পিস্তলটা একহাতে নিয়ে আবার ব্যাগ হাতড়াল মুসা। মারলার কাটা আঙুলটা বের করে আনল। সঙ্গে সঙ্গে হাত থেকে ফেলে দিল ওটা। ব্যাগ। আর পিস্তলটাও পড়ে গেল মেঝেতে। ভাগ্য ভাল, ঝাঁকুনি লেগেও গুলি ফুটল না।
কাটা আঙুল এবং পিস্তল, দুটোই মাটি থেকে কুড়িয়ে নিল ক্রিসি। আঙুলটা নিজের পকেটে ভরে পিস্তলের চেম্বার খুলল। খোলার ভঙ্গি দেখেই বোঝা গেল এ কাজে অভ্যস্ত সে। ব্যবহার করতে জানে।
ম্যাগাজিন গুলিতে ভর্তি।
খলখল করে হেসে উঠল ক্রিসি। আজকের রাতটা হবে আমাদের মহাআনন্দের রাত। জলদি তোমার মেসেজটা পড়ে ফেলো।
কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে কাগজের টুকরোটা বের করল মুসা। দোমড়ানো লাল কাগজে লেখা নোট। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের উজ্জল আলোয় লেখাটা পড়ার চেষ্টা করল সে কষ্ট হলো বুঝতে, তবে পড়তে পারল। উল্টো করে লেখা বাক্যটার মানে করলে হয়:
রবিনের খুলি উড়িয়ে দাও
নোটটাও হাত থেকে খসে পড়ে গেল মুসার। আমি পারব না!
পারবে, পারবে। না পারার কোনই কারণ নেই। নইলে কি ঘটবে জানো? জেলে যেতে হবে তোমাকে।
গেলে যাব। তবু রবিনকে খুন করতে পারব না আমি। মাথা খারাপ নাকি!
তাহলে তোমাকে খুন হতে হবে, কঠিন হয়ে গেল ক্রিসির কণ্ঠ। তারপরও বাঁচবে না রবিন। তাকে খতম করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার যখন টার্গেট হয়ে গেছে, তত্ত্বাবধায়কের হাত থেকে তার নিস্তার নেই…
তত্ত্বাবধায়কের কথা আপনি জানলেন কি করে?
মুচকি হাসল ক্রিসি। কারণ আমিই তত্ত্বাবধায়ক। এতক্ষণে তোমার বুঝে যাওয়ার কথা। আমি তো ভাবলাম বুঝে গেছ।
মাথার ঘোলাটে ভাবটা কাটছে না মুসার। ঘোরটা যাচ্ছে না। ভাবল, আবার দুঃস্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু এভাবে খুন-খারাপি করে, একজনকে দিয়ে আরেকজনকে খুন করিয়ে লাভটা কি আপনার?
লাভ আছে। আমার গুরু বলেছেন নিজের হাতে খুন করার চেয়ে অন্যকে দিয়ে খুন করিয়ে মৃত আত্মাগুলোর মালিক হতে পারলে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী হওয়া যায়। কারণ এতে চালাকির দরকার হয়। শয়তান নিজে চালাক। তাই চালাক মানুষকে পছন্দ করে। আমি নিজে কতটা চালাক সেটা বোঝার জন্যে, এবং একই সঙ্গে আত্মার মালিক হওয়ার জন্যে এই ফাঁদ পেতেছি আমি। তোমাদের টার্গেট করেছি। কনসার্টের টিকেটগুলো তোমাদের কাছে আমিই পাঠিয়েছিলাম। বোকার মত আমার ফাঁদে ধরা দিয়েছ তোমরা।
তোমরা কনসার্ট থেকে ফেরার আগে ডেভন গাধাটাকে খুন করে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলাম। কাকতালীয় ভাবে হেডলাইট নিভিয়ে গাড়ি চালিয়ে আমার সুবিধে করে দিলে তোমরা। আমার বিশ্বাস, এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন খোদ শয়তান। লোকটাকে যে তোমরাই খুন। করেছ এটা তোমাদের বোঝাতে কোন কষ্টই হলো না আমার। চিঠি দিয়ে তখন তোমাদের ব্ল্যাকমেইল করা সহজ হয়ে গেল আমার জন্যে। ঘাবড়ে গিয়ে সোফি অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা যাওয়াতে আরও ভড়কে গেলে তোমরা। ওকে আর আমার নিজের হাতে মারতে হয়নি। তবে আমার চিঠি পাওয়াতেই ঘাবড়ে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে সে। ওর আত্মার মালিক তাই আমি। শয়তানি হাসি ফুটল ক্রিসির ঠোঁটে। ড্যানিকে আমিই পুড়িয়ে মেরেছি। আমার অবাধ্য হয়ে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল বলে ভীষণ রাগ হয়েছিল আমার। তবে ওর খোঁজ দেয়ার জন্যে তোমাকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়…
আমি খোঁজ দিয়েছি! মূসা অবাক। কখন?
