কিশোরেরও তো নেই। তাতে কি হয়েছে?
কিশোরের না থাকার একটা যুক্তি আছে। ও এখন রকি বীচে নেই। তা ছাড়া সেদিন রাতে আমাদের সঙ্গে গাড়িতেও ছিল না। কিন্তু আমি তো গাড়িতেও ছিলাম, বাড়ি থেকেও চলে যাইনি। আমারটা নেই কেন?
তোমার কথা ভুলে গেছে আরকি। সেজন্যেই তো বলছি, রসিকতা।
গম্ভীর হয়ে ভাবছে রবিন। তার বিশ্বাস, রসিকতা করেনি তত্ত্বাবধায়ক। যা করতে বলেছে, সত্যিই চায় সেটা করা হোক। নইলে বিপদ ঘটাবে। ওদের গোপন কথা জানে বলে কি বোঝাতে চেয়েছে? মরুভূমিতে ওরা যে। অ্যাক্সিডেন্টটা করে এসেছে সেটার কথা? এ ছাড়া আর তো কোন, গোপনীয়তা নেই ওদের।
কনসার্ট শুনতে গিয়েছিল সেদিন ওরা। চিঠিতে যাদের নাম রয়েছে, সবাই গিয়েছিল। দিন পনেরো আগে পঁচটা টিকেট এসেছিল ডাকে। কে পাঠিয়েছে জানা যায়নি। সকাল বেলা যার যার বাড়ির ডাকবাক্সে খামের মধ্যে একটা করে টিকেট পেয়েছে সবাই। সেই সঙ্গে একটা করে নোট। তাতে কার কার কাছে টিকেট পাঠানো হয়েছে, নাম লেখা ছিল। অবিকল একই ধরনের নোট পেয়েছে সকলেই।
ভেবেছে ওদেরই কোন বন্ধু মজা করার জন্যে একাজ করেছে। পরে বলে চমকে দেবে। কোনকিছু সন্দেহ না করে কনসার্ট দেখতে গিয়েছিল ওরা মরুভূমির কাছে একটা শহরে।
রাতের বেলা মরুভূমির মাঝের রাস্তা দিয়ে আসার সময় বাজি ধরে হেডলাইট নিভিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়েছিল ড্যানি। অন্ধকারে দেখতে পায়নি লোকটাকে। একটা তীক্ষ্ণ বাঁক পেরোতেই করল অ্যাক্সিডেন্ট। কিভাবে যে চাকার নিচে এসে পড়ল লোকটা বলতেও পারবে না সে। গায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিল। মারা গিয়েছিল লোকটা। পরিচয় জানার জন্যে অনেক চেষ্টা করেছে ওরা। পকেটে মানিব্যাগ ছিল না, আইডেন্টিটি ছিল না, ভিজিটিং কার্ড ছিল না লোকটার। সে যে কে, জানার কোন উপায় ছিল না। ওকে নিয়ে, কি করা যায়, একেকজন একেক কথা বলা শুরু করল। কেউ বলল পুলিশকে জানাতে, কেউ করল বিরোধিতা। পুলিশকে জানাতে গেলে বিপদে পড়ার ভয়ে শেষে মরুভূমির মাঝেই লোকটাকে কবর দিয়ে এসেছে ওরা। এ কাজে মুসা আর রবিনের একেবারেই মত ছিল না। ড্যানির আতঙ্কিত অবস্থা দেখে আর অনুরোধ ঠেকাতে না পেরে শেষে চুপ হয়ে গেছে,
রবিনের দিকে তাকাল মারলা। তুমিও মনে হয় চিঠিটাকে সোফির মত সিরিয়াসলি নিয়েছ?
