চুপ করে রইল মুসা।
জবাব দিচ্ছ না কেন? ভুরু নাচাল মারলা। কি করে জানলে?
আমি ওকে ওখানে ফোন করেছিলাম। দেখলাম আছে নাকি। মানে, ভাল আছে নাকি।
কিন্তু জানলে কি করে ওখানে আছে?
মুখ নিচু করল মুসা। হাতের তালু দেখতে দেখতে জবাব দিল, জানি না।
দেখো, তুমি কিছু লুকাচ্ছ আমাদের কাছে। কঠোর হয়ে উঠল ক্লডিয়ার কণ্ঠ। দুদিন ধরে নাকি তোমার কোন পাত্তা নেই। রবিন বহুবার ফোন করেছে বাড়িতে, তোমাকে পায়নি। কোন বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতেও যাওনি। কোথায় ছিলে?
দ্বিধা করতে লাগল মুসা।
কোথায় ছিলে? আবার জিজ্ঞেস করল মারলা।
একটা মেয়ের বাড়িতে, অবশেষে জানাল মুসা।
তাজ্জব হয়ে গেল সবাই। মুসা আমান মেয়ের বাড়িতে থেকেছে।
কোন মেয়ে?
কে সে?
কি নাম?
কোথায় থাকে?
তোমরা চিনবে না, যেন মস্ত কোন অপরাধ করে ফেলেছে এমন ভঙ্গিতে জবাব দিল মুসা। নতুন পরিচয় হয়েছে।
কি নাম ওর? জানতে চাইল রবিন।
ক্রিসি। ক্রিসি ট্রেভার। আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় হবে।
ওখানে কেন গিয়েছিলে?
ম্যাসাজ করাতে। সেদিন গুডলাক ফাউনটেইনে বসে বারগার খাচ্ছিলাম। মেয়েটাও খাচ্ছিল। আমাকে পানিতে পয়সা ছুঁড়ে মারতে দেখে প্রশংসা শুরু করল। এভাবেই আলাপ। কথায় কথায় জানাল সে হাসপাতালে কাজ করে। আমিও একসময় বললাম আমার ঘাড়ের ব্যথার কথা। সে তখন বলল, খুব ভাল ম্যাসাজ করতে পারে সে। আমার ব্যথাটা কমিয়ে দিতে পারবে। ঠিকানা দিল, সময় করে যাওয়ার জন্যে। পরশুদিন স্কুলের মাঠে। দৌড়াদৌড়ি করে ব্যথাটা বাড়ালাম। ক্রিসির কথা মনে পড়ল। চলে গেলাম। ওর কাছে। খুকখুক করে কাশল মুসা। সত্যি, ভাল ম্যাসাজ করে ও। ব্যথাটা কমিয়ে দিয়েছে। সেদিন রাতেই চলে আসতে চেয়েছিলাম। আসতে দিল না। জোর করে ধরে রাখল। বলল, ওর ম্যাসাজ শেষ হয়নি। রোগীকে পূর্ণ সুস্থ না করে বাড়ি পাঠানো উচিত না। কি আর করব! কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল, জোরাজুরি করেও লাভ হলো না। আসতে দিল না তো দিলই না। নিজের বিছানা ছাড়া ঘুম আসে না বলাতে ঘুমের বড়ি খাইয়ে দিল।
কয়েক সেকেন্ড নীরবতার পর আবার আগের প্রসঙ্গে ফিরে গেল মারলা, ড্যানি যে আন্টির বাড়ি গেছে একথা জানলে কি করে তুমি, এখনও বলোনি কিন্তু।
কি বলব? হতাশ ভঙ্গিতে দুই হাত ওল্টাল মুসা।
কি করে জানলে?
অত দ্বিধা করছ কেন? মারলার সঙ্গে সুর মেললি রবিন।
বলতে তো পারি। কিন্তু বললে তোমরা বিশ্বাস করবে না।
কেন? না করার কি হলো? ব্যাপারটা কি বলো তো?
