খাবারগুলো নিয়ে গুডলাক ফাউনটেইনের পাশের টেবিলটায় এসে বসল মুসা। বিরাট হাঁ করে বার্গারে কামড় বসাল। চমৎকার বানায়। ওর খুব। পছন্দ। মজা করে চিবাতে চিবাতে তাকাল ঝর্নাটার দিকে। ওটার পানিতে পয়সা ছুঁড়ে দিয়ে কোন কিছু চাইলে নাকি ইচ্ছে পূরণ হয়। পকেট থেকে একটা পয়সা বের করে ছুঁড়ে মারল সে। আস্তে করে গিয়ে অস্থির পানির নিচের ছোট গোল বেদিটাতে পড়ল পয়সাটা। ওখানে ফেলা খুব কঠিন কাজ। চাইবার মত কোন কিছু এ মুহূর্তে মনে পড়ল না মুসার। শেষে বলল, আমার মনটা ভাল হয়ে যাক।
বাহ, দারুণ হাত তত তোমার। সাংঘাতিক নিশানা, মেয়েলী কণ্ঠের হালকা হাসি মেশানো কথা শুনে ফিরে তাকাল মুসা।
পাশের টেবিলে বসে আছে এক অপূর্ব সুন্দরী তরুণী। একেবারে সিনেমার নায়িকাদের মত সুন্দরী। ঝলমলে সোনালি চুল। বড় বড় চোখের মণি সবুজ। ঠোঁটে টুকটুকে লাল লিপস্টিক। খাড়া তীক্ষ্ণ নাক। পরনে নার্সের সাদা পোশাক। কফি খেতে খেতে ম্যাগাজিন পড়ছিল। মুসার চোখে চোখ পড়তে মিষ্টি করে হাসল। মাথা নেড়ে ঠোঁট উল্টে বলল, কাজ হবে না। রোজই পয়সা ফেলি আমি। কোন চাওয়াই পূরণ হয় না আমার। হয় চাওয়াটা ঠিকমত হয় না, নয়তো মাত্র একটা পয়সা ফেলি বলে মন ওঠে না ঝর্নার।
মুসাও হাসল। এক পয়সায় ঝর্নার মন না উঠলে সিকি ফেলে দেখতে পারেন। বেশি ঘুষ পেলে আপনার ইচ্ছে পূরণ করেও দিতে পারে।
অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল মেয়েটা। ঠোঁট ওল্টাল। যার পয়সায় হয়, তার সিকিতে কেন, লক্ষ ডলারেও হবে না। ইচ্ছা পূরণ হওয়ার কথা সব ফালতু। আমি আসলে পয়সা ফেলি হাতের নিশানা পরখ করার জন্যে। বেদিটাতে ফেলতে চাই। একদিনও পারিনি।
রোজ আসেন কেন?
লাঞ্চ করতে। কাছেই চাকরি করি আমি। হাসপাতালে।
নার্স?
বলে বটে নার্স, কিন্তু কাজ করায় অন্য, মুখ বাকাল মেয়েটা। আজ সকাল থেকে খালি টেস্ট টিউবে রক্ত নিয়েছি মানুষের।
চাকরিটা মনে হয় পছন্দ না আপনার?
নাহ! এগুলো কোন কাজ নাকি?
করেন কেন?
সময় কাটানোর জন্যে। তুমি কি করো? হাই স্কুলে পড়ে নিশ্চয়?
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
ভবিষ্যতে কি করার ইচ্ছে?
ইচ্ছে তো হয় অনেক কিছুই। একেকবার একেকটা। কখনও মনে হয়। টীচার হব, কখনও মনে হয় দূর, ছেলে পড়িয়ে কি লাভ? তারচেয়ে মেকানিক হওয়া অনেক ভাল…
হাসল মেয়েটা, ডিসাইড করা মুশকিল, তাই না? তোমার বার্গার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত বকবক করি আমি। আমি এখান থেকে না গেলে আর খেতে পারবে না।
আধখাওয়া বার্গারটা কখন প্লেটে নামিয়ে রেখেছিল মুসা, ভুলে গিয়েছিল। তুলে নিল আবার। হঠাৎ খেয়াল করল, মনটা আর আগের মত খারাপ নেই। কথা বলতে বলতে ভাল হয়ে গেছে।
না না, আপনি বসুন। খেতে খেতেও কথা বলতে পারি আমি। আমার কোন অসুবিধে হয় না। আপনার নামটাই কিন্তু জানা হলো না এখনও।
ক্রিসি, পাশে কাত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিল মেয়েটা। তোমার?
