কাছে এসে দাঁড়াল কিশোর, কি?
দেখো তো চিনতে পারো নাকি?
একবার তাকিয়েই বলে উঠল কিশোর, বিকেলে মুসাকে ডেকেছিল যে সেই মেয়েটার মত না?
মাথা ঝাঁকাল রবিন। হ্যাঁ। কেবল চুলের রঙ বাদে।
ফিরে তাকাল কিশোর, মিস্টার জবার, সারাহর কোন যমজ বোন ছিল?
না তো! উঠে এলেন তিনি। কেন?
ছবির দিকে আঙুল তুলল কিশোর, আজ বিকেলে অবিকল এই চেহারার একটা মেয়েকে দেখেছি আমরা।
কাকে দেখেছ কে জানে। আমার মেয়ে মারা গেছে পনেরো দিন আগে। ওকে দেখতেই পারো না।
কিন্তু দেখেছি, জোর দিয়ে বলল রবিন, কোন সন্দেহ নেই আমার।
অসম্ভব! জোর দিয়ে বললেন মিস্টার জবার।
দ্বিধায় পড়ে গেল রবিন, চেহারার তো কোন অমিল নেই। চুলের রঙে মিলছে না যদিও। কিন্তু সেটাও কোন ব্যাপার নয়। হেয়ার ড্রেসারের দোকানে গিয়ে যে কেউ লাল চুলকে সোনালি করিয়ে নিতে পারে।
ঠিক বলেছ, ওর সঙ্গে একমত হয়ে বলল কিশোর। মিস্টার জবার, আপনি যা-ই বলুন না কেন, আপনার মেয়ে বেঁচে আছে…
কি বলছ তোমরা মাথায় ঢুকছে না আমার! নিজের চোখে ওকে মর্গে মৃত দেখে এলাম…
কিন্তু পরদিন গিয়ে আর লাশটা খুঁজে পাননি…
পাইনি। তাতে অত অবাক হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ গায়েব হওয়াটা নতুন ঘটনা নয়। কঙ্কাল বিক্রির লোভে ডোমেরাই অনেক সময়…
উত্তেজিত হয়ে সবাই কিছুটা জোরে জোরে কথা বলা শুরু করেছিল, তাতে ঘুম ভেঙে গেল মিসেস জবারের। ভেতরের ঘর থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, গ্যারি, কার সঙ্গে কথা বলছ?
কারও সঙ্গে না, মাই ডিয়ার, জবাব দিলেন মিস্টার জবার। ঘুম আসছে না তো, একা একাই। তুমি ঘুমাও। আমি আসছি একটু পরেই, রবিন আর কিশোরের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে ফিসফিস করে বললেন, জলদি পালাও। তোমাদের দেখলে সারারাতেও আর ঘুমাবে না। বকবক করতেই থাকবে।
বকবকে কিশোরেরও বড় ভয়। রবিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল। দরজার কাছে গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল, মিস্টার জবার, পরে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
রবিনকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল সে। বাইরে বেরিয়েই বলে উঠল, সারাহকেই দেখেছি আমরা। সেরাতে মারা যায়নি সে। হার্ট অ্যাটাকে অনেক সময় কমাতে চলে যায় মানুষ। মৃত্যুর সমস্ত লক্ষণ ফুটে ওঠে শরীরে। ডাক্তাররাও ভুল করে ফেলেন। সারাহর ক্ষেত্রেও নিশ্চয় ওরকম কিছু ঘটেছিল। হুঁশ ফেরার পর পালিয়েছে।
হ্যাঁ, এটা হওয়া বিচিত্র নয়। এমনও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকটা ছিল তার বাহানা। মেডিটেশন করে করে এত ক্ষমতাই অর্জন করেছে, ইচ্ছে করলে সুপ্তির এমন এক জগতে চলে যেতে পারে, যাতে মনে হয় মরেই গেছে…অনেক পীর-ফকির তো এসব করেই মানুষকে ধোকা দেয়
জানি! চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর। জলদি গাড়িতে ওঠো। মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে।
ক্লডিয়াদের ওখানে যাব না?
