মানে, পুলিশকে সবকথা জানানোর আগে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। হ্যাঁ। দেখি আরেকটু সময় নিয়ে, আর কিছু বের করতে পারি কিনা।
তত্ত্বাবধায়ক ধরা পড়লে খুন হওয়ার আর ভয় থাকবে না আমাদের, এটা ঠিক। মুখ বাকাল ক্লডিয়া। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট করে মানুষ খুনের দায় থেকে রেহাই পাব না কোনমতে।
সেটা পরের কথা, পরে দেখা যাবে। এখনকার বিপদ থেকে আগে বাঁচা দরকার।
ব্রেকের দোকানে গিয়ে কি জানলে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
ডেভনের চাচার সঙ্গে কথা বলেছি। বিশেষ সাহায্য-সহায়তা করল না। ও নিশ্চয় কিছু জানে। কিন্তু চেপে গেল আমার কাছে। অনেক চাপাচাপি করে ডেভনদের বাড়ির ঠিকানা আদায় করে এনেছি।
ওর মা যেখানে থাকে?
হ্যাঁ
দেখা করেছ?
না। যাব এখন।
আমিও যাব।
চলো।
মীটিং এখানেই শেষ। মারলার দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, বাড়ি গিয়ে চুপ করে বসে থাকোগে। আমার ওপর ভরসা রাখো। তোমার একটা চুলও ছিঁড়তে পারবে না তত্ত্বাবধায়ক
গাড়ির হর্ন শোনা গেল।
ঘনঘন হর্নের শব্দে ফিরে তাকাল সবাই। সোনালি চুল একটা মেয়ে হাত নেড়ে মুসাকে ডাকছে।
ও-ই ক্রিসি, উঠে দাঁড়াল মুসা। কি জন্যে এল আবার… পা বাড়াল ও গাড়ির দিকে।
.
১২.
সান্তা মনিকায় ছোট একটা লাল ইটের বাড়িতে থাকেন মিসেস ব্রেক। কিন্তু পাওয়া গেল না তাকে। বার বার দরজার ঘণ্টা বাজিয়েও সাড়া মিলল না। বাড়ি নেই। তারমানে দেখা করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে।
বাড়িটার আশেপাশে খানিকক্ষণ ঘুরঘুর করল কিশোর আর রবিন। লোকে কিছু বলে না, তবে সন্দেহের চোখে তাকায়।
এ ভাবে ঘোরাঘুরি না করে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসার পরামর্শ দিল রবিন। খাওয়াও যাবে, বসারও ব্যবস্থা হবে।
খাওয়া সারতে ইচ্ছে করে অনেক দেরি করল ওরা। বেরিয়ে এসে আবার মিসেস ব্রেকের দরজার ঘণ্টা বাজাল। এবারেও সাড়া নেই। তারমানে এখনও ফেরেননি।
খাওয়া তো হলো। আর কি করে সময় কাটানো যায়? ভাবতে লাগল। ওরা। কিশোর বলল, চলো, সিনেমা হলে গিয়ে বসে থাকি।
অতএব গেল সেখানেই। একটা সায়ান্স ফিকশন ছবি। ভবিষ্যতের মানুষদের কাহিনী। যারা মানব-জীবনের ওপর বিরক্ত হয়ে গিয়ে রোবট হয়ে যেতে চায়। সীটে বসে ঘুমিয়ে পড়ল রবিন। আগের রাতে ড্যানির মৃত্যুসংবাদ শোনার পর আর ঘুমাতে পারেনি। কিশোর পর্দার দিকে তাকিয়ে রইল আনমনা হয়ে।
ছবি শেষ হলে রবিনকে ডেকে তুলল সে। রাত দশটা বাজে।
ঘুম খারাপ হয়নি। শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে রবিনের।
হল থেকে বেরিয়ে আবার মিসেস ব্রেকের বাড়ি চলল ওরা।
এবার পাওয়া গেল তাঁকে। একবার বেল বাজাতেই খুলে দিলেন। দুজনের ওপর নজর বোলাতে লাগলেন। বলো?
