এসব কথা তোমাকে বুঝিয়েছে বুঝি ডাইনীটা? তোমার মগজ ধোলাই করে দিয়েছে…
দেরি করছ কেন, মুসা? ক্রিসি বলল। গুলি করো।
হ্যাঁ, করছি। একটা কথা মনে পড়ল। যুদ্ধের সময় জার্মানরা অনেক বন্দিকে দিয়ে কবর খোঁড়াত, তারপর কবরের কিনারে ওদের দাঁড় করিয়ে করত। ডিগবাজি খেয়ে গর্তে উল্টে পড়ত গুলি খাওয়া মানুষগুলো। দেখতে নাকি খুবই ভাল লাগত ওদের। আমার এখন সেটা দেখতে ইচ্ছে করছে।
হা-হা করে অট্টহাসি হাসল ক্রিসি। নির্জন মরুর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল সে-শব্দ। বাহ, আমার নির্বাচনে ভুল হয়নি। শয়তানের উপাসনা করতে হলে এই মানসিকতাই তো দরকার। যে যত নিষ্ঠুরতাই বলুক এসব কাজকে, আমি বলব না। এগুলোই তো মজা। প্রথম পরীক্ষায় উতরে গেলে তুমি, মুসা। ঠিক আছে, তোমার ইচ্ছেই পূরণ হোক। খাদ থেকে উঠে আসতে বলো ওকে। আমার নির্দেশেরও কিছুটা পরিবর্তন করে দিচ্ছি। মাথায় নয়, পেটে গুলি করো ওর। যাতে অনেকক্ষণ ধরে কষ্ট পেয়ে গুঙিয়ে গুঙিয়ে মরে। দেখতে ভাল লাগবে।
অ্যাই, উঠে এসো, পিস্তল নেড়ে কঠোর কণ্ঠে আদেশ দিল মুসা। চাঁদের আলোয় চকচক করছে কালো নল।
ফিরে তাকাল রবিন। বেহুশ হয়ে পড়ে আছে কিশোর। নড়ছে না।
গর্ত থেকে বেরোতে অতিরিক্ত দেরি করল রবিন। ভাবছে, থাবা দিয়ে মুসার হাত থেকে পিস্তলটা ফেলে দেয়া যায় কিনা। কিন্তু তাতেও লাভ হবে না। ক্রিসির হাতেও পিস্তল আছে।
খাদ থেকে উঠে এল রবিন। তার বায়ে রয়েছে এখন ক্রিসি, মুসা ডানে। দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে খাদের কিনারে।
তোমার প্ল্যানটা কি, সারাহ? জানতে চাইল রবিন। সময় বাড়াচ্ছে। বাঁচার যদি কোন সুযোগ পাওয়া যায়।
হেসে উঠল ক্রিসি। আমি আর এখন সারাহ নই। সারাহ ঢুকে পড়েছে তারকার মধ্যে। মায়াও নই। সে-ও গেছে। আমি এখন ক্রিসি।
আমাদের সবাইকেই তারকায় ঢোকানোর শখ হয়েছে নাকি তোমার? ক্রিসির পিস্তলটার দিকে তাকাল রবিন।
শখ নয়, এটা আমার প্রয়োজন। ছয়টা আত্মা দরকার আমার। ছয় কোণে ছয়টা ভরে দিয়ে মাঝখানে থাকব আমি। ওরা হবে আমার গোলাম। তিনটে পেয়ে গেছি–ডেভন, সোফি আর ড্যানি। তোমাকে নিয়ে হবে চারজন। আমার ভাগ্য ভাল, না চাইতেই এসে হাজির হয়েছে আরও একজন, খাদে পড়ে থাকা কিশোরকে দেখাল ক্রিসি। ওকেও নেব। শেষটা পূরণ করে নেব মারলা কিংবা ক্লডিয়াকে দিয়ে। যাকে সুযোগমত পাই।
আর মুসা? ওকে দিয়ে কি করবে?
ও হবে আমার ডান হাত। আমার বাহন। আমার প্রধান গোলাম। ওকে দিয়ে যা ইচ্ছে করাব আমি… মুসার দিকে ফিরল ক্রিসি। মুসা, দেরি করছ কেন? দাও পেটে একটা বুলেট ঢুকিয়ে। খাদে পড়ে কেঁচোর মত মোচড়াতে থাকুক। আহ, কি মজাই না হবে দেখতে! করো করো, গুলি করো!
