মুসা ছিল কোথায় এতদিন, কিছু বলেছে?
জিজ্ঞেস করিনি। করতে মনে ছিল না। ড্যানির কথা শুনেই…
আমি আসব তোমার ওখানে?
না না! হঠাৎ, যেন বহু দূরাগত মনে হলো মারলার কণ্ঠ। কেউ আর, এখন আমার কাছে এসো না। আমার কাছ থেকে দূরে থাকো। আমি জানি। যে-কোন সময় একটা চিঠি এসে হাজির হবে আমার নামে!
কিন্তু মীটিং হওয়া দরকার আমাদের। আলোচনা করতে হবে। পুলিশকে খবর দিতে হবে। আর বসে থাকা যায় না।…অ্যাই, মারলা, আমার। কথা শুনছ?
লাইন কেটে দিয়েছে মারলা। ওকে আর ফোন করে লাভ নেই। ধরবে না।
কিশোরকে ফোন করল রবিন। ঘুম থেকে টেনে তুলল। সব কথা জানাল।
দীর্ঘ কয়েকটা মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর কিশোর বলল, এখন লাইনে। আছে মারলা। তারপর ক্লডিয়া। সবশেষে মুসা। কাল সকালের, ডাকেই একটা চিঠি পাবে মারলা, কোন সন্দেহ নেই তাতে। এই তত্ত্বাবধায়ক লোকটা মিথ্যে হুমকি দেয়নি। কাল অবশ্যই একটা মীটিং ডাকা উচিত তোমাদের। যাদের যাদের নাম আছে।
আমিও সেকথাই ভাবছি। সকালে?।
সকালে না, বিকেলে করো। আমিও আসতে পারব। সকালে কাজ আছে।
মারলা আর ক্লডিয়া মীটিঙে বসলে হয়। মারলা তো এখনই আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইল না। খবরটা দিয়েই লাইন কেটে দিয়েছে। ওর কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছে। কি করব বুঝতে পারছি না।
আলোচনায় বসতেই হবে। জায়গা ঠিক করো। বিকেলে হলে আমিও থাকব।
কি বোঝাবে ওদের? পুলিশের কাছে যেতে বলবে তো?
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে কিশোর বলল, দেখি, কি করা যায়।
সকালে কি কাজ তোমার?
ডেভনের দোকানে যাব। তোমাকে নিয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু উল্টো রাস্তা হয়ে যায়। বাসে করে চলে যেতে পারব। তোমার আসার দরকার, নেই। বরং বাড়িতে থেকে রেস্ট নাও। টাইমসের অফিসেও যাব একবার। বিজ্ঞাপনটা কে দেয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।
পারবে?
দেখা যাক। রাখি এখন। অত চিন্তা কোরো না। ঘুম না এলে বরং একটা ঘুমের বড়ি খেয়ে নাও। সকালে উঠে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করে রাখবে। সময় আর জায়গা ঠিক করে আমার অ্যানসারিং মেশিনে জানিয়ে রেখো। বাড়ি এসেই যাতে পেয়ে যাই।
আচ্ছা।
আর, রবিন…
বলো?
শয়তানটাকে ঠেকাতেই হবে আমাদের। আবার কারও ক্ষতি করার আগেই।
কিন্তু খুঁজে বের করব কিভাবে ওকে?
করব। যেভাবেই হোক। ছাড়ব না।
অত শিওর হচ্ছ কি করে?
অপরাধ করতে করতে এক না এক সময় ভুল করেই ফেলে অপরাধী। অপরাধ বিজ্ঞান তা-ই বলে। তত্ত্বাবধায়কের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হবে না। ঠিক আছে, রাখলাম। কাল দেখা হবে।
আচ্ছা।
লাইন কেটে দিল রবিন। এরপর ফোন করল মুসাদের বাড়ির নম্বরে।
.
১১.
পরদিন ব্ল্যাক ফরেস্ট পার্কে আবার মিলিত হলো ওরা। মারলা, ক্লডিয়া, রবিন আর মুসা। আজ দলের দুজন কম। সোফিও নেই, ড্যানিও নেই।
কেউ যেন কারও দিকে তাকাতে পারছে না। মুখ নিচু করে গম্ভীর হয়ে আছে।
সকালের ডাকে ঠিকই একটা চিঠি পেয়েছে মারলা। নামের স্তম্ভে ড্যানির নামটা নেই। সবার ওপরে এখন মারলার নাম। টাইমস পত্রিকায় পার্সোন্যাল সেকশনে একটা সাঙ্কেতিক বিজ্ঞাপন। মানে করলে হয়:
তোমার ডান হাতের তর্জনী কেটে কাটা আঙুল সহ চিঠিটা ক্লডিয়ার কাছে পাঠিয়ে দাও
কথা বলতে যাচ্ছিল ক্লডিয়া, কিন্তু ওকে থামিয়ে দিল রবিন। কিশোরের জন্যে অপেক্ষা করছে। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগেই ফোন করে কিশোরের অ্যানসারিং মেশিনে মেসেজ দিয়ে রেখেছে।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের উপত্যকা ধরে লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে এল সে।
ফিরে তাকাল সবাই।
গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে বসেছে মুসা। তার কাছে এসে সবার মুখোমুখি বসল কিশোর।
কথা শুরু করল রবিন, একটা কথা এখনও জানানো হয়নি তোমাদের। ওই লোকটা কে, জেনে ফেলেছে কিশোর।
কোন লোকটা? নেহাত সাদামাঠা স্বরে জানতে চাইল ক্লডিয়া।
সেই লোকটা। মরুভূমিতে যাকে খুন করেছি আমরা।
মুহূর্তে সতর্ক হয়ে উঠল সবাই। একটা ঘাসের ডগা চিবুচ্ছিল মুসা। তাড়াতাড়ি ফেলে দিয়ে বলল, খাইছে! বলো কি? কে?
ডেভন ব্রেক।
কে সে?
সান্তা বারবারার এক দোকানদার।
অ, কোন উৎসাহ পেল না ক্লডিয়া। এ কথা এখন জেনেই কি আর না জেনেই বা কি। লোকটা তো এখন মৃত। আমরা ওকে খুন করেছি। কিশোর, তোমার জন্যে আলোচনা আটকে দিয়ে বসে আছে রবিন। কি নাকি বলবে তুমি আমাদের?
হ্যাঁ, বলব, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তোমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে এমন কিছু পয়েন্ট আমি উল্লেখ করতে চাই। তবে তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও তো। ড্যানি কোথায় গিয়েছিল এ কথাটা তোমাদের মধ্যে কে জানতে?
কেউ না, মারলা জবাব দিল। কাউকে না জানিয়ে গিয়েছিল। উদ্দেশ্যটাই ছিল জেনে গিয়ে মুখ ফসকে কাউকে যাতে বলে না দিতে পারি আমরা, কোনমতেই তত্ত্বাবধায়কের কানে না যায়।
তা তাহলে তত্ত্বাবধায়ক কি করে জানল ও কোথায় গেছে? কিশোরের। প্রশ্ন।
কেউ জবাব দিতে পারল না।
এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল কিশোর। কেউ একজন নিশ্চয় জানো তোমরা। কে? মুসার দিকে তাকাল সে। মুসা, তুমি? তোমার সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল ড্যানির। বলে গেছে?
কিশোর ছাড়া অন্য সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠল মুসা, ও যে। ওর আন্টির বাড়ি গিয়েছিল, এ কথা জানতাম আমি।
কি করে? প্রায় চিৎকার করে উঠল রবিন।