উঁহু, অত সহজে না, মাথা নাড়ল ক্রিসি। তোমাকে সেই জায়গাটায় নিয়ে যাব, যেখানে কবর দিয়েছ ডেভনকে। নাটকীয়তার জন্যে করছি ভেবো না। ওর আত্মা ঘোরাফেরা করছে ওর কবরের কাছে। সাধনা করে সোফি আর ড্যানির আত্মাকেও ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছি। রবিনকে ওখানে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হলো চারজন। ছয়টা তারকার বাকি দুটো কোণও ভরব আমি আর দুজনকে দিয়ে–মারলা আর ক্লডিয়া। ইতিমধ্যেই তারকার কোণে ঢুকে পড়েছে ওরা। একবার যখন ঢুকেছে, বেরোতে আর পারবে না। তারকার ছয়টা কোণ ভর্তি করার পর মাঝখানে ঢোকাব আমার নাম…
কি করে ঢুকবেন? আপনাকেও তো মরতে হবে তাহলে।
মরব। তবে আবার বেঁচে ওঠার জন্যে। হৃৎপিণ্ডে ছুরি ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করব। তারকার ছয়টা আত্মাকে বশ করার পর ওদের সাহায্যেই বেঁচে উঠব আবার। বেঁচে থাকব অনন্তকাল। অসীম ক্ষমতার অধিকারী হব আমি…
আপনার পাগলা গুরুটা বুঝিয়েছে বুঝি এসব? নেশার ঘোর পুরোপুরি কেটে গেছে মুসার। উন্মাদ না হলে কোন ছাগলে বিশ্বাস করে…
ধক করে জ্বলে উঠল ক্রিসির বিড়াল-চোখ। খবরদার, আমার গুরুকে নিয়ে ঠাট্টা করবে না! যা বলছি করো, প্রমাণ পেয়ে যাবে কার কথাটা সত্যি।
হ্যাঁ, প্রমাণই দরকার আমার। বলুন, কি করতে হবে।
.
১৫.
মুসাদের বাড়ির সদর দরজায় টেপ দিয়ে সঁটা কাগজটা প্রথম চোখে পড়ল রবিনের। তাতে গোটা গোটা করে লেখা:
রবিন, মরুভূমিতে সেই লোকটার কবরের কাছে যাচ্ছি আমি। তুমি এখনই চলে এসো। আসবে অবশ্যই। জরুরী কথা আছে।–মুসা।
অবাক হলো রবিন। ডেকে দেখাল কিশোরকে।
গম্ভীর হয়ে গেল কিশোর। বিপদের গন্ধ পাচ্ছি আমি, রবিন। সাবধান থাকতে হবে।
যাবে না ওখানে?
যাব তো বটেই। না গেলে মুসাকে বাঁচানো যাবে না। চলো। রাতের বেলা এখন জায়গাটা খুঁজে পাবে তো?