মুসা আমান, বার্গারের শেষ টুকরোটা প্লেটে রেখে ক্রিসির হাত ধরে ঝাঁকিয়ে দিল মুসা। পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।
এসব গতবাধা কথা ন্যাকা ন্যাকা লাগে আমার।
হাসল ক্রিসি। দাঁতগুলো সাদা হলেও ঠিক স্বাভাবিক নয়, সামান্য বাঁকা। তবে দেখতে খারাপ লাগে না। মুসাকে জিজ্ঞেস করল, তোমাকে কোথাও দেখেছি। কোথায়, বলো তো?
পত্রিকায় হতে পারে, ভাবল মুসা। ওদের স্কুলের বাস্কেটবল টীমকে জিতিয়ে দিয়ে হিরো হয়ে গিয়েছিল সে। বলল, কি জানি। দেখেছেন হয়তো কোনখানে। এখানেও হতে পারে। রোজ আসেন যেহেতুএখানকার বার্গার। আমার খুব পছন্দ।
হ্যাঁ, তাই হবে, অনিশ্চিত ভঙ্গিতে দ্রুকুটি করল ক্রিসি। তোমার ঘাড়ে কি হয়েছে? নাকি সমস্যাটা মেরুদণ্ডে?
অবাক হলো মুসা। কি করে বুঝলেন?
ঘাড় যেভাবে শক্ত করে রাখছ।
খেলতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি। বেশি নড়াতে গেলেই খচ করে লাগে।
ডিপ-টিস্যু ম্যাসাজ নিয়ে পড়াশোনা করছি আমি। হাসপাতালে কাজ ( করায় প্র্যাকটিসের সুযোগও পেয়ে গেছি। এই ম্যাসাজে রোগীর সাংঘাতিক আরাম হয়। ব্যথা চলে যায়।
শুধু ম্যাসাজেই? বিশ্বাস করতে পারছে না মুসা।
হ্যাঁ, হাতব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে খসখস করে ফোন নম্বর আর ঠিকানা লিখে মুসার দিকে বাড়িয়ে দিল ক্রিসি। এটা রাখো,। ব্যথা বাড়লে যদি প্রয়োজন মনে করো আমাকে ফোন কোরো। বাসায় চলে এলেও বিরক্ত হব না।
কাগজটা সাবধানে পকেটে রাখতে রাখতে হাসল মুসা, গিনিপিগ বানাতে চান?
সত্যি কথা বলব? ঘাড় কাত করল ক্রিসি, চাই। সব ধরনের রোগীর ওপরই পরীক্ষা চালাতে চাই আমি। এরকম মালিশে কোন কোন ব্যথা আরাম হয়, জানাটা জরুরী। ভবিষ্যতে নার্সের চাকরি ছেড়ে ম্যাসাজ পার্লার খুলে বসব।
বলা যায় না, চলেও আসতে পারি একদিন। মাঝে মাঝে ব্যথাটা যা বাড়ে..কি ম্যাসাজ বললেন?
ডিপ-টিস্যু। ঘড়ি দেখল ক্রিসি। বাপরে, অনেক দেরি করে ফেললাম। উঠে দাঁড়াল সে। তোমার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল, মুসা..
গতবাধা কথা। ন্যাকা ন্যাকা।
হেসে ফেলল ক্রিসি। শোধটা নিয়েই নিলে। চমৎকার কাটল সময়টা। সত্যি ভাল লাগল। বিকেলের পর আর বেরোই না আমি। তোমার ম্যাসাজ দরকার হলে ওই সময়টায় এসো।
ঘাড় কাত করল মুসা।
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল ক্রিসি। চোখ ফিরিয়ে প্লেটের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল খানিকটা বার্গার পড়ে রয়েছে। অবাক লাগল। হলো কি আজ ওর? খাওয়ার কথা ভুলে যাচ্ছে বার বার?