মোটাসোটা, খাটো মহিলা। নার্ভাস ভঙ্গিতে বার বার ডান চোখটা কাঁপে। বয়েসের তুলনায় মাথার চুলে ততটা পাক ধরেনি। ক্লান্ত লাগছে তাকে।
মিসেস ব্রেক? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
মহিলা মাথা ঝাঁকাতে পরিচয় দিল সে, আমার নাম কিশোর পাশা। ও আমার বন্ধু, রবিন।
আপনার নিখোঁজ ছেলের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি আমরা, বলে ফেলল রবিন।
ঘাবড়ে গেল কিশোর। এখনই এটা বলা উচিত হয়নি রবিনের। যদি মানা করে দেন মহিলা, কথা বলবেন না, বিফল হয়ে ফেরত যেতে হবে। কষ্ট করে এতক্ষণ সময় কাটানোর কোন অর্থ থাকবে না।
তবে মহিলা ওদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলেন না। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর।
আমি কিছু বুঝতে পারছি না…? মহিলা বললেন কি বলতে এসেছ?
আপনার ছেলের কি হয়েছে জানি আমরা, কিশোর বলল। সব ঘটনা আপনাকে খুলে বলতে চাই। ঘরে আসব?
ডেভিকে তোমরা চিনতে? অনিশ্চিত শোনাল মহিলার কণ্ঠ।
না, জবাব দিয়েই চট করে কিশোরের মুখের দিকে তাকাল রবিন, আবার বেফাঁস কিছু বলে ফেলল কিনা বোঝার জন্যে। তার কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে বলল, ওকে কবর দিতে সাহায্য করেছে যারা, তাদের মধ্যে আমি একজন।
কেঁপে উঠলেন মিসেস রেক। কে তোমরা?
নাম তো বললামই, জবাব দিল কিশোর। আমরা শখের গোয়েন্দা।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত দুজনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন মহিলা। তারপর সরে জায়গা করে দিলেন, এসো।
বসার ঘরে ওদের বসতে দিয়ে বললেন, আমি কফি খাব। তোমরা খাবে?
কফি? কিশোর বলল, এসব জিনিস আমরা খুব একটা খাই না। ঠিক আছে, দিন এককাপ। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। সেই কখন থেকে এসে আপনার বাড়ির কাছে ঘুরঘুর করছি দেখা করার জন্যে…
আমার বোনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বোলো এক মিনিট। নিয়ে আসছি।
রান্নাঘরে চলে গেলেন মিসেস ব্রেক
ঘরের চারপাশে চোখ বোলাতে গিয়ে দেয়ালে ঝোলানো একটা বাধানো ফটোগ্রাফ চোখে পড়ল রবিনের। কিশোরের গায়ে কনুইয়ের গুতো দিয়ে বলল, ওই যে, ডেভন।
ছবিটার দিকে তাকিয়ে কাঁটা দিল রবিনের গায়ে। ওর মনে হলো, ওরই দিকে তাকিয়ে আছে ডেভন। ছবির চোখে যেন নীরব জিজ্ঞাসা–কেন আমাকে এত তাড়াতাড়ি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলে? কি ক্ষতি আমি করেছিলাম তোমাদের? তাকিয়ে থাকতে পারল না সে। চোখ সরিয়ে নিল।
ট্রেতে করে কফি নিয়ে এলেন মিসেস ব্রেক। কেটলি থেকে কাপে কফি ঢালতে তাকে সাহায্য করল কিশোর।
ওদের মুখোমুখি চেয়ারে বসলেন মিসেস ব্রেক। কাপে চুমুক দিলেন। হ্যাঁ, বলো, কি বলতে এসেছ।
কনসার্ট দেখে ফেরার পথে মরুভূমিতে যা যা ঘটেছিল, খুলে বলল রবিন। কবর দেয়ার কথায় আসতেই নীরবে কাঁদতে শুরু করলেন মহিলা। রবিনের চোখেও পানি এসে গেল। পুলিশের কাছে কেন যায়নি ওরা এই কৈফিয়ত দিতে গিয়ে কথা আটকে যেতে লাগল তার মুখে।