সেরাতে ওকে ফোন করাটা মোটেও উচিত হয়নি তোমার। ফোন করে নিজের অজান্তেই আমাকে জানিয়ে দিলে ও কোথায় আছে…
রাগ মাথাচাড়া দিচ্ছে মুসার মগজে। পা বাড়াতে গেল সে।
পিস্তল নেড়ে নিষেধ করল ক্রিসি, উঁহু! মারা পড়বে! একটু এদিক ওদিক দেখলেই গুলি মেরে দেব। আমি যে সেটা পারব, তোমার বিশ্বাস করা উচিত।
বিশ্বাস করল মুসা। এখন আমাকে কি করতে হবে?
বললামই তো, রবিনকে খুন করো।
তাতে আমার লাভটা কি হবে? বন্ধুকে খুন করব। তাকে খুনের দায়ে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ
নিতে যাতে না পারে, সে ব্যবস্থা আমি করতে পারি। তবে এক শর্তে।
বলে ফেলুন।
আমাদের দলে যোগ দিতে হবে।
শয়তানের দলে!
শয়তানকে ঘৃণা করা উচিত না। শয়তান ভীষণ ক্ষমতাশালী। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি জানি, গুরুরও হবে। তোমার মত ছেলে আমাদের দরকার।
ঘুম ভেঙেছে অনেকক্ষণ। তারপর চমকের পর চমক। আস্তে আস্তে ঘোরটা কেটে যাচ্ছে মুসার। মাথার ভেতরটা পরিষ্কার হয়ে আসছে। কেন এই ঘোর, শরীর খারাপ লাগা, মাথা ধরা, দুঃস্বপ্ন দেখা, তা-ও অনুমান করতে, পারছে এখন। ম্যাসাজ করার আগে দুটো করে বড়ি খাইয়েছে ওকে ক্রিসি। নিশ্চয় তার মধ্যে ভয়ঙ্কর নেশা জাতীয় কোন জিনিস দিত। আফিম-টাফিম জাতীয় কিছু। বলল, কিন্তু আপনার কথায় বিশ্বাস কি?
বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন পথ নেই এখন তোমার। তবে সত্যি বলছি, তোমাকে দিয়ে আমাদের দলের অনেক কাজ হবে। সেজন্যেই তোমাকে মারব না। তা ছাড়া শুরুতেই একটা খুন করে ফেলে সাধনার একটা বড় ধাপ ডিঙিয়ে যাবে তুমি। এরপরের ধাপগুলো ডিঙানো খুব একটা কঠিন হবে না তোমার জন্যে। মহাক্ষমতাধর হয়ে যাবে তুমি অল্প বয়েসেই। আবার পিস্তল নাচাল ক্রিসি, ভেবে দেখো, কোনটা করবে? বেঁচে থেকে ক্ষমতাশালী হবে, না অকালে ধ্বংস হবে?
ভাবল মুসা। ক্ষমতাশালীও হতে চায় না, ধ্বংসও হতে চায় না। ঘাড় কাত করল, ঠিক আছে, আমি রাজি। হাত বাড়াল, দিন পিস্তলটা।