পাব।
খুব একটা অসুবিধে হলো না রবিনের। মোড়ের কাছে পাহাড়ের একটা খাড়া দেয়ালের কাছে এসে গাড়ি থামাল। সেরাতে গাড়ির গুতো লেগে বালির দেয়ালে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। সেটা দেখাল কিশোরকে।
রাস্তা থেকে কতটা দূরে কবর দিয়েছিলে? জানতে চাইল কিশোর। টর্চ জ্বালার প্রয়োজন নেই। দেখার জন্যে চাঁদের আলোই যথেষ্ট।
এই পঞ্চাশ কদম হবে। কিন্তু আর গাড়ি কই? মুসার তো আমাদের আগেই চলে আসার কথা।
যেখানে যেতে বলেছে সেখানে আগে যাই চলো। নিশ্চয় আসবে।
রাস্তা থেকে নেমে বালির ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেই রাতটার কথা ভাবল রবিন। একটা ভয়াবহ অশুভ রাত। অন্ধকার। ঝোড়ো বাতাসে বালি উড়িয়ে এনে ওদের চোখে-মুখে ফেলছিল। লোকটাকে কবর দিতেও কত যে অসুবিধে ভোগ করেছে ওরা। ইস, যদি খালি জানত, ও আগেই মরে। গিয়েছিল। ওরা খুন করেনি। তাহলে কি এই ঝামেলায় পড়তে হয়।
আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাল। বিশাল গোল চাঁদ। উজ্জ্বল জ্যোৎস্না। আর সেদিন ছিল অমাবস্যার অন্ধকার। কোন কুক্ষণে যে হেডলাইট নিভিয়ে গাড়ি চালানোর বাজিটা ধরেছিল ওরা। ডাকে আসা রহস্যময় টিকিট পেয়ে কনসার্টে যাওয়াটাও পাপ হয়েছে। সেজন্যেই এই শাস্তি…
কিন্তু ওরা কি আর জানত ওদের কোন বন্ধু মজা করে নয়, তত্ত্বাবধায়কই শয়তানি করে টিকেটগুলো পাঠিয়েছিল, ওদের ফাঁদে ফেলার জন্যে। কিভাবে। জানবে? কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্যাকটাস আর মরুর শুকনো ঝোপে ঘেরা একটা জায়গায় এসে দাঁড়াল দুজনে। গোল খোলা জায়গাটাকে ঘিরে যেন প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় ক্যাকটাসগুলো। চাঁদের আলোয় লম্বা ছায়া পড়েছে। মাটিতে। ওগুলোর মাঝখানে তিন-চার ফুট গভীর একটা খাদ। খাদের তলায়। পাথরের স্তূপ। বালি খুড়ে কবর দেয়ার পর পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। কবরটা যাতে শেয়াল বা মরুভূমির অন্য কোন লাশখেকো জানোয়ারে তুলে নিয়ে যেতে না পারে।
হাত তুলে দেখাল রবিন, ওই যে…
ওর কথা শেষ হতে না হতেই উহ্ করে উঠল কিশোর। গড়িয়ে পড়ে গেল খাদের মধ্যে।
কি হলো! বলে চিৎকার দিয়ে ফিরে তাকিয়েই রবিন দেখল মুসা দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে একটা বেজবল ব্যাট, কোমরের বেল্টে গোঁজা পিস্তল। ক্যাকটাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাড়ি মেরে ফেলে দিয়েছে কিশোরকে।
পাগল হয়ে গেলে নাকি? বলতে গেল রবিন। কিন্তু তাকেও এক ধাক্কায়। খাদে ফেলে দিল মুসা।
খিলখিল হাসি শোনা গেল আরেকটা গাছের আড়াল থেকে। বেরিয়ে এল সোনালি চুল সেই মেয়েটা। ওর হাতেও একটা রূপালী রঙের পিস্তল। আদেশ দিল, ব্যাটটা ফেলো। পিস্তল খুলে নাও। শেষ করে দাও ওকে।
ব্যাট ফেলে কোমর থেকে পিস্তল খুলে নিল মুসা।
বালিতে পড়ায় তেমন ব্যথা পায়নি রবিন। কোনমতে উঠে বসে চিৎকার করে বলল, কি করছ, মুসা? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?
না, রবিনের দিকে পিস্তল তাক করে জবাব দিল মুসা, আমার মনিব। তত্ত্বাবধায়কের হুকুম পালন করছি। ক্লডিয়া এসে এই পিস্তল সহ মেসেজ রেখে। গেছে। তাতে বলা হয়েছে গুলি করে তোমার খুলি উড়িয়ে দিতে। সেটাই করতে যাচ্ছি। নইলে ভয়ঙ্কর মৃত্যু ঘটবে আমার।
মুসা, শোনো বোকামি কোরো না…
পিস্তল কক করল মুসা। বিদায়, রবিন।
শোনো, মুসা, প্লীজ!
কি শুনব?
আমাকে খুন করলেও ও তোমাকে ছাড়বে না। আমি জানি…
সেজন্যেই তো ওদের দলে যোগ দিতে যাচ্ছি আমি। তোমার আত্মা চুরি করে একদিন মহাক্ষমতাধর হয়ে যাব।