একটা কথা, বাধা দিয়ে বলল কিশোর, ওর চুলের রঙটা বলতে পারেন?
সোনালি।
হু! চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার কিশোর।
একথা কেন জানতে চাইলে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
আছে, কারণ আছে। মিসেস ব্রেক, আপনি বলুন।
মায়া নামের কোন মেয়েকে খুঁজে বের করতে পারল না পুলিশ। ডেভিকেও না। ওর সন্ধান জানার চেষ্টা করতে লাগলাম আমি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম। জানতাম, আর কোনদিন ফিরে আসবে না আমার ছেলে। খুন করে কোথাও ফেলে দেয়া হয়েছে ওকে। তবু, মায়ের মন বুঝ মানল না, দিলাম। এক রাতে পুলিশ ফোন করল। স্যান বার্নাডিনো ভ্যালি হাসপাতালে যেতে অনুরোধ করল আমাকে। একটা মেয়ের লাশ নাকি নেয়া হয়েছে। হাসপাতালে যার সঙ্গে মায়ার চেহারা মিলে যায়।
যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না, পুলিশের অনুরোধ এড়াতে না পেরেই গেলাম। দেখা হলো মায়ার মা-বাবার সঙ্গে। মায়াকে শনাক্ত করলাম। ওর আসল নাম সারাহ। হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেছে। মরার আগে নাকি অদ্ভুত কাণ্ড করছিল সে। একটা বেড়াল বলি দিয়ে সারা গায়ে রক্ত মেখে, কালো মোম জ্বেলে, ঘরের মেঝেতে তারকা একে তার ওপর বসে শয়তানের উপাসনা করছিল। কিছুদিন থেকেই মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার বাবা। চিৎকার শুনে তার ঘরে গিয়ে দেখেন মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আছে মেয়ে। অবস্থা খারাপ দেখে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। হাসপাতালে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা গেল সে। মরার আগে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে ডেভিকে সে খুন। করেছিল।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত চুপ করে থেকে দম নিলেন তিনি। তারপর রবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ডেভিকে তোমরা খুন করোনি। খুন করে মরুভূমিতে ফেলে রেখে এসেছিল তাকে মায়া।
কত তারিখ ছিল সেটা? জানতে চাইল কিশোর।
জুলাইর একতিরিশ।
রবিনের দিকে তাকাল কিশোর, ওই দিনই তোমরা অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলে না?
হ্যাঁ
মাথা ঝাঁকাল কিলোর। মিসেস ব্রেকের দিকে ফিরল, তারপর?
মিসেস ব্রেক বললেন, সারাহ নিজের মুখে স্বীকার করেছে ডেভিকে ওইদিন খুন করেছে সে। ওইদিনই রাতে বেড়াল বলি দিয়ে উপাসনা করেছে। ওইদিনই মারা গেছে। হাসপাতালের মর্গে নিজের চোখে ওর লাশ দেখেছি। আমি। শুধু আমি একা নই, ওর মা-বাবাও দেখেছেন। ডাইনী তো আর হতে পারল না। শুধু শুধু ছেলেটাকে আমার খুন করল।
আবার একটা মুহূর্ত নীরব থাকার পর মিসেস ব্রেক বললেন, সবই বললাম তোমাদের। ডেভির লাশটা যে খুঁজে পেয়েছ তোমরা, শেয়াল-কুকুরে খাওয়ার জন্যে ফেলে না রেখে কবর দিয়ে এসেছ, সেজন্যে তোমাদের কাছে। আমি কৃতজ্ঞ। আবার গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল তার। কোনখানে দিয়েছ, মনে আছে? খুঁজে বের করতে পারবে?
পারব, মাথা কাত করল রবিন।
ঠিক আছে, একদিন নিয়ে যেয়ো আমাকে।
আচ্ছা।
আজ তাহলে উঠি আমরা, মিসেস ব্রেক? কিশোর বলল। অনেক রাত হলো। অনেক সময় নষ্ট করলাম আপনার..
সময় আর নষ্ট করলে কোথায়? বরং ডেভির খোঁজ জানিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞ করে দিলে। অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে। … কিশোর, সেরাতে তুমিও কি গাড়িতে ছিলে?
না, আমি ছিলাম না। বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমি তখন লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে বহুদূরে। রবিন আর মুসা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফিরে এসে যখন শুনলাম, মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মানুষ খুনের দায়ে ওরা জেলে যাবে, এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিল…
না জেনে শুধু শুধুই কষ্ট পেয়েছ তোমরা। খুন করেছে আরেকজন, ভোগান্তিটা গেল তোমাদের…
ওহহো, মিসেস ব্রেক, একটা কথা, কিশোর বলল, জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেছিলাম। মনে করতে হয়তো খারাপ লাগবে আপনার। তবু এত কথা যখন বললেন, এটাও জেনেই নিই। কিভাবে খুন করেছিল সারাহ, বলেছে?
কেঁপে উঠলেন মিসেস ব্রেক। ঠোঁটের কোণ কুঁচকে গেল। ঘুমের মধ্যে মাথার চাঁদিতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চোখা একটা পেরেক ঢুকিয়ে দিয়েছিল ডাইনীটা…
আর বলতে পারলেন না মিসেস ব্রেক। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
তাকে শান্ত হওয়ার সময় দিল কিশোর। রবিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, পেরেক-টেরেক কিছু দেখেছিলে তোমরা?
নাহ, মাথা নাড়ল রবিন। অত কিছু দেখার মত অবস্থা ছিল না কারও। সবাই খুব অস্থির হয়ে পড়েছিল। আতঙ্কিত।
হু। তারমানে খুজলে এখনও চাদিতে পেরেকটা পাওয়া যাবে।
চাদিতে পেরেক ঢোকালে তো মাথা থেকে রক্ত বেরোত। ঠোঁটের কোণ থেকে কেন?
সরু পেরেক ঢোকালে রক্ত আর কতটা বেরোবে? সামান্যই। ব্যথার চোটে মরার আগে নিশ্চয় জিভে কামড় লেগে গিয়েছিল ডেভনের। জিভ কেটে রক্ত বেরিয়ে ঠোঁটের কোণে লেগে গিয়েছিল। উঠে দাঁড়াল কিশোর। মিসেস ব্রেককে সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পেল না। কোনমতে বলল, আজ তাহলে যাই, মিসেস ব্রেক…
বোসো। যাওয়ার আগে আরও একটা অদ্ভুত খবর শুনে যাও। পরদিন সারাহর বাবা মিস্টার জবার মর্গ থেকে মেয়ের লাশ আনতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কবর দেয়ার জন্যে। পাওয়া যায়নি লাশটা। রহস্যময় ভাবে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও হদিস করতে পারেনি লাশটার কি হয়েছিল।
এটা একটা খবর বটে। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল কিশোর। মিস্টার জবারের ঠিকানাটা দিতে পারেন?।
নাম জানি। কোন শহরে বাস করেন সেটা জানি। কিন্তু ঠিকানা জিজ্ঞেস করিনি। পুরো নাম গ্রেগরি জবার। রিভারসাইডে থাকেন। ইনফরমেশন থেকে ওদের ফোন নম্বর জেনে নিতে পারলে ঠিকানা বের করা। কঠিন হবে না।