ভূত বিশ্বাস করি বলে তো সবাই হাসাহাসি করো আমাকে নিয়ে…
তারমানে বলতে চাও ভূতে খবরটা দিয়েছে? তীক্ষ্ণ হয়ে গেল মারলার কণ্ঠ।
মাথা নাড়ল মুসা, কে দিয়েছে জানি না। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখলাম। দেখি, ড্যানি আন্টির বাড়িতে গেছে। আমিও আছি সেখানে। রাতে গ্যারেজে একটা শব্দ শুনে দেখতে চলল সে। চিৎকার করে অনেক মানা করলাম। শুনল না। গ্যারেজে ঢুকল। ওখানে অপেক্ষা করছিল লোকটা। একটা ছায়ামূর্তি। বালতিতে করে ড্যানির গায়ে পেট্রল ছুঁড়ে দিয়ে ম্যাচের কাঠি জ্বেলে ছুঁড়ে মারল…উফ, এতই বাস্তব! এখনও দেখতে পাচ্ছি।
অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর ক্লডিয়া বলল, আশ্চর্য! স্বপ্ন যে মাঝে মাঝে সত্যি হয় এটাই তার প্রমাণ।…যদিও আমি বিশ্বাস করি নাঃ লোকটার চেহারা দেখেছ?
মাথা নাড়ল মুসা, না। অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল। ড্যানির গাড়ির রঙ তুলে ফেলেছিল সিরিশ দিয়ে ঘষে। ঘষার শব্দ করে কৌতূহল জাগিয়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ড্যানিকে:
আবার নীরবতা। কাশি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল কিশোর। যা ঘটার তো ঘটে গেছে, এখন আসল কথায় আসা যাক। যে কারণে আজকের এই মীটিং। আমার একটা পরামর্শ আছে। তোমাদের বাঁচার এখন সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পুলিশের কাছে গিয়ে সব জানিয়ে দেয়া।
হু, ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে ভরুক, ঝাঝাল কণ্ঠে বলল মারলা। তাহলে এতদিন গোপন রেখে লাভটা হলো কি?
কোন লাভই হয়নি। ক্ষতি হয়েছে বরং অনেক। জেলে ঢোকাটাই এখন তোমাদের জন্যে সবচেয়ে নিরাপদ। মরার চেয়ে জেলে যাওয়া ভাল।
কাঁপা গলায় মারলা বলল, কিন্তু এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যাটা ওখানেও আমাদের ছাড়বে না। ড্যানি কোথায় আছে তার জানার কথা নয়। মুসা। তাকে বলেনি। আর আমরা তো কেউ জানতামই না। কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সবজান্তা। অলৌকিক ক্ষমতা আছে ওর। দূর থেকে যেন অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে সোফির অ্যাক্সিডেন্ট ঘটাল, ড্যানি কোথায় আছে। জেনে নিয়ে পুড়িয়ে মারল…জেলের বদ্ধ জায়গায় আমরা একেবারেই অসহায় হয়ে যাব। বেরোতেও পারব না…
বাধা দিয়ে বলল কিশোর, মুক্ত থেকেই বা কি লাভ হলো ড্যানির? জেলেই বরং তোমরা নিরাপদ। ওখানে অন্তত পুলিশ থাকবে তোমাদের পাহারা দেয়ার জন্যে। তত্ত্বাবধায়কের সাধ্য হবে না ওদেরকে ফাঁকি দিয়ে জেলের মধ্যে ঢোকে:
যদি ভূত-প্রেত কিছু না হয়, বিড়বিড় করল মুসা।
ভূতফুত কিছু না। ও জলজ্যান্ত মানুষ। মারলার সর্বনাশ করার আগেই ওকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।
কোথায় আছে কি করে জানব? জিজ্ঞেস করল রবিন।
তাকে খুঁজতেই বেরিয়েছিলাম আজ সকালে।
কোন খোঁজ পেলে?
পত্রিকার অফিস থেকে কিছু বের করতে পারিনি। যারা বিজ্ঞাপন দিতে। আসে তাদের নামধাম পরিচয় গোপন রাখে ওরা। পুলিশ গিয়ে চাপাচাপি করলে অবশ্য না বলে পারবে না। তবে তার আগে আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে চাই।