যাও। ওকে সাবধান করা দরকার। তাড়াতাড়ি করো।
*
এত রাতেও ক্লডিয়াদের গেট খোলা। হাঁ হয়ে খুলে আছে। হয় কেউ গাড়ি নিয়ে ঢুকেছে, ঢোকার পর আর বন্ধ করেনি। নয়তো কেউ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে। লাগানোর সময় ছিল না।
সোজা গাড়িবারান্দায় ঢুকল রবিন। গাড়ি থামাল। নেমে গিয়ে বেল বাজাল। খুলে দিলেন কুড়িয়ার বাবা মিস্টার নিউরোন। পরনে পাজামা। ঘুম থেকে উঠে এসেছেন। রবিনকে চেনেন।
এত রাতে তোমারও দরকার পড়ল নাকি ক্লডিয়াকে? কণ্ঠস্বরেই বোঝা গেল মেজাজ ভারী হয়ে আছে তার। কোন কারণে খাপ্পা। পুলিশের লোক। চোর-ডাকাত নিয়ে কারবার। মেজাজ খিঁচড়ে থাকাটা অস্বাভাবিক না।
মানে! অবাক হলো রবিন। কি বলছেন, আঙ্কেল? আরও কেউ এসেছিল নাকি?
কি যে সব হয়েছে আজকাল তোমাদের, বুঝি না! আমাদের কি অমন বয়েস ছিল না নাকি? রাত দুপুরে যত্ত সব জরুরী কাজ পড়ে গেল সবার। তোমার দেখা করাটাও নিশ্চয় জরুরী?
সত্যি বলছি, আঙ্কেল, আসলেই জরুরী। ক্লডিয়াকে একটু ডেকে দেবেন, প্লীজ?
ও কি বাড়ি আছে নাকি যে ডেকে দেব। খানিক আগে মারলা এসেছিল। হাতে করে একটা পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে এসেছিল। ডান হাতে তোয়ালে জড়ানো। কি যে বলল ক্লডিয়াকে কে জানে। একটু পরেই দেখি হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছিস? বলে, মুসাদের বাড়ি। …কেন?: জরুরী কাজ আছে। এজন্যেই তো বলছি রাত দুপুরে এমন কি কাজ পড়ে গেল যে… সরাসরি রবিনের দিকে তাকালেন মিস্টার নিউরোন। কোথাও যাওয়ার কথা আছে নাকি তোমাদের?
আছে বলাটাই নিরাপদ ভেবে তা-ই বলে দিল, রবিন। পুলিশী সন্দেহ এবং জেরা এড়ানোর জন্যে। জেরার মধ্যে পড়লেই ফাস করে দিতে হবে সব। কোন উপায় থাকবে না। তার পেট থেকে সমস্ত কথা আদায় করে নেবেন মিস্টার নিউরোন। এখনও সব কথা পুলিশকে জানানোর জন্যে তৈরি নয় ওরা।
বেরোনোর সময় সঙ্গে করে কিছু নিয়ে গেছে? জানতে চাইল রবিন।
হ্যাঁ। একটা পলিথিনের ব্যাগে করে কি যেন নিয়ে গেল।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আঙ্কেল। শুধু শুধু এত রাতে কষ্ট দিলাম। সরি।
কিন্তু ঘটনাটা কি…কোথায় যাচ্ছ তোমরা?
পর্বতে, বলার সময় মিস্টার নিউরোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রাখল রবিন। মিথ্যে কথা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে। তাড়াতাড়ি এসে গাড়িতে উঠল।
দরজায় দাঁড়িয়ে তখনও ওদের দিকে তাকিয়ে আছেন মিস্টার নিউরোন। চিন্তিত মনে হচ্ছে তাকে। হাজার হোক পুলিশের লোক। সন্দেহটা বোধহয় ঠিকই করে বসেছেন।