হ্যাঁ, না নিয়ে উপায় নেই। আমাদের গোপন কথা জানে বলেছে। আর গোপন কথাটা যে কি, সেটা তুমিও জানো, উঠে দাঁড়াল রবিন। মুসা আর ড্যানির সঙ্গে কথা বলতে হবে।
ক্লডিয়াই বা বাকি থাকে কেন তাহলে? মারলা বলল। আমি নিজে তাকে ফোন করে জানিয়ে দেব যে তার চিঠিটা পেয়ে পেটে মোচড় দেয়া শুরু হয়ে গেছে আমাদের। হেসে আরও গড়াগড়ি খাক।
মারলার ব্যঙ্গতে কান দিল না রবিন। চিঠিটা নিয়ে গিয়ে রাখল ফোনের পাশে। রিসিভার তুলে ডায়াল করল।
বাড়িতে নেই মুসা। ওর বাবা-মাও নেই। বেড়াতে গেছেন। আরও অন্তত এক হপ্তার আগে ফিরবেন না। বাড়িতে একা থাকে মুসা। অ্যানসারিং মেশিনে মেসেজটা রেখে ড্যানির নম্বরে ডায়াল করল রবিন। তাকেও পাওয়া গেল না। আবার অ্যানসারিং মেশিনে মেসেজ রাখতে হলো। তারপর খানিকটা দ্বিধা করেই ক্লডিয়াদের বাড়ির নম্বরে ফোন করল। সে-ও বাড়িতে নেই। এই ছুটির সময়টায় কাউকে পাওয়া যায় না। সবাই যেন বাড়ি ছাড়ার জন্যে অস্থির হয়ে ওঠে। অগত্যা ওখানেও অ্যানসারিং মেশিনে মেসেজ রাখতে হলো।
রিসিভার নামিয়ে রেখে এসে বলল রবিন, কারও ফোন না আসা পর্যন্ত ভাবছি এখানেই বসে থাকব।
কি যে বলো না, মুখ বাঁকাল মারলা। ফালতু একটা চিঠির জন্যে ঘরে বসে থাকব? সারাটা দিন নষ্ট! ঠিক আছে, তোমাদের ইচ্ছে হলে থাকো। আমি যাচ্ছি। হাত বাড়াল রবিনের দিকে, গাড়ির চাবিটা দাও। মলে আমাকে যেতেই হবে।
চুপ করে বসে থাকো তো! কিছুটা কড়া স্বরেই বলল রবিন। তোমাদের চাপে পড়ে একটা বোকামি তো করেই এসেছি সেদিন মরুভূমিতে। আর কোন কথা শুনছি না। গোপন কথা জানে যদি না বলত, পাত্তা দিতাম না। আমাদের দলের বাইরের কেউ যদি হয়ে থাকে, জেল খাঁটিয়ে ছেড়ে দিতে পারবে। রেকমেইল করে ঘুম-খাওয়া হারাম করে দিতে পারবে। এখন আমাদের সবার একসঙ্গে থাকা দরকার। কিছু ঘটলে একসঙ্গে সেটাকে ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
হাল ছেড়ে দিয়ে নিরাশ ভঙ্গিতে একটা চেয়ারে বসে পড়ল মারলা। অহেতুক দুশ্চিন্তা করছ তোমরা, আমি বলে দিলাম।
তোমার কথা সত্যি হলে তো বাঁচি।
এই সময় রান্নাঘরে ঢুকল সোফির কুকুরছানাটা। কাছে এসে আদর করে মনিবের হাত চাটতে শুরু করল। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল সোফি। মুখে। উদ্বেগের হাসি।
যে যতই বলুক আর ভয় দেখাক, দৃঢ়কণ্ঠে বলল সে, টমিকে আমি চুবিয়ে মারতে পারব না।
প্রশ্নই ওঠে না, তার সঙ্গে সুর মেলাল রবিন। আরেকবার তাকাল অদ্ভুত চিঠিটার দিকে। দেখাই যাক না, কি করতে পারে সে!
.
০২.
বাড়ি থেকে বেরিয়ে মলে চলে এল মুসা। সেরাতে মরুভূমির ঘটনাটার পর মন প্রায় সময়ই খারাপ থাকে। খারাপ হয়ে আছে মনটা। খিদেও পেয়েছে। কিশোর নেই, নাহলে স্যালভিজ ইয়ার্ডে গিয়ে আড্ডা দিতে পারত। রবিনও থাকছে ব্ল্যাক ফরেস্টে ওদের গোস্ট লেনের বাড়িতে।
রোদের মধ্যে গাড়িটা পার্ক করে রেখে একটা খাবারের দোকানে ঢুকল সে। আগে খেয়ে নেয়া যাক। তারপর ভাববে কোথায় যাবে। ম্যাকডোনাল্ডের তৈরি চিকেন বার্গার, পটেটো ফ্রাই আর কোকের অর্ডার দিল। সে। এই দোকানে পার্ট টাইম চাকরি করে সোফি। ওকে না দেখে ক্যাশিয়ারকে জিজ্ঞেস করল সোফির কথা। ক্যাশিয়ার বলল, ডিউটি শেষ। করে চলে গেছে সোফি। সেদিন আর আসবে না।