গাড়িতে উঠে কিশোরকে সব জানাল রবিন। তারপর বলল, ব্যাপারটা মোটেও ভাল ঠেকছে না আমার, কিশোর। ক্লডিয়া মুসাদের বাড়ি গেল কেন?
তাই বললেন নাকি মিস্টার নিউরোন? নিশ্চয় তত্ত্বাবধায়কের কাজে গেছে, তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল কিশোরের গলা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মারলার কাটা আঙুল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসাকে জানানোর জন্যে ক্লডিয়াকে জরুরী কোন মেসেজ দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক। জলদি যাও এখন মুসাদের বাড়িতে।
ক্ষতির আশঙ্কা করছ নাকি তুমি?
সে তো বটেই।
কি ক্ষতি?
স্টার্ট দাও, বলছি। তোমার নামটা নেই কেন চিঠিতে, বুঝে ফেলেছি আমি। রবিন, ভয়ানক বিপদের মধ্যে রয়েছ তুমি আর মুসা!
.
১৪.
চোখ মেলল মুসা। আবার দুঃস্বপ্ন দেখেছে। কদিন ধরে যে কি হয়েছে তার বুঝতে পারছে না। ঘুমালেই দুঃস্বপ্ন দেখে।
ছাতের দিকে চোখ পড়ল। পরিচিত ছাত। নিজেদের বাড়ি।
পাশ ফিরে তাকাল। বিড়ালের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে সোফায় ঘুমাচ্ছে। ক্রিসি। নিজের ঘরে যেমন ঘুমাত, তেমনি ভাবেই। কিছুতেই ওকে বিছানায় শুতে রাজি করাতে পারেনি মুসা।
হাত-পা টানটান করে দিয়ে আড়মোড়া ভাঙল মুসা। পা লম্বা করে দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে এল বিছানা থেকে। মুখের ভেতরটা শুকনো। মাথা ধরেছে। কদিন ধরে এই ব্যথাটা লেগেই আছে, কখনও টিপ টিপ করে, কখনও তীব্র। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়েও পুরোপুরি সারানো যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে অদ্ভুত একটা ঘোর লাগা ভাব। সেই সঙ্গে ক্লান্তি। বহুবার বলেছে ক্রিসিকে। গুরুত্বই দেয়নি সে। হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।
জানালার কাছে এসে বাইরে রাতের শহরের দিকে তাকাল সে। নির্জন রাস্তা। পৃথিবী মনে হচ্ছে না। যেন অন্য কোন গ্রহ। নিজের শরীরটাকেও নিজের লাগছে না তার। পেশিতে পেশিতে ব্যথা। একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো। কোনমতেই তাকে কাছছাড়া করতে চাইছে না ক্রিসি। কোন না কোন ছুতোয় সঙ্গে রয়ে যাচ্ছে। বিকেলে মীটিং থেকে ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল নিজের বাসায়। মুসা রাজি হয়নি। শেষে যেচে-পড়েই ওর সঙ্গে চলে এসেছে ওদের বাড়িতে। খানিকটা গাইগুই করলেও চক্ষুলজ্জায় সরাসরি মানা করতে পারেনি মুসা।
কিন্তু কেন?
কি চায় ওর কাছে ক্রিসি?
কেন ওর সঙ্গে ছায়ার মত লেগে আছে?
এতদিনে বুঝে গেছে শুধু ম্যাসাজ করার জন্যে ওকে ডেকে নেয়নি সে। তাকে দিয়ে কিছু একটা করাতে চায়। যে কারণে আটকে রেখেছে। নিজের চোখে চোখে রেখেছে। কি করতে হবে সেটা এখনও বলেনি। তবে বলবে। শীঘ্রি। অনুমান করতে পারছে মুসা।
গেট দিয়ে একটা গাড়ি ঢুকল। এঞ্জিনের আওয়াজ শোনা গেল। গাড়ি বারান্দায় এসে থামল গাড়িটা।
ফিরে তাকাল মুসা।
জেগে গেছে ক্রিসি। ওর সবুজ চোখ পুরোপুরি সজাগ। ঘুমের সামান্যতম ছোঁয়া নেই। বিড়ালের মত। বিড়াল যেমন জাগার সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে যায়, ঠিক তেমনি।
এত রাতে কে? দরজার দিকে এগোতে গেল মুসা।
বাধা দিল ক্রিসি। দাঁড়াও ডাকুক আগে। তোমার কাছেই এসেছে।
সদর দরজায় ঘণ্টা বাজল। চোখের ইশারা করল ক্রিসি, এবার যাও। সাবধান থাকবে।
কেন?
