবা-মা বাড়ি নেই, জানে মুসা। ছেলে-মেয়েকে রেখে তারাও বেড়াতে গেছেন।
কি করব? কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল ড্যানি। পেছনের উঠানে একটা পাখি কুড়িয়ে পেয়েছে। বেড়ালে বোধহয় ডানা ভেঙে ফেলেছে ওটার। তুলে এনে সেবাযত্ন শুরু করল। আমাকে হুকুম করল, জলদি দোকানে গিয়ে পাখির দানা নিয়ে এসো। ওকে সঙ্গে নিতে চাইলাম। বলে, ও না থাকলে নাকি পাখিটা মরে যাবে।
লিভিংরূমে ঢুকল জয়। ভাইয়ের বড় বড় কান পায়নি, তবে নাকটা পেয়েছে। চুলের রঙও এক রকম। দুজনের একই স্বভাব-কথা বলার সময়। অনবরত হাত নেড়ে নেড়ে নানা রকম ভঙ্গি করতে থাকে।
ভীষণ উত্তেজিত হয়ে আছে জয়। এগিয়ে এসে ভাইয়ের হাত থেকে ঠোঙাটা প্রায় কেড়ে নিল। মুসার দিকে তাকিয়ে বলল, মুসাভাই, ভাইয়া তোমাকে পাখিটার কথা বলেছে? জানালার নিচে পড়ে ছিল।
বলেছে, হেসে জবাব দিল মুসা। সেবাযত্ন করে নাকি অর্ধেক ভাল করে ফেলেছ।
বাচ্চা তো। কষ্ট বেশি সেজন্যে। ঠোঙার মুখ খুলে ভেতরে তাকাল। জয়। ভাইকে জিজ্ঞেস করল, বাচ্চা পাখির দানা এনেছিস তো?
দানা তো এক রকমই রাখে দোকানে, ড্যানি বলল। বড় পাখি যা খায় ছোটগুলোও তাই খায়। আমার মনে হয় না খাবারের তফাত বুঝতে পারে ওরা।
পারে না মানে? নিশ্চয় পারে! দাঁড়া, দেখে আসি খায় নাকি। নাহলে আবার যেতে হবে তোকে দোকানে। দোকানদারকে কড়া করে বলবি যাতে বাচ্চার দানা দেয়। দৌড়ে চলে গেল জয়।
খাইছে! যদি সত্যি না খায়?
কি আর করব? শঙ্কিত ভঙ্গিতে চুলে হাত চালাল ড্যানি। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। যেতেই হবে আবার। কিন্তু সত্যি কি বাচ্চা পাখি আর বুড়ো পাখিদের খাবার আলাদা?
মনে হয় না। কখনও খেয়াল করিনি।
মুসাকে নিজের বেডরূমে নিয়ে এল ড্যানি। ঢুকেই দেখল অ্যানসারিং মেশিনের লাল আলোটা টিপটিপ করছে।
এগিয়ে গেল ড্যানি। রিসিভার ভোলার জন্যে হাত বাড়িয়ে বলল, বাড়ি ফিরেই যখন দেখি কেউ আমার খোঁজ করছিল, ভাল লাগে খুব। নিশ্চয় কোন বন্ধু।
যদি ইনশুয়ারেন্সের দালাল হয়?
ওরা কখনও মেসেজ রাখে না। হুট করে বাড়িতে ঢুকে একেবারে সামনে এসে দাঁড়ায়। ভাল করেই জানে, বলেকয়ে এলে কাউকে পাবে না। কেউ ওদের সামনে যাবে না। বাড়িতে থাকলেও নেই বলে দেবে। তবু মনে যখন করিয়ে দিয়েছ, সাবধান হওয়াই ভাল। বলা যায় নাঃ::
প্লে করল ড্যানি। একটামাত্র মেসেজ। রবিন করেছে। বেশ উদ্বিয় মনে হচ্ছে ওর কণ্ঠ। বলেছে, ড্যানি যখনই ফিরুক, সঙ্গে সঙ্গে যেন সোফিদের বাড়িতে ফোন করে।
অবাক হয়ে মুসার দিকে তাকাল ড্যানি। মুসাও অবাক। জবাব দিতে পারল না। কোনমতে বলল, ওই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু নয় তো?
কোন… ঢোক গিলল ড্যানি। বুঝে ফেলেছে। ভয়ে ভয়ে তাকাল মুসার দিকে। আমার ফোন করতে ভয় লাগছে। কি জানি কি শুনব! প্লীজ, তুমি করো!
মুসাও দ্বিধা করতে লাগল। ঠিক আছে, করছি। কাঁপা হাতে রিসিভার তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল।
একবার রিঙ হতেই রিসিভার তুলে নেয়ার শব্দ পেল মুসা। জবাব দিল সোফি, হালো?
মুসা। রবিন আছে?
আছে।
কি হয়েছে, সোফি?
রবিনকে দিচ্ছি, কথা বলতেও যেন কষ্ট হচ্ছে সোফির, ওর কাছেই শোনো।
রিসিভার হাত বদল হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল মুসা।
কোত্থেকে বলছ, মুসা? জানতে চাইল রবিন।
ড্যানিদের বাড়ি থেকে।
ড্যানি আছে?
আছে। আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে?
দ্বিধা করতে লাগল রবিন। কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না।
বুকের মধ্যে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে মুসার। নিশ্চয় মরুভূমির। ব্যাপারটাই। বলে ফেলো।
মুসা?
বলো না। শুনছি তো।
লম্বা একটা মুহূর্ত চুপ করে রইল রবিন। মুসা, কে জানি একটা অদ্ভুত চিঠি পাঠিয়েছে।
কি বললে? রবিনের কথাটা যেন বুঝতে পারেনি মুসা।
অদ্ভুত একটা চিঠি। না দেখলে বুঝবে না।
মরুভূমির কথা কিছু লিখেছে?
পরিষ্কার করে বলেনি। তবে মনে হয় ওই কথাটাই বলতে চেয়েছে। ড্যানিকে জিজ্ঞেস করো তো, ও আমাদের ভয় দেখানোর জন্যে লিখেছে কিনা?
ও কেন দেখাবে? করল তো ও-ই।
তবু…
আচ্ছা, করছি! জিজ্ঞেস করল মুসা, ড্যানি, সোফিকে ভয় দেখানোর জন্যে কোন চিঠি লিখেছ?