হ্যাঁ, করছি, রোবটের মত যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর মুসার। রোবটের মতই নড়ল। পিস্তল তুলল রবিনকে তাক করে। নাহ, হচ্ছে না। এই, আরেকটু পিছাও। খাদের আরও কিনারে যাও। নইলে ডিগবাজিটা হবে না ভালমত।
পেছনে সরতে গিয়ে কিশোরের দিকে চোখ পড়ল রবিনের। একটু যেন। নড়ল মনে হলো? নাকি চোখের ভুল?
পিছিয়ে গেল রবিন।
একসঙ্গে কয়েকটা ঘটনা ঘটল। লাফ দিয়ে সরে গেল মুসা। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরেই বাড়ি মারল ক্রিসির পিস্তলধরা হাতে। ঠিক একই সময়ে ঝটকা দিয়ে উঠে বসে ক্রিসির পা ধরে হ্যাঁচকা টান মারল কিশোর।
মুসার বাড়িতে পিস্তলটা উড়ে চলে গেল ক্রিসির হাত থেকে। কিশোরের টানে পড়ে গেল ক্রিসি খাদের মধ্যে। হাঁচড়ে-পাঁচড়ে ওঠার চেষ্টা করল। কিন্তু। ততক্ষণে বেজবল ব্যাটটা তুলে নিয়েছে কিশোর। নির্দ্বিধায় বসিয়ে দিল ক্রিসির। মাথায়। এক বাড়িতেই বেহুশ।
ওকে বেঁধে ফেলা দরকার! চিৎকার করে বলল মুসা। ওই ডাইনীকে বিশ্বাস নেই!
তারমানে ওর কোন অলৌকিক ক্ষমতাই নেই, এমন ভঙ্গিতে বলল। রবিন, যেন নিরাশই হয়েছে। তাহলে এত সহজে কাবু করা যেত না।
কথা পরে, আগে দড়ি! মুসা বলল।
দড়ি কোথায় পাব? গাড়িতেও তো নেই।
তাড়াতাড়ি কোমরের বেল্টটা খুলে নিল মুসা। ওটা দিয়ে ক্রিসির হাত পিছমোড়া করে নিজেই বাধল।
আর কিশোরও ওদের বেল্ট দুটো খুলে দিল। ভালমত বাঁধতে আর অসুবিধে হলো না।
খাদের কিনারে পা ঝুলিয়ে জিরাতে বসল রবিন। মুসাকে বলল, ভাল অভিনয় শিখেছ তো। আমি তো বিশ্বাসই করে ফেলেছিলাম তুমি সত্যি সত্যি ক্রিসির গোলাম হয়ে গেছ।
গত কয়েক দিন গোলাম হয়েই ছিলাম। আফিম না কি জানি খাইয়ে আমাকে সারাক্ষণ নেশার ঘোরে রেখে দিত। আজ সেটা সময়মত কেটে না, গেলে কি যে ঘটাতাম কে জানে!
এমনিতেই কম ঘটিয়েছ নাকি? উফ, ঘাড় ডলতে ডলতে বলল। কিশোর। বাড়িটা আরেকটু আস্তে মারতে পারলে না?
পারতাম। তাহলে আমাকে বিশ্বাস করত না ক্রিসি। ফাঁকিটা আর দিতে পারতাম না। সত্যি কি বেহুশ হয়ে গিয়েছিলে নাকি?
নাহ, মাথা নাড়ল কিশোর। তুমি যদি অভিনয় করতে পারো, আমি পারব না কেন?…গাড়িটা রেখেছ কোথায় তোমরা? রাস্তায় তো দেখলাম না।
মোড়ের কাছ থেকে একশো গজ দূরে, ঝোপের ধারে। পড়ে থাকা ক্রিসিকে দেখাল মুসা, একে নিয়ে যাওয়া দরকার। কিভাবে নেয়া যায় বলো তো?
বয়ে নেব, আর কিভাবে? বলেই কান পাতল কিশোর। কিসের শব্দ? পুলিশের সাইরেন না?
তাই তো মনে হচ্ছে! খবর পেল কিভাবে?
কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাঁকের কাছে পুলিশের গাড়ি দাঁড়ানোর শব্দ শোনা গেল। দৌড়ে আসতে দেখা গেল কয়েকটা ছায়ামূর্তিকে। সবার আগে আগে ছুটে আসছে একটা মেয়ে।