যা বললাম কোরো। আমার কথার অবাধ্য হলে বিপদে পড়বে।
থমকে গেল মুসা। হুমকি দিল নাকি ওকে ক্রিসি? ওর কণ্ঠস্বর এরকম বদলে গেছে কেন?
আবার ঘণ্টা বাজল। ক্রিসির ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে এগোল মুসা। নিচে নেমে দরজা খুলে দিল। ও ভেবেছিল রবিন কিংবা কিশোর হবে। কিন্তু ক্লডিয়াকে আশা করেনি। ওর হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ।
তুমি!
হ্যাঁ, ভোতা, শুকনো গলায় বলল ক্লডিয়া, তোমার জন্যে এনেছি এটা। ব্যাগটা বাড়িয়ে দিল, নাও। যা খুশি করো এটা নিয়ে।
ব্যাগটা নিল মুসা, ঘটনাটা কি, বলো তো?
মারলা তার কাজ সেরে চিঠিটা পৌঁছে দিয়েছে আমাকে, কেমন যান্ত্রিক গলায় বলল ক্লডিয়া। ওকে যা করতে বলা হয়েছে সে করেছে। আমাকে যা বলা হয়েছে এখন আমি সেটা করলাম।
কে বলেছে?
তত্ত্বাবধায়ক। আমাদের ডাকবাক্সে একটা নোট পেয়েছি। দুটো মেসেজ লেখা আছে তাতে। একটা আমার জন্যে। একটা তোমার জন্যে। ব্যাগের মধ্যে আছে সেটা। আর একটা পিস্তল আছে।
পিস্তল?
হ্যাঁ, আমার আব্বারটা। তত্ত্বাবধায়ক তোমার কাছে পৌঁছে দেয়ার হুকুম দিয়েছে আমাকে। মেসেজ পড়লেই সব জানতে পারবে। যা যা দিলাম এই ব্যাগে, সব তোমার প্রয়োজন হবে।
এই সময় মুসার পাশে এসে দাঁড়াল ক্রিসি।
দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল ক্লডিয়ার। এক পা পিছিয়ে গেল।
দাত বের করে দরাজ হাসি হাসল ক্রিসি। পিস্তলটাতে গুলি আছে তো, ক্লডিয়া?
ঢোক গিলল ক্লডিয়া। আপনাকে চেনা চেনা লাগছে?
চেনা মানুষকে তো চেনাই লাগবে, রহস্যময় কণ্ঠে জবাব দিল ক্রিসি। সময় যাক, আরও ভাল করে চিনতে পারবে। তোমাকে যা করতে বলা হয়েছে, করেছ নিশ্চয় ঠিকঠাক মত?
আ-আপনাকেও কিছু করতে বলেছে নাকি তত্ত্বাবধায়ক?
হেসে উঠল ক্রিসি। কথা কম বলো। ভাগো এখন, যাও। ক্লডিয়ার মুখের ওপর দড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিল সে। মুসার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ব্যাগ খোলো।
ব্যাগের ভেতরে হাতড়াতে লাগল মুসা। ক্লডিয়া তার বাবার পিস্তলটা নিয়ে এসেছে। বের করে হাতে নিল। বলে গেছে গুলি ভরা আছে। দেখার প্রয়োজন বোধ করল না সে। মাথার মধ্যে কেমন করছে। ঘোরটা যেন। বাড়ছে। গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। এমন লাগছে কেন?